জানুয়ারির প্রথম সোমবার শক্তি আস্ফালনের হুঙ্কার দেওয়া হয়েছিল। তা তো হলই না। উলটে বৈশাখী বন্ধোপাধ্যায়ের গোঁসা এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতিতে রীতিমতো অস্বস্তি পড়ে গেলেন বিজেপি নেতারা। সেই বিড়ম্বনা এড়াতে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মরিয়া চেষ্টা করলেন তাঁরা।
কার্যত ‘স্বেচ্ছাবসর’ কাটিয়ে সোমবার আবারও ময়দানে নামার কথা ছিল শোভনের। সঙ্গে থাকার কথা ছিল তাঁর বান্ধবী বৈশাখী এবং রাজ্যে বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। আদতে তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী মিছিল হলেও তা শোভনের ‘প্রত্যাবর্তন’ হিসেবেই ঝড় তোলার চেষ্টা করেছিল বিজেপি। বিশেষত কলকাতা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় শোভনের প্রভাব কাজে লাগাতে মরিয়া ছিল বিজেপি।
যদিও সেই মিছিলের অনুমতি দেয়নি কলকাতা পুলিশ। তা নিয়ে রবিবার সন্ধ্যা থেকে রীতিমতো হুঙ্কার দিচ্ছিলেন বিজেপি নেতানেত্রীরা। কিন্তু সোমবার সকাল থেকে বৈশাখীর গোঁসায় সেই হুঙ্কার ক্রমশ ফিকে হতে শুরু করে। মিছিল শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে বৈশাখী জানান, তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তাই মিছিলে যাবেন না। বৈশাখীর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকালে রাজ্য বিজেপির তরফে শোভনের বান্ধবীর কাছে ফোন এসেছিল। তাতে নাকি জানানো হয়েছে, মিছিল হতে চলেছে পুরোপুরি শোভনের। তাই সোমবারের মিছিলে বিজেপির কলকাতা জোনের সহ-আহ্বায়ক বৈশাখীর যোগ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তারপরেই বৈশাখী মিছিলে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে সূত্রের খবর।
তারপর থেকেই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, বৈশাখীর অনুপস্থিতিতে কি মিছিলে যোগ দেবেন শোভন? সূত্রের খবর, ‘মান’ ভাঙানোর জন্য দফায় দফায় দু'জনকে দফায় দফায় ফোন করা হয়। আসরে নামেন অরবিন্দ মেননকে। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। ততক্ষণে বিজেপির তরফে দাবি করা হচ্ছিল, শোভন আসছেন। কিন্তু যত বেলা গড়াতে থাকে, তত স্পষ্ট হতে থাকে বাস্তব ছবিটা। চরম বিড়ম্বনায় পড়ে কর্মীদের জমায়েতের মধ্যে দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ ‘নেতার উর্ধ্বে দল’ বার্তা দেওয়ার লক্ষ্যে শোভন এবং বৈশাখীকে ছাড়াই দুপুর তিনটের পর অরফ্যানগঞ্জ থেকে মিছিল শুরু করা হয়। যে মিছিল ঘিরে প্রচারের ঝড় তোলা হয়েছিল, বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পেতে সেই মিছিলই নমো নমো করে করতে বাধ্য হয়। ছিলেন অর্জুন সিং, কৈলাস, বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়রা।
সেই সঙ্গে পুলিশের অনুমতি না পেয়েও মিছিল করার যে হুঙ্কার দিয়েছিলেন, সেই মিছিলের রুট তিন দফায় বদল করা হয়। কোনওরকম গাড়ি বা বাইক ব্যবহার না করার শর্তে মৌখিক অনুমতি দেয় পুলিশ। তা সত্ত্বেও বাইক নিয়ে পৌঁছে যান বিজেপি নেতা রাকেশ সিংয়ের অনুগামীরা। তবে তা নিয়ে গোলমাল হয়নি। বরং দক্ষিণবঙ্গে বিজেপির সংগঠনে সামঞ্জস্যের ঠিক কী অবস্থা, তা আরও স্পষ্ট হয়। যা বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপির অস্বস্তিতে বহুগুণ বাড়িয়ে দিল বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
তবে বৈশাখী ও শোভনের অনুপস্থিতি কোনও কারণ দর্শাতে পারলেন না বিজেপি নেতারা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, মুকুলের মতো নেতারা সেই প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। মিছিলে যোগ দেওয়ার আগে সাহসী মুখ তুলে ধরে কৈলাস দাবি করেন, কোন নেতা এলেন না, তা বড় বিষয় নয়। এটা বিজেপির মিছিল।