বাংলা নিউজ > বাংলার মুখ > কলকাতা > করোনাকালে কাজিয়ায় মেতেছে তৃণমূল-বিজেপি, দোষারোপের খেলায় ঘনাচ্ছে আশঙ্কার মেঘ

করোনাকালে কাজিয়ায় মেতেছে তৃণমূল-বিজেপি, দোষারোপের খেলায় ঘনাচ্ছে আশঙ্কার মেঘ

পরস্পরের প্রতি আক্রমণ ও প্রতি-আক্রমণে মেতেছে শাসক ও বিরোধী দল।

করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে ব্যস্ত রাজ্যের শাসক-বিরোধী দুই দলই।

করোনা মোকাবিলায় পরিষেবা ও ত্রাণ নিয়ে রাজ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক কাজিয়ার পালা। পরস্পরের প্রতি আক্রমণ ও প্রতি-আক্রমণে মেতেছে শাসক ও বিরোধী দল।

গত এক সপ্তাহ ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বিবিধ অভিযোগ তুলে ধরেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, রাজ্য সভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত এবং বিজেপি আইটি সেলের সর্বভারতীয় প্রধান অমিত মালব্য।তাঁদের আক্রমণের তালিকায় রয়েছে ত্রাণ বণ্টন নিয়ে রাজনৈতিক বৈষম্য, লকডাউন নীতির ভ্রান্ত প্রয়োগ এবং রাজ্যে সংক্রামিতের সংখ্যা ধামাচাপা দেওয়ার মতো একাধিক অভিযোগ।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে গত ৭ এপ্রিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় টুইট করে অভিযোগ করেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার আত্মঘাতী হয়ে উঠেছে। তৃণমূলের সাসনাধীন পশ্চিমবঙ্গ অনর্গল মিথ্যা কথা বলে চলেছে।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘মমতা দিদির শাসনের সারসত্য। সকলেই অভিযোগ জানাচ্ছেন। নার্স, ডাক্তাররা নামপ্রকাশ না করে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিচ্ছেন। আর এতই যদি ধোঁয়া দেখা যায়, তা হলে বলতে হবে মমতাদিদি আগুন নিয়ে খেলছেন।’

বাবুলের দাবি, তিনি মমতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিতে এই সমস্ত তথ্য জানাচ্ছেন না। তাঁর দাবি, সাধারণ মানুষের একজন হিসেবেই রাজ্যবাসীর স্বার্থে তিনি সত্য উদ্ঘাটনে নেমেছেন।

আবার এপ্রিলের ৭ তারিখেই রাজ্য সভার বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত তাঁর টুইটার হ্যান্ডেলে হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরে বেড়ানো একটি মেসেজ পোস্ট করেন যাতে দাবি করা হয়েছে যে, রাজ্যের সমস্ত জেলাশাসক ও পদস্থ আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের তরফে, কেন্দ্রীয় সরকারের আধিকারিকদের কোনও প্রশ্নের জবাব যেন তাঁরা না দেন। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যে কোনও বিষয়ে তাঁদের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মুখ্যসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অন্য দিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একটি ভিডিয়ো কনফারেন্সে গরহাজির থেকেছেন। গত ১৫ মার্চ দিল্লির নিজামুদ্দিনে তবলিঘি জামাত আয়োজিত ধর্মীয় সমাবেশের অনুমোদন দেওয়ার জন্য দু’ বার কেন্দ্রীয় সরকারকে দোষারোপ করেছেন এবং রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মীদের জরুরি পিপিই ত্রাণ থেকে বঞ্চিত করার জন্য কেন্দ্রের মুণ্ডপাত করেছেন।

বিজেপি-র নাম না করে তাঁর অভিযোগ, ‘আমি দুঃখিত যে বলতেই হচ্ছে একটি রাজনৈতিক দলের আইটি সেল ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে।’

তা ছাড়া গত ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর ডাকা 9pm9minute কর্মসূচির পরে মন্তব্য করেছেন, ‘যাঁরা রাস্তায় নেমে কাঁসর-ঘণ্টা বাজিয়েছেন, তাঁরা মানুষকে ভুলপথে চালিত করছেন। এটা রাজনীতি করার সময় নয়। কেন্দ্র আমাদের কোনও সাহায্যই করছে না। যতটুকু করছি নিজেদের সামর্থ্যে করছি।’

মমতার ভাইপো তথা তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সরকাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে গত ৫ এপ্রিল টুইট করেন, ‘বাজি পুড়িয়ে ফানুস উড়িয়ে বিশ্বে আমরাই প্রথম দেশ যারা Covid-19 এর মতো মহামারী উদযাপন করছি। আমি আসলে ভাবছি, কতজন লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। কী শেখানো হল, ব্যক্তিগত বিচ্ছিন্নতা না কি ব্যক্তিগত ধ্বংসলীলা?’

রাজ্যের জুটমিল ও চা বাগান খুলে রাখার কেন্দ্রীয় প্রস্তাবেও সায় দেননি মমতা। জবাবে গত ৮ এপ্রিল বাবুল সুপ্রিয় টুইটারে খোঁচা দেন, ‘ফুল, পান আর মিষ্টির দোকাল খুলে দেওয়া হল। ইয়ার্কি হচ্ছে?’

পরিস্থিতি দেখে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘দুই দলই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ’রাজনৈতিক ফায়দা তোলার খেলায় মেতেছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। এখন পরস্পরকে দোষারোপের সময় নয়। আমি ওঁদের কাছে সংযম পালনের জন্য আবেদন জানাচ্ছি।’

বন্ধ করুন