নবীন–প্রবীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে এখন আড়াআড়িভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তার জেরে প্রতিষ্ঠা দিবসেই সুব্রত বক্সি বনাম কুণাল ঘোষ তরজাও তুঙ্গে উঠেছে। আর সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ বা বিধায়ক হতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বয়সের উর্ধ্বসীমা বাঁধতে চাইছেন। সেটা বলবৎ হলে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবার টিকিট পাওয়া মুশকিল। এটা বুঝতে পেরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে বাংলা ছাগলের তৃতীয় সন্তান হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করে বসলেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন বলেই জাতীয় রাজনীতিতে বাংলা আলোচনায় আছে বলে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসে মন্তব্য করলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সুদীপের এই মন্তব্যে শোরগোল শুরু হতেই পাল্টা খোঁচা দিলেন কুণাল ঘোষ।
ঠিক কী বলেছেন উত্তর কলকাতার সাংসদ? আজ, সোমবার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হল। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বলেন, ‘এত বড় দেশ, ২৯টি রাজ্য, ১৩৪ কোটির দেশ। এই দেশে রাজনীতির যা পরিবেশ, এই পরিবেশে বাংলাকে সবসময় আলোচনায় প্রথমে রাখতে হয়। কারণ বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতিতে আছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন থাকবেন না, আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বলে, দেশের রাজনীতির যা গতিপ্রকৃতি তাতে বাংলা ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা হয়ে গিয়ে মায়ের দুধ খাওয়ার জন্য পাশ থেকে গুঁতোবে।’ এই মন্তব্যের পাল্টা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আমার সামনে এই কথা বললে আমি প্রতিবাদ জানাতাম। ওনাকে এই কথার ভাব সম্প্রসারণ করে দেখাতাম। কারণ আমি মনে করি, যাঁরা এমন কথা বলছেন, তাঁরা হয়তো অন্ধ আনুগত্য দেখাতে চাইছেন। এই অতি ভক্তি দেখাতে গিয়ে দলের মধ্যে বিভাজনের লাইন তৈরি করছেন।’
কেন এমন মন্তব্য সুদীপের? উত্তর কলকাতার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, জাতীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিনই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে পরাস্ত করতে যে ইন্ডিয়া জোট গড়ে উঠেছে, তারও অন্যতম শরিক তাঁর দলও। জোটের বৈঠকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর গুরুত্বের বিষয়টি প্রকশ্যে এসেছে। এমনকী এই ইন্ডিয়া জোটের নামকরণও তাঁরই। আবার কেন্দ্রের কাছে বাংলার দাবিদাওয়া পূরণে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই জায়গা থেকে দেখলে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আজকের মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: শব্দ দানবে কেঁপে উঠল তিলোত্তমা কলকাতা, বর্ষবরণের রাতে বাড়ল শুধুই দূষণ
ঠিক কী বলেছেন কুণাল? সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। কুণালের কথায়, ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন নয়াদিল্লিতে ধরনা আন্দোলন করেছেন, তখন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তো ছিলেন। তিনি তো দেখেছেন অভিষেকের আন্দোলনের কী ঝাঁঝ ছিল। তাহলে কেন এমন কথা বলছেন? এই সব তোষামুদে রাজনীতির কারণে দলের নীচুতলাতেও বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। দলে প্রবীণরাও থাকবেন, নবীনরাও থাকবেন। একটা ভারসাম্য থাকবে। তাতে দলের মঙ্গল হবে।’