বাংলা নিউজ > বাংলার মুখ > কলকাতা > অনলাইনে ডেটিং সাইটে যৌনতার ফাঁদ পেতে প্রতারণা, কলকাতা থেকে গ্রেফতার মূল চাঁই

অনলাইনে ডেটিং সাইটে যৌনতার ফাঁদ পেতে প্রতারণা, কলকাতা থেকে গ্রেফতার মূল চাঁই

অনলাইনে ডেটিং সাইট খুলে যৌনতার ফাঁদে প্রতারণা! কলকাতা থেকে মূল চক্রীকে গ্রেফতার মহারাষ্ট্র পুলিশের

কলকাতা থেকে মূল চক্রীকে গ্রেফতার মহারাষ্ট্র পুলিশের

ঝাঁ চকচকে ডেটিং সাইট। তার মধ্যে যৌনতার উষ্ণ হাতছানি। লহমায় ইনবক্সে উড়ে আসত সেক্স চ্যাট। একবার কেউ সেই ফাঁদে পা দিলেই সর্বনাশ। যৌনতার মুহূর্তকে করা হত ক্যামেরা বন্দি। সেই ভিডিয়োগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চলছিল ব্ল্যাকমেল করে সর্বস্ব লুঠ।

খাস কলকাতায় বসে ভিনরাজ্যের মানুষকে টার্গেট করছিল প্রতারকদের দল। সেই ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই খোয়াচ্ছিলেন জীবনের সমস্ত সঞ্চয়। সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে মুখ খুলছিলেন না কোনও প্রতারিতই। তবে ভিনরাজ্যের বাসিন্দা এক প্রতারিতের অভিযোগই ধরিয়ে দিল কলকাতার এই সেক্স র‌্যাকেটের মাস্টার মাইন্ডকে। ৪১ লক্ষ টাকা খুইয়ে ওই প্রতারিত মহারাষ্ট্র পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।

তদন্তে নেমে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে কলকাতায় আসে মহারাষ্ট্র পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল। তিন দিন ধরে লাগাতার অভিযান চালিয়ে দক্ষিণ শহরতলির সার্ভে পার্ক থানা এলাকার হাইল্যান্ড পার্কের একটি আবাসন থেকে গ্রেফতার করা হল চক্রের মূল চাঁইকে।

বৃহস্পতিবার ট্রানজিট রিমান্ড চেয়ে ধৃতকে আলিপুর আদালতে পেশ করা হয়। মহারাষ্ট্র পুলিশ সূত্রের দাবি, এই চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে আরও একাধিক যুবক ও যুবতী। ধৃতকে জেরা করে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে চেষ্টা চালাচ্ছে মহারাষ্ট্র পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত কল্যাণ সাহু সার্ভে পার্ক থানা এলাকার বাসিন্দা। একটি ডেটিং সাইট খুলে যৌনতার লোভ দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল অভিযুক্ত। সেই ফাঁদেই পা দিয়ে ফেলে‌ন মহারাষ্ট্রের নবসেভা থানা এলাকার এক ব্যক্তি।

কীভাবে এই চক্র চালাচ্ছিল প্রতারকেরা?‌

এপ্রসঙ্গে মহারাষ্ট্র পুলিশ সুত্রে আরও জানা গিয়েছে, ওই সাইটের মাধ্যমে সেক্সটক থেকে শুরু করে ‌ম্যাসাজ সার্ভিস, ডেটিং-সহ হরেক রকমের যৌনতা পরিষেবার হাতছানি দেওয়া হত। এই পরিষেবাগুলি পেতে হলে ওই সাইটে মেম্বারশিপ নিতে হত অংশগ্রহণকারীদের। তার জন্য ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতারিতদের কাছ থেকে নেওয়া হত বলে অভিযোগ।

মহারাষ্ট্র পুলিশের দাবি, ওই ওয়েবসাইটে আকৃষ্ট হয়ে সদস্যপদ গ্রহণের জন্য দফায় দফায় টাকা জমা দিতে থাকেন অভিযোগকারী ওই ব্যক্তি। এরপর তাঁর বিশ্বাস অর্জনের জন্য এক মহিলা তাঁকে ফোন করেন। তার সঙ্গে দিনের পর দিন চলতে থাকে ফোনালাপ, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ঘণ্টার পর ঘন্টা চ্যাট। পরে সেই ‘‌বন্ধুত্ব’‌ ক্রমেই ‘‌ঘনিষ্ঠতায়’‌ বদলে যায়।

পুলিশ সূত্রে খবর, হোয়াটসঅ্যাপের ভিডিও কলের মাধ্যমে অভিযোগকারীর সঙ্গে ভিডিওতে সেক্স চ্যাট করেন ওই মহিলা। অভিযোগ, ক্যামেরা বন্দি করে নেওয়া হয়। এরপরই স্বমূর্তি ধারণ করে প্রতারকরা। ভিডিও চ্যাটের সময় তুলে নেওয়া তাঁর নগ্ন ছবি দেখিয়ে ওই ব্যক্তিকে ব্ল্যাকমেল করা শুরু হয়। অবিলম্বে টাকা না পাঠালে, তাঁর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে ভয় দেখানো হয়।

এরপরই স্থানীয় থানার দ্বারস্থ হন অভিযোগকারী ব্যক্তি। অভিযোগের তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, কলকাতায় বসে ওই চক্র চালানো হচ্ছে। অভিযুক্তদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতেই মহারাষ্ট্র থেকে কলকাতায় পাড়ি দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশের একটি বিশেষ তদন্তকারী দল।এদিকে ঘটনার তদন্ত চলার পাশাপাশি তদন্তকারীদের পরামর্শে পরিকল্পনা মাফিক অভিযুক্ত মহিলার সঙ্গে চ্যাটে কথা চালিয়ে যেতে থাকেন অভিযোগকারী ব্যক্তি। সেই সুযোগেই অভিযুক্তদের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে মহারাষ্ট্র পুলিশ। হাতে পাওয়া টাওয়ার লোকেশন থেকে পুলিশ জানতে পারে, ইএম বাইপাসের ধারে হাইল্যান্ড পার্কের আবাসনে এই চক্রের মূল পান্ডা রয়েছে। এরপরেই স্থানীয় সার্ভে পার্ক থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে হাইল্যান্ড পার্কের ওই আবাসন থেকে মূল অভিযুক্ত কল্যাণ সাহুকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে মহারাষ্ট্র পুলিশ।

বন্ধ করুন