তাপস পালের মৃত্যুতেও রাজনীতিকে টানলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার রবীন্দ্রসদনে প্রয়াত অভিনেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। এর পর তিনি তাপস পালের মৃত্যুর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতি ও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে কাঠগড়ায় তোলেন।
এদিন মমতা বলেন, 'আগে অনেকবার বলার চেষ্টা করেছি, অনেকে হয়ত এটা জানে, আজ বলতে চাই..একটা এজেন্সির দ্বারা অত্যারচারিত হয়ে ওঁর জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল। ও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। মৃত্যুর আগে জানতেও পারল না ওর অপরাধটা কোথায়! এক বছর এক মাস তাপসের মতো অভিনেতাকে জেলে রেখে দেওয়া হল। আইন আইনের মতো চলবে.. তিনটে মৃত্যু আমি দেখলাম, তাপস পাল.. অসময়ে মৃত্যু, অকাল মৃত্যু। আহত অবস্থায় তাঁর এই অকালে চলে যাওয়া। চলচ্চিত্র জগতের অপূরণীয় ক্ষতি তো বটেই। শিল্পীরা যারা বিভিন্ন প্রোডাকশন হাউসে কাজ করেন, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসডর হয়ে কাজ করেন সেই কাজ করতে গিয়ে যদি প্রাণ চলে যায় সেটা ঠিক হচ্ছে? কেন্দ্র সরকারের যে প্রতিহিংসা পরায়ণ রাজনীতি করছে সেটা ঠিক?
এর পর প্রয়াত সাংসদ সুলতান আহমেদের স্মৃতিচারণা করেন মমতা। বলেন, ‘সুলতান আহমেদের বাড়ির লোক আমাকে জানিয়েছে একটা চিঠি পেল.. তারপরই সব শেষ। প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী সহ্য করতে পারল না, মারা গেল। .. তাপস পালের যাওয়ার বয়স ছিল না। আমি তাপসের মুখের দিকে আমি তাকাতে পারছি না। অসময়ে এই প্রাণ চলে গেল। শ্রীকান্ত মোহতা... এক বছর হয়ে গেল, বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য এত করেছে.. আমি জানি না কোন পর্যায়ে (বিচার প্রক্রিয়া) আছে। ওর শরীরও ভালো নয়। ক'দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। অন্যায় করলে বিচার হোক, এতদিন জেলে বন্দি করে রাখার কী কৌশল? আমি মর্মাহত, দুঃখিত। তাপসের চলে যাওয়া শুধু ওঁর চলে যাওয়া নয়, আমি ওঁর পরিবার, টলিউড, টেলিউড সবার কাছে সমবেদনা জানাচ্ছি' ।
বলে রাখি, গতকালই তাপস পালের মৃত্যুর জন্য নাম না করে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘তাপস পাল অসময়ে চলে গেলেন। অসময় অভিনয় ছেড়ে দিলেন। এটা পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা জগতের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। কিন্তু যেভাবে তার মৃত্যু হয়েছে, যে কষ্ট উনি পেয়েছেন, আমার মনে হয় যে লোকেদের সঙ্গে তিনি ছিলেন তাদের জন্যই এই পরিণতি হয়েছে। এই ধরণের ঘটনা থেকে সাধারণ মানুষের শিক্ষা নেওয়া উচিত। যে কারা এখানে রাজনীতি করছে। কারা সাধারণ মানুষকে খারাপ করছে সেটাও বোঝার দরকার আছে।’ দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যে, সংবাদমাধ্যমের কাছে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার ভোরে মুম্বইয়ের বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাপস পালের। রাতে বিমানে তাঁর দেহ আনা হয় কলকাতায়। বুধবার সকালে দেহ টেকনিশিয়ান স্টুডিয়ো ও রবীন্দ্রসদনে শায়িত থাকে। বিকেলে ক্যাওড়াতলা শ্মশানে শেষকৃত্য।