নদিয়ার কল্যাণীর জহরলাল নেহেরু মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এমআরআই থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, সিনিয়র চিকিৎসকদের অন্ধকারে রেখে এই সমস্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও রোগীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। আর সেই বিল চলে যাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরে। ফলে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা বাবদ লক্ষ লক্ষ টাকার বিল মেটাতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই এবার পদক্ষেপ করল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। রোগীর কী পরীক্ষা হচ্ছে? কবে পরীক্ষা হচ্ছে? প্রেসক্রিপশন, তা সব নির্দিষ্ট সময়ে অনলাইন পোর্টালে আপলোড করতে হবে বলে নির্দেশিকা জারি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। যে সমস্ত সরকারি হাসপাতালে পিপিপি মডেলে ডায়গনস্টিক সেন্টার চলে সেই সমস্ত ডায়গনস্টিক সেন্টারকে এই নিয়ম মেনে চলতে হবে।
আরও পড়ুন: লাইসেন্স ছাড়াই অস্ত্রোপচার চারু মার্কেটে, পা কেটে বাদ গেল রোগীর
গত ১ জুলাই স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে পিপিপি মডেলে থাকা ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলিকে এই নিয়ম মেনে চলতে হবে। এ নিয়ে হাসপাতালগুলিকেও সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট আইডি নম্বরও দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, কল্যাণীর ওই হাসপাতালে অভিযোগ উঠেছিল, রোগীর এমআরআইয়ের প্রয়োজন না হলেও পিপিপি মডেলে চলা পরীক্ষাকেন্দ্রে রিকুইজিশন চলে যাচ্ছে। এছাড়া, সিটি স্ক্যানের জন্যও রিকুইজিশন চলে যাচ্ছে পরীক্ষা কেন্দ্রে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিমাসে ওই পরীক্ষা কেন্দ্রে দেড় হাজার এমআরআই হচ্ছে। এক একটির খরচ আড়াই হাজার টাকা। সেই হিসেবে শুধুমাত্র এমআরআই বাবদ মাসে ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। আর সিটি স্ক্যান বাবদ খরচ হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ সবমিলিয়ে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার বিল হচ্ছে পরীক্ষা বাবদ। তবে সবক্ষেত্রে যে পরীক্ষা হচ্ছে তা নয়। কিছু কিছু পরীক্ষা আবার হচ্ছেও না। এই অভিযোগ ওঠার পরেই কড়া মনোভাব দেখিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আউটডোরে কোনও রোগীর প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসক যদি ডায়ালিসিস, এমআরআই, সিটি স্ক্যানের মতো পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দেন, তাহলে সে ক্ষেত্রে ওই প্রেসক্রিপশন নির্দিষ্ট পোর্টালে আপলোড করতে হবে। সঙ্গে আধার কার্ড স্বাস্থ্যসাথী বা পাসপোর্ট, ১২ বছরের কম হলে জন্মের শংসাপত্র আপলোড করতে হবে। না থাকলে জরুরী ক্ষেত্রে চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর সহ হাসপাতালের প্যাডে স্ট্যাম্প দিয়ে তা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠাতে হবে। আবার সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক উপস্থিত না থাকলে সে ক্ষেত্রে অন্য পদ্ধতিতে রোগীর টিকিটের ব্যবস্থা করতে হবে। এর ফলে যাতে চিকিৎসা পরিষেবা কোনওভাবেই ব্যহত না হয় সে বিষয়টিও নজর রাখতে বলেছে স্বাস্থ্য দফতর। এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পোর্টাল সরাসরি স্বাস্থ্য ভবনের পোর্টালের সঙ্গে যুক্ত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও পোর্টাল পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে।