অধ্যবসায়। প্রতীক্ষা। অবশেষে প্রাপ্তি। বিহারের সাসরামে জন্ম তাঁর। রাঁচির ঝাড়খণ্ড আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম থেকে প্রায় ২০০কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই মাঠেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মায়ের পা ছুঁয়ে টেস্ট অভিষেক ঘটালেন বাংলার জোরে বোলার আকাশ দীপ। বাংলার হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেললেও আকাশ দীপ আদতে বিহারের বাসিন্দা। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দেখে ক্রিকেট খেলার জন্য পারি দেন দিল্লিতে।
রাজধানী শহরে বিশেষ কিছু করতে না পেরে এক বুকে আশা নিয়ে আসেন বাংলা। এখান থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়নি তাঁকে। বাংলা রঞ্জি দলের হয়ে একের পর এক দারুণ পারফরম্যান্স করেছেন তিনি। সেখান থেকেই এবার তিনি জায়গা করে নিলেন ভারতীয় দলে। সেই আবেগঘন মুহূর্তের সাক্ষী থাকল গোটা স্টেডিয়াম। আকাশকে টেস্ট ক্যাপ তুলে দেন কোচ রাহুল দ্রাবিড়। সেই মুহূর্তে চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না আকাশের মা। মাঠেই কেঁদে ফেললেন তিনি।
মহেন্দ্র সিং ধোনির পাড়ায় ইংরেজ বাহিনীর বিরুদ্ধে চতুর্থ টেস্ট ম্যাচ খেলতে নেমেছে ভারতীয় দল। সেখানেই অভিষেক ঘটালেন আকাশ দীপ। তারকা বোলার জসপ্রীত বুমরাহকে এই ম্যাচে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। কার্যত সেই জায়গায় সুযোগ দেওয়া হল বাংলার এই জোরে বোলারকে। জাতীয় দলের প্রথম একাদশে জায়গা করে নেওয়ার পর মাঠে উপস্থিত মায়ের পা ছুঁতে দেখা যায় আকাশকে। সেই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে পাশেই রয়েছে তাঁর ভাই। চোখে জল আকাশের মায়েরও। এক ফ্রেমে একটি পরিবারের স্বপ্ন পূরণ হতে দেখে আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েছে নেট নাগরিকরাও। শুভেচ্ছার বন্যায় ভাসছে আকাশ দীপ ও তাঁর পরিবার।
এদিন আকাশকে টেস্ট ক্যাপ দেওয়ার সময় পুরনো দিনের কথা টেনে আনেন রাহুল দ্রাবিড়। তিনি বলেন, 'এখান থেকে ঠিক ২০০ কিমি দূরে তোমার বাড়ি। প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম তোমার, সেখান থেকে আজ তুমি এই জায়গায়। মোটেই সহজ ছিল না তোমার পথ চলা। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দেখে তোমার ক্রিকেটে আগ্রহ বাড়ে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে দিল্লি যাও তুমি। কিন্তু সেখানে কিছু করতে না পারায় কলকাতায় ফিরতে হয়। সেখান থেকে ক্লাব ক্রিকেট এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলে আজ এই জায়গায়। আশা করব তুমি সামনের দিকে আরও এগিয়ে যাবে। এবং নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকবে। তবে দুঃখের বিষয় এটাই যে তুমি তোমাক বাবা এবং দাদাকে হারিয়েছো। আজ তোমার পরিবার এখানে এসেছেন। তোমার মা রয়েছেন। কিন্তু বাবা আজ নেই। তারা তোমার এই সাফল্য দেখতে পারছেন। তোমাকে তারা আশীর্বাদ করছেন।'
জাতীয় দলের হয়ে নিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচের প্রথমদিন নিজের নামেই করে রাখলেন আকাশদীপ। ১৭ ওভার বল করে নিয়েছেন তিনটি উইকেট। তবে প্রথম উইকেট পাওয়ার জন্য ক্রিকেটার ঈশ্বর আরও কিছুটা নিংড়ে নিতে চেয়েছিল তাকে। প্রথমে ইংরেজ ওপেনার জ্যাক ক্রলির অফ স্ট্যাম্প ছিটকে দিলেও সেটা নো বল হয়ে যায়। আরও কিছু অপেক্ষা করতে হয়, আকাশকে। পরে আর এক ওপেনার বেন ডাকেট তার টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ক্রিকেট হয়ে থাকল। তবে জ্যাকের উইকেট শেষ পর্যন্ত পায় আকাশই। এছাড়া পোপকে শূণ্য রানে আউট করে দেন বাংলার এই জোরে বোলার।