এবার কলকাতায় রেকর্ড ভিড় হয়েছিল মানুষের। গ্রামবাংলা থেকে শুরু করে বিদেশের মানুষজন ভিড় করেছিলেন কলকাতার দুর্গাপুজোতে। এমন ভিড় হবে একটা আন্দাজ করা গেলেও বাস্তবে কেমন পরিণতি নেবে তা ঠাওর করা যায়নি। সেখানে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ পরিকল্পনা করে বিপুল মানুষের ভিড় সামলে দিয়ে কার্যত হিরো বনে গিয়েছে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা দুর্গাপুজোর ভিড়কে কেন্দ্র করে ঘটেনি। বরং মানুষ সাহায্য চেয়ে পুলিশের কাছ থেকে পেয়েছেন। তার জন্য একদিকে প্রযুক্তি ব্যবহার করে কলকাতা পুলিশ, অপরদিকে ওয়াচ টাওয়ার থেকে শুরু করে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।
এদিকে জনপ্লাবন যখন আছড়ে পড়ল মহানগরে তখন কলকাতা পুলিশ দক্ষতার সঙ্গে সামলে দুর্গাপুজো সবার জন্য সুন্দর করে তুলল। কলকাতার ট্র্যাফিক পুলিশের দক্ষ পথ সঞ্চালনা এবং লাইভ আপডেটস দিতে ডিজিটাল যে পরিষেবা দিয়েছে তাতে অনেক সুবিধা হয়েছে মানুষের। কোন প্যান্ডেলে কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে দেখে সেই মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিলোত্তমাবাসী। যেখানে সারারাত সরকারি–বেসরকারি বাস চলেছে, লোকাল ট্রেন থেকে মেট্রো চলেছে সেখানে ভিড় যে বেড়েছে তা বোঝাই যাচ্ছে। তবে গোটা দুর্গাপুজো পর্ব তৎপরতার সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশ ব্যবস্থা করে সামলে দিয়েছে পুলিশ। এতকিছুর পরও জনসমুদ্র সামলাতে বেশ বেগও পেতে হয়েছিল কলকাতা পুলিশকে। কিন্তু যানজট হতে দেয়নি।
অন্যদিকে লালবাজার সূত্রে খবর, এই বছর তৃতীয়া, চতুর্থী থেকে শহরের রাস্তায় বাড়তি পুলিশ নামানো হয়েছে। কারণ মানুষ তখন থেকেই নামতে শুরু করে দিয়েছিল। সেই সংখ্যাটা পঞ্চমী থেকে নবমী পর্যন্ত ক্রমশ বেড়েছে। তাই রাস্তায় উপস্থিত ছিল অন্তত ১৪ হাজার পুলিশ। তার সঙ্গে নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা হয়েছিল ১৮ জন ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার পুলিশ কর্তাদের। আর ৮২ জন অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার পদমর্যাদার অফিসাররাও ছিলেন। একইসঙ্গে ২৩০ জন ইনস্পেক্টরও রাস্তায় ছিলেন দুর্গাপুজোর সব কটা দিন উপস্থিত ছিল। পার্কিং ব্যবস্থা থেকে শুরু করে দিক নির্দেশ সবটাই ঠাণ্ডা মাথায় সামলেছে কলকাতা পুলিশ।
আরও পড়ুন: মদ খেয়ে চালকদের বেধড়ক মারধরের অভিযোগ, বনগাঁয় বন্ধ অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা
এই এতকিছুর সঙ্গে আবার যোগ হয়েছিল নামী দুর্গাপুজোগুলি। বাগবাজার সার্বজনীন থেকে শুরু করে আহিনীটোলা হয়ে টালা বারোয়ারির পর দক্ষিণে ঢোকা যায় তাহলে মুদিয়ালি, শিব মন্দির, বাদামতলা আষাঢ় সংঘ, ৬৬ পল্লী, ত্রিধারা সম্মিলনী, দেশপ্রিয় পার্ক, চেতলা অগ্রণী, সুরুচি সংঘ, সমাজসেবী, বালিগঞ্জ কালচার এবং শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের দুর্গাপুজোয় মারাত্মক ভিড় হয়েছিল। তিলধারণের জায়গা ছিল না। এই বিষয়টি নিয়ে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার রূপেশ কুমার বলেন, ‘আগে থেকেই সমস্ত পরিকল্পনা করে রাখা ছিল আমাদের। তাই সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোথায় পার্কিং জোন করা হবে, কোথায় ব্যারিকেড করা হবে সেসব খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশকর্মীরা অত্যন্ত পরিশ্রম করেছেন দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে।’ কলকাতা পুরসভার মেয়র বলেছেন, ’কলকাতা পুলিশ দারুণ কাজ করেছে দুর্গাপুজোয়। তাঁদের সহযোগিতায় এমন সাফল্য এসেছে।’ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, ‘কলকাতা পুলিশ যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। কিছু ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করার দরকার ছিল। না হলে পদপিষ্টের মতো ঘটনা ঘটত। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের দুর্গাপুজোতে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে পুলিশ।’