এক ব্যক্তিকে মিথ্যে মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছিল পুলিশকর্তাদের বিরুদ্ধে। সেই মামলায় ওই আট পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থা। তবে আধিকারিকরা বিচারপতির নির্দেশ বিবেচনার জন্য আর্জি জানিয়েছিলেন। সেই সংক্রান্ত মামলা থেকে সরে দাঁড়ালেন বিচারপতি মান্থা।
আরও পড়ুন: প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্তের নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হল কেন? জবাব চাইল আদালত
হাই কোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য পুলিশের ওই ৮ আধিকারিক সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তবে যে ডিভিশন বেঞ্চের মামলাটি ওঠে সেই ডিভিশন বেঞ্চের অন্যতম সদস্য ছিলেন বিচারপতি মান্থা। তাই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি মামলা থেকে সরে দাঁড়ান। তবে মামলা থেকে সরে দাঁড়িয়ে বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘এটি এক বন্য ধারণা।’ সাধারণত রিভিউ আবেদনের ক্ষেত্রে বিচারপতিরা সরে দাঁড়ান না। তা সত্ত্বেও বিচারপতি রাজশেখর মান্থা মামলা থেকে সরে দাঁড়ানোয় জল্পনা শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই পুলিশ কর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ডায়মন্ডহারবারের তৎকালীন পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও, বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার সঞ্জীব দে প্রমুখ। ওই পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ তোলেন হুগলির আরামবাগের পিন্টু মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি। তাঁর অভিযোগ ছিল, রাজনৈতিক কারণে তাঁকে মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। মামলাকারীর আইনজীবীদের অভিযোগ, ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত পিন্টুর বিরুদ্ধে মাদক পাচার সহ বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছিল বিভিন্ন থানায়। যার মধ্যে নিউ টাউন, বিষ্ণুপুর প্রভৃতি থানায় ১০ টির বেশি মামলা দায়ের করা হয় পিন্টুর বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালের মে মাসে তেলেঙ্গানা থেকে নিউটন থানার পুলিশ হানা দিয়ে পিন্টুকে গ্রেফতার করে। সেই সময় তিনি একটি বেসরকারি স্টুডিওতে শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। সেখান থেকে তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসার পথেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার পারুলিয়া কোস্টাল থানায় তাঁর বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ জমা পড়ে।
মাস খানেক জেল কাটার পর আলিপুর আদালতে মামলার নিষ্পত্তি হয়। পিন্টুকে বেকসুর খালাস করে আদালত। এরপরে কলকাতা হাইকোর্টে ওই সমস্ত অফিসারদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে মামলা করেন পিন্টু। জানা গিয়েছে, কয়লা পাচার এবং গরু পাচার মামলায় বহু তথ্য দিয়ে ইডি এবং সিবিএকে সাহায্য করেছিলেন পিন্টু। সেই কারণেই তাঁকে মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অভিযোগ, রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সিআইডি তদন্তের পাশাপাশি ওই অফিসারদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তেরও নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। সেক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনে অফিসারদের সাসপেন্ড করতে হবে বলেও জানায় আদালত। আগামী ৬ মাসের মধ্যেই এই পদক্ষেপ করতে হবে বলে জানিয়েছিল আদালত। তাছাড়া ৬ সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত শেষ না করলে এই তদন্তের ভার অন্য কোনও তদন্তকারী সংস্থা হাতে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন বিচারপতি মান্থা।