হরিদেবপুর কাণ্ডের তদন্তে এল নয়া মোড়। মৃত যুবতী শাগুফতা পারভিন পার্লারে কাজ করেন বলে সবাই জানতেন। তবে কোন পার্লার, কী কাজ করতেন? সেটা বরাবরই রহস্যে মোড়া ছিল। শাগুফতা ওরফে চাঁদনির পরিবারও জানত না। এমনকী প্রেমিক রবীন্দ্রকুমারও কিছু জানতেন না। সম্প্রতি যুবতীর মোবাইল ফোনের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট নজরে আসে তাঁর। আর সেটার সূত্রেই শাগুফতার একাধিক পুরুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা জেনে ফেলেন প্রেমিক রবীন্দ্রকুমার। তখন থেকেই তাঁদের মধ্যে শুরু হয় সম্পর্কের দড়ি টানাটানি। তার জেরেই বৃহস্পতিবার আত্মঘাতী হন শাগুফতা পারভিন (২৬) ও তাঁর প্রেমিক ব্যবসায়ী রবীন্দ্রকুমার চৌরাসিয়া (৪৫)। প্রাথমিক তদন্তে এটাই জানতে পেরেছে পুলিশ।
পুলিশ কী তথ্য পেয়েছে? পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত দু’জন প্রেমিক–প্রেমিকা ছিলেন না। ফ্ল্যাটে উদ্ধার হওয়া দেহ দুটি দম্পতির। নানা সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং সেটা নিয়ে অশান্তির জেরেই মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছে তাঁদের। রবীন্দ্রকুমার পাঁচপাতার সুইসাইড নোটে লিখেছেন, কাজের সূত্রে একাধিক পুরুষের সঙ্গে আলাপ হয় চাঁদনি তথা শাগুফতার। সেই পুরুষদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কও তৈরি করেছিলেন যুবতী। তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট দেখেই এই তথ্য জানতে পারেন রবীন্দ্রকুমার। চ্যাটের স্ক্রিনশট তুলে নিজের ফোনে পাঠিয়ে রেখেছিলেন ওই ব্যবসায়ী। সুইসাইড নোটের সঙ্গে সেই সমস্ত স্ক্রিনশট ঘটনাস্থলে রেখে আত্মঘাতী হন তিনি।
আর কী জানা যাচ্ছে? মোট ১০৯ পাতার স্ক্রিনশট উদ্ধার হয়েছে হরিদেবপুরের চাঁদার ভিলেজের ওই ফ্ল্যাট থেকে। সেটা দেখে পুলিশ জানতে পেরেছে, শাগুফতার ‘কীর্তি’ জেনে ফেলতেই রবীন্দ্রকুমারকে ব্ল্যাকমেল করা শুরু হয়। ধর্ষণের অভিযোগে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হতো বলেও সুইসাইড নোটে লিখেছেন ব্যবসায়ী। এই নিয়ে দু’জনের মধ্যে ঝামেলা হতো। সম্প্রতি তাঁদের মধ্যে বিবাদ চরমে ওঠে। দু’জন আলাদা থাকতে শুরু করেছিলেন। শাগুফতা এন্টালির কনভেন্ট রোডে তাঁর মায়ের কাছে থাকছিলেন। ২০২০ সালে এন্টালির ছাতুবাবু লেনের বাসিন্দা শগুফতার সঙ্গে থাকতে শুরু করেন রবীন্দ্র চৌরাসিয়া। রবীন্দ্রকুমার চৌরাসিয়া রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেন শাগুফতা পারভিনকে।
কী বলছে শাগুফতার পরিবার? এদিন তাঁর বড় দিদি বলেন, ‘কিছু বাজে ছেলের সঙ্গ নিয়েছিল বোন। তাই এমন ঘটনা ঘটে গেল।’ লালবাজার সূত্রে খবর, বুধবার ওই যুগল হরিদেবপুরের ফ্ল্যাটে আসেন। মাঝরাতে দু’জনের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ হয়। পরেরদিন অনেকবার স্বামীকে ফোনে না পেয়ে হরিদেবপুরের ফ্ল্যাটে আসেন রবীন্দ্রকুমারের আইনি স্ত্রী। তবে ফ্ল্যাটে কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে পুলিশে খবর দেন তিনি। হরিদেবপুর থানার পুলিস ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে দেহ দু’টি উদ্ধার করে। প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, দু’জনেই আত্মঘাতী হয়েছেন।