একটি প্রবাদ আছে, নম্র মানুষের কাছে জীবনের উদ্দেশ্য ও সফলতার প্রতি এক আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, যা তাদেরকে জীবনে সফলতার উচ্চশিখরে পৌঁছে দেয়। আইএএস হিমাংশু গুপ্তের জীবন কাহিনিও ঠিকই সেরকমই অনুপ্রেরণাদায়ক, যা বর্তমান যুবসমাজকে অনুপ্রেরণা দান করবে। যার গল্প শুনে যে কেউ জীবনে যে কোনও পরিস্থিতি থেকে খুঁজে পাবে বেঁচে থাকার রসদ, লড়াই করার শক্তি, ঘুরে দাঁড়ানোর ইচ্ছে, জীবনের উদ্দেশ্য ও সফলতার খিদে।
হিমাংশুর জন্ম উত্তরাখণ্ডের উধমসিংহ জেলার সিতারগঞ্জে কিন্তু বেড়ে উঠেছিলেন বরেলি জেলার একটি ছোট শহর সিরাউলিতে। ছোটবেলা থেকেই তিনি অভাবের সংসার প্রতক্ষ করেছেন। আর্থিক অস্বচ্ছলতা ছিল তাঁর দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী। শৈশবেই তিনি টের পেয়েছিলেন তাঁর জীবনের পথ একদমই সুগম হবে না। বুঝে গিয়েছিলেন বেড়ে উঠতে হবে এই ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েই। হতদরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করার কষ্ট তিনি অনুভব করেছিলেন সেই সময়েই। কিন্তু একদমই ভেঙে পড়েননি। অজুহাতও খোঁজেননি। স্কুলে যেতে তাঁকে দৈনিক ৭০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হত। পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার চায়ের দোকানেও চা বিক্রি করত 'ছোট্ট হিমাংশু'। পরবর্তীতে টিউশন পড়িয়ে সংসারের হাল ধরেছিলেন। কিন্তু কে জানত, যে জীবনে এত ঘাত প্রতিঘাতের সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই চালাচ্ছে, চালচুলোহীন একরত্তি ছেলে যে কিনা চা বিক্রি করছে, সে একদিন সর্বভারতীয় স্তরে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষায় সফলতা অর্জন করবে, একবার নয়, তিনবার! হয়ে উঠবে সমাজের মুখ, 'আইকন'। সেটাই হয়েছে। আজ সেই ছোট্ট চা বিক্রেতা হয়ে উঠেছেন আইএএস হিমাংশু গুপ্ত।
হাজার প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, হিমাংশু দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু কলেজ থেকে স্নাতক হন। তারপর তিনি একটি ভাল চাকরিও পান। তখনই তিনি UPSC - সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দেওয়ার 'কঠিন' সিদ্ধান্ত নেন। কঠিন হলেও কোনও বাধা তাঁকে খাঁচাবন্দী করতে পারনি। ঝঞ্ঝার মত এগিয়ে গিয়েছেন দুর্বার গতিতে। পরিবারকে টিকিয়ে রাখতে তিনি একটি সরকারী কলেজে গবেষক হিসেবে যুক্ত হন। একপ্রকার স্টাইপেন্ড দিয়েই তাঁর সংসার ও নিজের খরচ বহন করতেন হিমাংশু।
কোচিং ছাড়াই তিনবার ইউপিএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন হিমাংশু। প্রথম প্রচেষ্টায়, তিনি সিভিল সার্ভিসের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন কিন্তু শুধুমাত্র নির্বাচিত হন IRTS-এর জন্য। তবে তিনি নিজের লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। মহাভারতে অর্জুনের একাগ্রতা ও কঠোর পরিশ্রমের ফলে যেভাবে গুরু দ্রোণাচার্যের প্রিয় হয়েছিলেন এবং কাঠের পাখির গলায় একমাত্র অর্জুনই তীরের সঠিক আঘাত করতে সফল হয়েছিলেন, বাস্তবে হিমাংশুর কাহিনিও ঠিক সেরকমই। অর্জুনের তীর যেমন সঠিক লক্ষ্যে আঘাত করেছিল, ২০১৯ ইউপিএসসি পরীক্ষায় ঠিক সেরকমই সর্বভারতীয় ৩০৯ তম স্থান দখল করে হয়ে উঠেছিলেন আইপিএস। তবে এখানেই তিনি থেমে থাকেন নি। তারপরেও তিনি চেষ্টা চালিয়ে যান। পরের প্রচেষ্টায়, বলা ভালো তাঁর শেষ প্রচেষ্টায় ২০২০ সালে UPSC সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অবশেষে তিনি সর্বভারতীয় ১৩৯ তম স্থান সহ ভারতীয় প্রশাসনিক পরিষেবায় (আইএএস) অফিসার হয়ে তাঁর জীবনের স্বপ্ন অর্জন করেন। তাঁর জীবনদর্শণ হয়ে উঠবে যুব সমাজের পাথেয় আর হিমাংশু হয়ে উঠবে পথপ্রদর্শক।