ববিতা সরকারের মামলায় ২০১৬ সালের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় ওএমআর শিট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সুপ্রিম কোর্টও সেই নির্দেশ বহাল রেখেছে। হাইকোর্টের নির্দেশ মতো আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যেই ওএমআর শিট প্রকাশ করতে হবে বলে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টে হার রাজ্যের, বহাল রইল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়
কীভাবে হল এই মামলার সূত্রপাত?
গত বছর এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সিবিআই তদন্ত দেওয়ার পরে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতি। সিবিআই তদন্ত শুরু করার পরেই সামনে আসে একের পর এক দুর্নীতি। নাম জড়িয়েছিল রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারী। এসএসসি-র যে তালিকার শীর্ষে মন্ত্রীকন্যার নাম উঠেছিল, বেশি নম্বর পেয়েও সেই তালিকা থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন ববিতা সরকার। মন্ত্রীকন্যার চেয়ে ১৬ নম্বর বেশি পেয়েছিলেন। তবু পরেশের মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর নাম ছিল তালিকার শীর্ষে। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর মেধাতালিকা প্রকাশ হয়েছিল। সেই তালিকায় অবশ্য ববিতার নাম প্রথম ২০-তেই ছিল। কিন্তু সেই তালিকা বাতিল করে দেয় এসএসসি। পরে প্রকাশ করা মেধা তালিকায় ববিতার নাম ২১ নম্বরে ছিল। আর অঙ্কিতার নাম প্রথমে ছিল।
এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার দুর্নীতির কথা স্বীকার করেছিলেন। পরে গত বছরের মে মাসে অঙ্কিতাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। শুধু চাকরি বাতিলই নয়, হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ তাঁকে সমস্ত বেতনও ফেরত দিতে হবে। সেই টাকা পেয়েছিলেন ববিতা। কিন্তু, চাকরি পাওয়ার পর আবার নতুন করে বিতর্কে জড়ান ববিতা। গত বছরের ডিসেম্বরে ববিতা সরকারের চাকরির ‘বৈধতা’ নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।
অভিযোগ ওঠে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে আবেদন করার সময় ববিতার স্নাতকস্তরের শতকরা নম্বর বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। যার ফলে তাঁর ‘অ্যাকাডেমিক স্কোর’ বেড়ে যায়। এরপরেই ববিতার জায়গায় চাকরির দাবি করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অনামিকা রায়। তাঁর দাবি ছিল, তিনি দুই নম্বর বেশি পেয়েছেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ববিতার চাকরি বাতিল করে অনামিকাকে নিয়োগের নির্দেশ দেন। এদিকে, ববিতাকে ১৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৮৪৩ টাকা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে জমা দিতে বলেন বিচারপতি। হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার সেই টাকা নতুন চাকরিপ্রাপক অনামিকা রায়ের হাতে তুলে দেবেন।
এরপরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ববিতার আইনজীবী ফিরদৌস শামিম। এর পরই ববিতাকে মামলা দায়েরের অনুমতি দেয় বিচারপতি তালুকদার এবং বিচারপতি ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ।
এদিকে ফের একবার চাকরি চেয়ে গত ৬ জুলাই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ববিতা সরকার। ববিতার হয়ে এই মামলা লড়ছেন আইনজীবী ফিরদৌস শামিম। তাঁর বক্তব্য, ২০১৬ সালের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ৫ হাজার ৫০০ জনকে নিয়োগ করা হয়েছিল। নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে ৯০৭টি বিকৃত ওএমআর শিট উদ্ধার করে সিবিআই। তার মধ্যে ১৩৮ জন ছিলেন ওয়েটিং লিস্টে। সেই মামলায় একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় ওএমআর সিট প্রকাশের ক্ষেত্রে কমিশনের অবস্থান জানতে চায় হাইকোর্ট। ববিতার সেই আবেদনে মান্যতা দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় চাকরিপ্রার্থীদের ওএমআর শিট প্রকাশ করার নির্দেশ দেন। এদিকে, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন সুপ্রিম কোর্টে গেলে সেখানেও এই নির্দেশ বহাল থাকে।