রাজকোটে জয়ের পর আজ রাঁচিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ খেলতে নেমেছে টিম ইন্ডিয়া। ইতিমধ্যেই ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে রোহিত শর্মারা। তবে চতুর্থ টেস্টে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে দলের তারকা পেস বোলার জসপ্রীত বুমরাহকে এবং তাঁর পরিবর্তে দলে জায়গা দেওয়া হয়েছে বাংলার তরুণ পেসার আকাশ দীপকে।
কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে আন্তর্জাতিক স্তরে খেলতে নামার সফরটা একেবারেই সহজ ছিল না বাংলার তরুণ পেসার আকাশের জন্য। তাঁকে পার করতে হয়েছে একের পর এক বাধা। শুধু ঘরোয়া ক্রিকেটই নয়, তাঁকে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে হয়েছে আইপিএলেও। তবে শত চাপের মাঝেও তিনি বল হাতে দিয়েছেন একের পর এক ভালো পারফরম্যান্স করেন এবং অবশেষে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন জাতীয় দলে।
তবে আকাশকে গড়ার পেছনে একটি বড় অবদান রয়েছে বাংলার প্রাক্তন অনূর্ধ্ব-২৩ দলের কোচ, তথা বাংলার বর্তমান সহকারী কোচ, সৌরাশিস লাহিড়ীর। আকাশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আকাশ একজন দুর্দান্ত বোলার। ওর মধ্যে যেই বিশেষ ব্যাপারটা রয়েছে সেটা হলো যে টানা আট থেকে দশ ওভার ও একই গতিতে বল করতে পারে। এছাড়াও ওর আরো একটা গুণ রয়েছে সেটা হলো যে ও খুব ভালো ইনসুইং করাতে পারে। আপনি দেখবেন সোজা বল করার সময় কব্জি যেখানে থাকে, ইনসুইং করার সময়ও সেই একই জায়গায় কব্জি থাকে। ঠিক এই কারণেই ওকে খেলা কঠিন হয়ে ওঠে বিপক্ষ দলের ব্যাটারদের জন্য।'
আকাশের প্রশংসা করেছেন বাংলা দলের প্রাক্তন ডিরেক্টর জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, 'আমার এখনও মনে আছে যে রেঞ্জার্স মাঠে একদিন সিএবি-র দ্বিতীয় ডিভিশনের একটা ম্যাচ দেখছিলাম। সাধারণত, যখন কোন পেস বোলার বল করতে আসে কিপার উইকেটের থেকে ১০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু ও যখন বল করতে এলো তখন উইকেটরক্ষক প্রায় ৩৫ গজ দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। ছেলেটা খুব জোরে বল করছিল। দ্বিতীয় ডিভিশনের কোনও ম্যাচে এমন বোলার দেখাই যায় না সত্যি বলতে গেলে। এরপরই আমি বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে সৌরাশিস ও সৌরভকে ওর সম্বন্ধে জানাই এবং বাংলার ডরমিটরিতে ওর থাকার ব্যবস্থা করি।'
প্রসঙ্গত, যেদিন আকাশ দীপ জাতীয় দলে সুযোগ পান সেদিন বাংলার রঞ্জি ম্যাচ চলছিল। খবর পেয়ে তিনি অত্যন্ত খুশি হন এবং বলেন, 'খবরটা আমায় প্রথমে লক্ষী স্যার দেন। সকলেই হাততালি দিচ্ছিল। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি ঠিক কি কারনে এত হাততালি দিচ্ছে ওরা। পরে আমি জানতে পারি জাতীয় দলে আমার দাগ পড়েছে।'
উল্লেখ্য, বিহারের সাসারামে আকাশের জন্ম। অনেক কঠিন লড়াই করে জাতীয় দলে আসতে হয়েছে তাঁকে। একে পরিবারের খেলাধুলার তেমন চল ছিল না। তার উপর ছয় মাসের মধ্যে বাবা ও দাদার মৃত্যু আরও অবস্থা শোচনীয় করে তোলে। তবুও তিনি ক্রিকেট থেকে নিজের নজর সরাননি। তিন বছর পর নিজের লড়াইয়ে ফেরেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি ৩০টি ম্যাচ খেলে তুলেছেন ১০৪টি উইকেট। তিনি আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুর হয়ে খেলেন।
দুর্গাপুরে থাকার সময় জেলায় টেনিস বল ম্যাচ খেলে প্রতিদিন ৬০০০ টাকা পেতেন আকাশ দীপ। মাসে ২০ হাজার টাকা পেতেন তিনি। যা দিয়ে তাঁর সংসার চলত। বাংলার হয়ে অনূর্ধ্ব ২৩ দলে সুযোগ পাওয়ার আগে অবধি নিজে থেকেই ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যেতেন আকাশ দীপ। ২৭ বছর বয়সী আকাশ দীপের ক্রিকেটে হাতে খড়ি হয় টেনিস বল দিয়ে। আকাশ দীপের বাবা রামজি সিং ছিলেন শিক্ষক। তিনি কখনও চাইতেন না আকাশ দীপ ক্রিকেটার হোক। বরং তিনি আকাশ দীপকে সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে উৎসাহিত করতেন। কিন্তু আকাশের স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হয়ে ওঠা। ঠিক সেই লক্ষ্যেই অবিচল থেকে এগিয়ে গিয়েছেন তিনি। আজ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর টেস্ট অভিষেক হয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি দুর্দান্ত পারফরম্যন্সও করছেন।
গম্ভীর-ধোনির আসা যাওয়া, রোহিত-হার্দিকের রেষারেষি, কামিন্স-স্টার্কের জারিজুরি, আইপিএল ২০২৪-এর সব খবর, লাইভ ক্রিকেট স্কোর, আইপিএলের সূচি 2024, সব তথ্য পান এক ক্লিকে। গিল না কোহলি, আইপিএলের অরেঞ্জ ক্যাপ 2024 এবার কার দখলে, আইপিএলের পার্পল ক্যাপ 2024 পরবেন কোন বোলার, নাইটদের পরিসংখ্য়ান , যে কোনও প্লেয়ারের আইপিএল 2024 স্ট্যাটস, আগেরবারের যাবতীয় রেকর্ড জানতে পড়ুন HT Bangla।