বাংলা নিউজ > বাংলার মুখ > কলকাতা > ‘‌চার্জশিটে নাম ছিল না, ছোট বোনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নয়’‌, পাল্টা জগদীপ ধনখড়‌‌

‘‌চার্জশিটে নাম ছিল না, ছোট বোনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নয়’‌, পাল্টা জগদীপ ধনখড়‌‌

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ফাইল ছবি

হাওয়ালা জৈন মামলার কথা উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মতো অভিজ্ঞ রাজনীতিক এই ধরনের উত্তেজনা তৈরি করবেন, এটা প্রত্যাশা করিনি।

হাওয়ালা চার্জশিটে রাজ্যপালের নাম ছিল বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই তোলপাড় হয়ে গিয়েছে রাজ্য–রাজনীতি। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, বাধ্য হয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে সাংবাদিক বৈঠক করে সাফাই দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‌হাওয়ালা জৈন চার্জশিটে তাঁর নাম নেই। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি সত্য থেকে অনেক দূরে। হাওয়ালা জৈন মামলার কথা উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মতো অভিজ্ঞ রাজনীতিক এই ধরনের উত্তেজনা তৈরি করবেন, এটা প্রত্যাশা করিনি। উনি ভুল তথ্য দিচ্ছেন। এমন কোনও নথি নেই। এটা সত্য থেকে অনেক দূর। সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিভ্রান্তিকর তথ্য।’‌

এদিন রাজ্যপাল পাল্টা দাবি করেন, হাওয়ালা চার্জশিটে তাঁর নাম নয় নাম ছিল যশবন্ত সিনহার। যিনি পরে মুক্ত হন। কিন্তু তাঁর নাম চার্জশিটে ছিল না। এখনও পর্যন্ত কেউ এই ঘটনায় দোষীও প্রমাণিত হননি। এই কথা রাজ্যপাল বললেও জল অনেক দূর গড়িয়েছে। রাজভবন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই ১৯৯৬ সালের সেই ফাইল খোঁজ করতে বলেছেন তিনি। গোটা রাজভবনে ঢি–ঢি পড়ে গিয়েছে। আগামী ২ জুলাই রাজপালের ভাষণ দিয়ে বিধানসভা অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা। তার আগে এই ঘটনা রাজ্যপালকে বিড়ম্বনায় ফেলল বলে মনে করা হচ্ছে।

রাজ্যপালের নাম হওয়ালা চার্জশিটে রয়েছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‌এই রাজ্যপালের নাম হাওয়ালা জৈন মামলায় ছিল। জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। এটা এখনও ঝুলে আছে। আর কী জানতে চান? উনি দুর্নীতিগ্রস্ত লোক। এরকম লোককে কেন রাজ্যপাল করা হল? কেন্দ্রীয় সরকার জানে না তো আমি বলে দিচ্ছি, ১৯৯৬ সালের হাওয়ালা জৈন কেলেঙ্কারির চার্জশিটে ওঁর নাম আছে কি না, দেখুন। চার্জশিটে নাম ছিল। তার পর আদালতে গিয়ে ওরা পরিষ্কার করে। তার পর আবার রিট পিটিশন বা জনস্বার্থ মামলা দাখিল হয়। সেটা আদালতে এখনও পড়ে আছে।’‌

পাল্টা রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় বলেন, ‘‌হাওয়ালা চার্জশিটে আমার নাম নেই। আমার বিরুদ্ধে কোনও তথ্য প্রমাণও নেই। মানুষের সামনে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে। এটা আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আশা করিনি।’‌ একইসঙ্গে মিডিয়ার দিকেও আঙুল তোলেন জগদীপ ধনখড়। তাঁর কথায়, ‘‌আমি কখনও ভাবিনি এ রাজ্যে মিডিয়া এতটা চুপ থাকবে। কেন প্রশ্ন করা হল না কোন চার্জশিটের কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন জানতে চাওয়া হল না ওই কেসে আদালত কী রায় দিয়েছে।’‌

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সাল। কেন্দ্রে তখন নরসিমা রাওয়ের সরকার। তখন হাওয়ালা কারবারের কথা প্রকাশ্যে আসে। দেশজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। দেশের তাবড় নেতা মন্ত্রীর নাম জড়িয়ে যায় এই কেলেঙ্কারিতে। সেই ঘটনায় উঠে এসেছিল তৎকালীন জনতা দলের সাংসদ জগদীপ ধনখড়ের নামও। যদিও এখনও পর্যন্ত অভিযুক্তের তালিকা দীর্ঘ হলেও দোষী প্রমাণিত হননি কেউই। বামপন্থীরা তখন গান বেঁধেছিল, ‘‌ওরে হাওয়ালা বাবু রে ডুবে ডুবে জল খাওয়াটা কি খেলা ছিল’‌।

যদি আপনার দাবি সত্যি হয় এবং মুখ্যমন্ত্রী দাবি মিথ্যে হয়, তাহলে কোনও আইনি পদক্ষেপ করবেন?‌ উত্তরে জগদীপ ধনখড়ের আবেগতাড়িত উত্তর, ‘‌কোনও আইনি পদক্ষেপ করা হবে না। কারণ আমি তাঁকে ছোট বোন মনে করি। শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি। কিন্তু, তিনি যা বলেছেন তা সত্য নয়। চার্জশিটে নাম ছিল রাজনীতিবিদ যশবন্ত সিনহা ও অজিত পাঁজার। পরে তাঁরা অভিযোগ মুক্ত হন। কখনও আশা করিনি এমন ভয়ঙ্কর অভিযোগ এনে উত্তেজনা তৈরি করার চেষ্টা করবেন মমতা। এই ধরণের মন্তব্য করার আগে যশবন্ত সিনহার মতো নেতার সঙ্গে শলা–পরামর্শ করা উচিত ছিল তাঁর। ছোট বোনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া যায় না।’‌

বন্ধ করুন