গত কয়েক বছর ধরে রাম নবমীর উৎসবকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক টানাপোড়েন দেখা দেয় বাংলায়। ২০২৩ সালের রাম নবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গিয়েছিল নানা এলাকায়। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সেই রাম নবমীতে এবার ছুটি ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করল নবান্ন। আগামী ১৭ এপ্রিল রামনবমী। ওই দিন জরুরি পরিষেবা বাদ রেখে রাজ্য সরকারি এবং সরকার পোষিত সমস্ত প্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকবে। এই বিজ্ঞপ্তি জারি করে মাস্টারস্ট্রোক মারলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে বিজেপি বারবার রাজ্যবাসীকে বোঝাতে চেয়েছিল, তৃণমূল কংগ্রেস সরকার রাম বিরোধী। সেখানে লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ছুটি দিয়ে দেওয়ায় চাপে পড়ে গেল বিজেপি। তাঁদের মিথ্যের ফানুস ফুটো হয়ে গেল বলে মনে করছেন অনেকে। লোকসভা নির্বাচনের আগে এবার পুরোদস্তুর হিন্দু আবেগ উস্কে দিতে নেমেছে বিজেপি। আর তাই গত জানুয়ারি মাসের ২২ তারিখ অযোধ্যায় রাম মন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সেটাই এখন নরেন্দ্র মোদীর প্রচারের অন্যতম ইস্যু। বাংলায় আবার বিজেপি দেখাতে চায় যে রাজ্যে শাসকদল রাম বিরোধী। তাই রাম নবমীর মিছিলে বাধা দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: রাগ কমল জন বারলার, প্রধানমন্ত্রীর শিলিগুড়ির সভায় হাজির হয়ে বার্তা বিজেপি সাংসদের
অন্যদিকে গত কয়েক বছর ধরে দেখা গিয়েছে, রামনবমীকে কেন্দ্র করে রাজ্যের নানা এলাকায় উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। ২০২৩ সালে রিষড়া এবং হাওড়ায় হিংসার ঘটনা ঘটেছিল। সেই জল অনেকদূর গড়ায়। বিজেপিই সেখানে চাপে পড়ে যায়। মিথ্যে রটাতে গিয়ে। এরপরেই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে হনুমান জয়ন্তীতে বেশ কিছু স্পর্শকাতর এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। স্থানীয় আবেগের কথা মাথায় রেখে সরকারি ছুটি ঘোষণার বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই দরাজ হৃদয়ের পরিচয় দিয়েছেন। মতুয়া সম্প্রদায়ের আবেগকে সম্মান জানিয়ে গুরুচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিনেও ছুটি ঘোষণা করেছেন। এবার রাম নবমীতে ছুটি ঘোষণা করলেন।
এছাড়া ২০২৪ সালের রাম নবমী পড়েছে এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখে। ওই দিন রাজ্যে ছুটি থাকবে। তার আগে পয়লা বৈশাখও ছুটি থাকবে সরকারি অফিস। অর্থাৎ এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে আবার একটানা তিন দিন ছুটির সুযোগ তৈরি হয়েছে। যদিও এই ঘোষণাকে কটাক্ষ করে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন এই ঘোষণা নবান্ন করল সেটা সবাই বুঝতে পারছে। মানুষ এত বোকা নয়।’ যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিজেপি এটা নিয়েও বিভেদের রাজনীতি করছে।