মানিকতলা বাজারে পা রাখতেই মন ভাল হয়ে গেল বাজারে আসে গৃহস্থদের। মাছ বিক্রেতার ঝুড়ির দিকে তাকিয়ে মুখে হাসি ফুটল। কিন্তু তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না। বড় আকারের ইলিশগুলি দেখে মন ভাল হওয়ারই কথা। তাও আবার পদ্মার ইলিশ বলে কথা। বাড়িতে নিয়ে যেতে পারলে পাড়ায় গল্প করা যাবে আজ পদ্মার ইলিশ দিয়ে ভাত খেলাম। এমন বিশ্বাস নিয়েই হাতিবাগানের এক বাসিন্দা বললেন, ‘দেখার পর থেকেই ব্যাগে ভরে নিতে ইচ্ছে করছিল।’ তখন বিক্রেতাদের হাঁক কানে আসছিল। কেউ বলছেন ‘একদম রাজশাহি।’ আবার কেউ বলছেন, ‘পদ্মা থেকে জ্যান্ত ধরে আনা।’ কিন্তু পদ্মার ইলিশের কাছে যেতেই দামটা উড়ে এল কানে। আর তা শুনেই মুখটা নিমেষে কালো হয়ে গেল গৃহকর্তার।
আজ, সোমবার আকাশ যখন কালো করে এসেছিল তখন বহু গৃহকর্তাই লেক মার্কেটে ভিড় জমিয়েছিলেন। কারণ ততক্ষণে খবর এসে গিয়েছে পদ্মার ইলিশ বাংলায় ল্যান্ড করেছে। সুতরাং বাড়ি নিয়ে যেতে পারলেই বড় মুখ করে বলা যাবে, দেখো গিন্নি কি এনেছি। কিন্তু সেই স্বপ্নটা অনেকের অধরাই থাকল। এটা একা কোনও গৃহকর্তার সঙ্গে ঘটেনি। এই তালিকায় আছেন অনেকেই। দামের আঁচে হাতে ছ্যাঁকা খেয়ে অন্যত্র মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা। তারপর পদ্মার ইলিশের মায়া ত্যাগ করে কাতলা, পাবদা, পমফ্রেটে ফিরে গেলেন। রবিবার এবং সোমবার উত্তর থেকে দক্ষিণের বাজারে এই ছবি ফুটে উঠল। মধ্যাহ্নভোজে বাঙালির পাতে পদ্মার ইলিশ উঠল না।
এদিকে একাধিক সংবাদমাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়েছিল পদ্মার ইলিশ আসছে। দেদার বিকোবে বাংলায়। তারপরই কয়েকদিন আগে ৭০ টন পদ্মার ইলিশ এসেছে ওপার বাংলা থেকে এপারে। আবার ৫০ টন পদ্মার ইলিশ আসবে আসবে করছে। সুতরাং পদ্মার ইলিশ এখন থরে থরে শুয়ে রয়েছে হাওড়ার কদমতলা থেকে দক্ষিণ কলকাতার লেক মার্কেট বাজারে। কিন্তু ‘পদ্মার রূপালি শস্য’ মধ্যবিত্তের থালায় উঠেও যেন হাপিস হয়ে গেল। দামের জেরে উঠল না থালায়। শহরের মাছ বিক্রেতাদেরই বক্তব্য, এত দাম দিয়ে লোকে কিনবে কেমন করে?
আরও পড়ুন: নয়াদিল্লির আন্দোলন কর্মসূচি সফল করতে হবে, শুরু হচ্ছে অভিষেকের ভার্চুয়াল সভা
ঠিক কত দামে বিকোচ্ছে? অন্যদিকে বড় আকারের পদ্মার ইলিশ বিকোচ্ছে দেড় হাজার থেকে দু’হাজার টাকা কেজিতে। এক একটা ইলিশের ওজন কম করে এক কিলো ২০০ গ্রাম। কোনও কোনও বাজারে কেজি প্রতি ইলিশের বিকোচ্ছে ১৫০০ টাকা দামে। ফলে দামের চোটে আমজনতার নাভিশ্বাস উঠেছে। এই বিষয়ে ‘ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’ বাংলাদেশ থেকে আমদানির সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন করবে বাংলাদেশ কমার্শিয়াল মন্ত্রক এবং কলকাতার বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনকে। সব শুনে অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ বলেন, ‘বাঙালির কাছে পদ্মার ইলিশ লোভনীয় খাবার। দুর্গাপুজোর সময় যাতে পর্যাপ্ত মাছ থাকে, তাও নাগালের দামে আমরা সেই চেষ্টা করব।’