সালটা ২০২২। দক্ষিণ কলকাতার রুবি মোড়ে হিন্দু মহাসভার দুর্গাপুজোয় অসুরকে গান্ধীজির আদলে তৈরি করা হয়েছিল। তা নিয়ে বিস্তর বিতর্কও হয়। পরিস্থিতি যাতে তপ্ত না হয় তার জন্য তখন কলকাতা পুলিশ চেহারা বদলায়। এবারও তারা দুর্গাপুজো করছে। তবে নতুন থিম নিয়ে। এবার হিন্দু মহাসভা কেন ‘সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন’ (সিএএ) কার্যকর হচ্ছে না? এই প্রশ্নকে সামনে রেখে মণ্ডপে এবার উমা আসবেন ‘মতুয়া মা’ রূপে। এতে কি চাপে পড়বে বিজেপি? উঠছে প্রশ্ন। যদি কয়েকদিন আগে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ঠাকুরনগরে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘২০২৪ সালের আগেই সিএএ কার্যকর হবে।’
কেন দুর্গা প্রতিমা মতুয়া মা রূপে? এই প্রশ্ন এখন অনেকে তুলতে শুরু করেছেন। কিন্তু হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতি চন্দ্রচূড় গোস্বামী আজ, বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমরা চাই না, ভারতের নাগরিকদের কাগজ দেখিয়ে নাগরিকত্ব পেতে হবে। এখানে মতুয়া প্রতীকী। আসলে আমরা বলতে চাই সনাতনীরা সকলেই ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য। তাঁদের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দিতে উদ্যোগী হোক ভারত সরকার।’এবার রাজ্যে আসছেন অমিত শাহ এবং জেপি নড্ডা। দুর্গাপুজোর সময় তাঁদের দেখা যাবে বলে সূত্রের খবর। আর এই আবহে এমন প্রতিমা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
এদিকে সিএএ কার্যকরের বিষয়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের দাবি বহুদিনের। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলায় এসে কথা দেন, কোভিড পরিস্থিতি মিটলেই সিএএ কার্যকর হবে। কিন্তু তা এখনও হয়নি। এবার বিষয়টি কৌশলে উস্কে দিতে চাইছে হিন্দু মহাসভা। যদিও চন্দ্রচূড় দুর্গাপুজোর মধ্যে রাজনীতি মেশাতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘আমরা আসলে প্রকৃত সনাতনীদের পক্ষে। তাঁদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করে রাখার বিপক্ষে। আমাদের চোখে ভারতকে যাঁরা নিজের দেশ বলে মনে করেন, তিনি যে ধর্মেরই হোন, তিনিই প্রকৃত সনাতনী।’ এখন কুমোরটুলিতে চলছে ‘মতুয়া মা’ গড়ার কাজ।
আরও পড়ুন: এবার রেশন দোকানগুলিতে বাংলা সহায়তা কেন্দ্র, নবান্নে প্রস্তাব পাঠাল খাদ্য দফতর
অন্যদিকে হিন্দু মহাসভার কাছে এই মূর্তি গড়ার শিল্পীরাই এখম নাম–পরিচয় গোপন রাখার আর্জি জানিয়েছেন। এই বিষয়ে চন্দ্রচূড়ের দাবি, ‘মোট চারটি প্রতিমা থাকবে মণ্ডপে। একটিতে দেখা যাবে রামচন্দ্রের অকালবোধন। আর দুর্গা হয়ে আসবেন দু’জন ‘মতুয়া মা’। নাগরিকত্ব না থাকায় তাঁরা আশ্রয় শিবিরে রয়েছেন। একটি সাবেকি মূর্তি রাখা হচ্ছে। যার পুজো হবে।’ হিন্দু মহাসভা আবার রাজ্য সরকারের কাছে দুর্গাপুজোর অনুদানের জন্য আবেদন করেছে। গত ২৯ অগস্ট ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে চন্দ্রচূড় নবান্ন সভাঘরে যোগ দেন। আর তিনি একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রীকে ‘মাতৃসমা’ বলে সম্বোধন করেন। এখন বিজেপির সঙ্গে হিন্দু মহাসভার দূরত্ব বেড়েছে। তারপর এমন মাতৃরূপ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।