যতদিন যাচ্ছিল, তত দেওয়াল লিখনটা স্পষ্ট হচ্ছিল। শুধু সরকারিভাবে ঘোষণার অপেক্ষা ছিল। বৃহস্পতিবার সেটাও হয়ে গেল। দলের কোর কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হল রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে। তাঁর ভাই স্বরূপেরও ডানা কার্যত পুরো ছেঁটে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অথচ একটা সময় ‘ভোট জিততে, দলের আয় বাড়াতে, এলাকায় প্রভাব বৃদ্ধি করতে’ সেই বিশ্বাস ভাইদের উপর ভরসা ছিল মমতার। এমনকী স্বরূপের সঙ্গে বিবাদের জেরে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের মতো বিতর্কের বাইরে থাকা নেতাকেও মমতার রোষানলে পড়তে হয়েছিল। তাহলে কী এমন হল যে বিধানসভা ভোটের আগেই বৃহস্পতিবার দলের অন্দরে বড়সড় রদবদল প্রক্রিয়ায় কোপ পড়ল বিশ্বাস ভাইদের উপর? গত বছর লোকসভা ভোটের সময়ও মমতার একেবারে ঘনিষ্ঠ বৃত্তে ছিলেন তাঁরা। তাহলে সমস্যাটা কোথায় হল?
তৃণমূল অন্দরের খবর, লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গের তিন জেলার (আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং) দায়িত্বে ছিলেন অরূপ। কিন্তু সেখানে মুখ থুবড়ে পড়েছিল তৃণমূল। এমনকী রাজ্যের মধ্যে দার্জিলিং কেন্দ্র সবার্ধিক ৫৯ শতাংশ ব্যবধানে জিতেছিল বিজেপি। তা নিয়ে অরূপের উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন মমতা। ধমকও দেন তিনি। এরইমধ্যে প্রশান্ত কিশোরের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে, উত্তরবঙ্গের জেলায় দলের কর্মীদের মধ্যেই অরূপের ভূমিকা নিয়ে তুমুল অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ ছিল, মাঝেমধ্যে অরূপ আসতেন। বিলাসবহুল হোটেলে বৈঠক করে ফিরে যেতেন। তৃণমূলস্তরে পৌঁছানোর চেষ্টা করেননি বলে অভিযোগ ওঠে। সেজন্য লোকসভা ভোটের পর দার্জিলিঙে গিয়ে বিক্ষোভের মুখেও পড়েন অরূপ। তার ভিত্তিতে তিন জেলার দায়িত্ব থেকে অরূপকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তখন থেকে মমতা-অরূপের সম্পর্কে ফাটল ধরা শুরু হয়।
পরবর্তী সময় অরূপের পাশাপাশি তাঁর ভাই স্বরূপের ভূমিকা নিয়েও ক্ষুব্ধ ছিলেন মমতা। টলিউড পাড়ায় তাঁর ‘দাদাগিরি’ ভালোভাবে নেওয়া হয়নি। টলিউডের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছিল, স্বরূপের জন্যই অনেক শিল্পী বিজেপি শিবিরে গিয়েছেন। তা মমতার কানেও পৌঁছেছিল। তা সত্ত্বেও জোড়াতালি দিয়ে কাজ চলছিল। কিন্তু স্বরূপের বিদায়ঘণ্টা সম্ভবত নবান্নেই বেজে গিয়েছিল বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। মুখ্যমন্ত্রীর আর্টিস্ট ফোরাম এবং টেকনিশিয়ানদের বৈঠকে রীতিমতো গলা চড়িয়ে কথা বলছিলেন স্বরূপ। তা একেবারে ভালোভাবে নেননি মুখ্যমন্ত্রী। তারপরই স্বরূপের থেকে দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূল যুব সংগঠনের সভাপতির পদ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁর পরিবর্তে দায়িত্ব পেয়েছেন প্রাক্তন কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত, নবান্নে ‘মাথা ঠান্ডা’-র পরামর্শ দিলেও তৃণমূলের অন্দরে ডানা ছেঁটে স্বরূপকে ‘শান্ত’ করে দিলেন মমতা।