মরণোত্তর পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত সত্যব্রত মুখোপাধ্য়ায়। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বিজেপির দীর্ঘদিনের নেতা। তবে বাংলা কিংবা জাতীয় রাজনীতিতে জলুবাবু বলেই পরিচিত ছিলেন তিনি। ১৯৯৯ সালে প্রথমবার ভোট রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন। বাজপেয়ী মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। কেন্দ্রীয় রাসায়নিক সার, বাণিজ্য শিল্প দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন তিনি। কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র থেকে দাঁড়াতেন তিনি। কিন্তু প্রতিবারই যে জিতেছেন তিনি এমনটা নয়। তবে সকলে যখন চেয়ার আঁকড়ে রাখার জন্য তৎপর, বেশিরভাগই যখন প্রার্থী পদ পেতে একেবারে মরিয়া তখন নতুন প্রজন্মকে জায়গা ছেড়ে দিয়েছিলেন জলুবাবু। অনেকে বলেন বাধ্য় হয়েছিলেন তিনি।
২০১৯ সালে সেই ছবি দেখেছিল বাংলা। একেবারে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদের মতোই নিজের প্রার্থীপদ না জুটলেও কল্যাণ চৌবের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এটাই ছিলেন জলুবাবু। তবে এই ২০১৯ সালের টিকিট নিয়ে অবশ্য টানাপোড়েন কিছু কম হয়নি। অনেকের মতে, আসলে বয়সজনিত কারণে জলুবাবুকে টিকিট দিতে চায়নি বিজেপির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। সেই সময় দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায় প্রমুখরা নানা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।
তবে সেই সময় দেওয়ালও লেখা হয়ে গিয়েছিল জলুবাবুর নামেই। কিন্তু সেবার ভোটের প্রার্থী ঘোষণার পরে দেখা যায় তাঁর নাম নেই। পরে কি কিছুটা হলেও অভিমানী হয়েছিলেন জলুবাবু? তবে অনেকের মতে তারপর থেকে তিনি রাজনীতির মূল স্রোত থেকে কিছুটা সরে আসতে শুরু করেন। ২০২৩ সালে প্রয়াত হন তিনি।
তিনি পেশায় ছিলেন আইনজীবী। বলা ভালো দুঁদে আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্ট ও কলকাতা হাইকোর্টে তিনি প্র্যাকটিশ করতেন। বিপক্ষ তো অনেক সময় তাঁর যুক্তির সামনে দাঁড়াতেই পারতেন না।
অনেকের মতে, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির যে উত্থান হয়েছে, তার অন্যতম কারিগর ছিলেন সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়। ২০০৮ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বঙ্গ বিজেপির সভাপতি ছিলেন। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকারের দুটি মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। একটা সময় ভারতের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলও ছিলেন।
এদিকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসাবেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল যথেষ্ট। এমনকী বিরোধীদের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক ছিল তাঁর। সেই অর্থে তিনি বিরোধীদের আটকাতে একেবারে মার মার কাট কাট ভূমিকা নিয়েছিলেন এমনটা নয়। রাজনৈতিক সৌজন্য কাকে বলে সেটা বার বার দেখিয়েছেন তিনি। এখন যেটা বড় একটা দেখা যায় না। সেই জলুবাবুকেই মরণোত্তর পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত করা হল ।