বল হাতে একেবারে ভেল্কি দেখালেন দীপ্তি শর্মা। আর তাঁর জাদুতেই থরহরি কম্প দশা ইংল্যান্ডের মহিলা ব্যাটারদের। ভারতের ৪২৮ বিশাল রানের সামনে কার্যত খড়কুটোর মতো গুটিয়ে যায় হেথার নাইটের টিম। দীপ্তি একাই ৫ উইকেট তুলে নিয়ে গুঁড়িয়ে দিলেন ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ।
দীপ্তি শর্মা বাংলার মেয়ে নন। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি বাংলার হয়েই খেলেন। সেই সুবাদে বাংলার বোলারের দাপটে কোণঠাঁসা হয়ে পড়ে ইংল্যান্ড। তারা প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৩৬ রানে গুটিয়ে যায়। আর ভারত পায় ২৯২ রানের বিশাল লিড। যদিও দ্বিতীয় ইনিংসের ভারতেরও বেহাল দশা। দ্বিতীয় দিনের শেষে তারা ১৮৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বসে রয়েছে। তবে প্রথম ইনিংসের লিডের সুবাদে ইংল্যান্ডের চেয়ে এখন হরমনপ্রীত কৌররা ৪৭৮ রানে এগিয়ে রয়েছে। যেটা নিঃসন্দেহে বিশাল স্কোর।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দিনই ৪০০ রান পার করে গিয়েছিল ভারত। ৭ উইকেটে ৪১০ রান করে ফেলেছিল টিম ইন্ডিয়া। তবে দ্বিতীয় দিনের শুরুতে তারা খুব বেশি রান যোগ করতে পারেনি। ভারত এদিন মাত্র ১৮ রান যোগ করে ৪২৮-এ অলআউট হয়ে যায়। প্রথমদ দিনেক শেষে দীপ্তি শর্মা ৯টি চার এবং একটি ছয়ের হাত ধরে ৯৫ বলে ৬০ করে অপরাজিত ছিলেন। সঙ্গে ১২ বলে ৪ করে অপরাজিত ছিলেন পূজা বস্ত্রকার। এদিন দিনের শুরুতেই মাত্র ৭ রান যোগ করে সাজঘরে ফিরে যান দীপ্তি। এর পর রেনুকা সিং (১) এবং রাজেশ্বরী গায়কোয়াড়ও (০) পরপর সাজঘরে ফিরে যানষ পূজা ৪৫ বলে ১০ করে অপরাজিত থাকেন। ইংল্যান্ডের হয়ে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন লোরেন বেল এবং সোফি একলেস্টোন।
ব্যাট হাতেও রান পেলেও, সেটা মনের মতো হয়নি দীপ্তির। তাই বল হাতে তিনি বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। এমনিতেই প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড ব্যাট করতে নামার পর থেকেই নির্দিষ্ট ব্যবধানে উইকেট হারাতে শুরু করে। একমাত্র ন্যাট সিভার-ব্র্যান্ট ছাড়া কেউ রানই পাননি। ট্যামি বিউমন্ট, সোফিয়া ডাঙ্কলে, হেথার নাইটের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটারেরা সুবিধা করতে পারেননি। সিভার-ব্র্যান্টের ৭০ বলে ৫৯ রান বাদ দিলে, বাকিদের ২০ রানের গণ্ডি টপকাতে পারেননি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৯ রান করেছেন ড্যানি ওয়াট। অ্যামি জোনস করেছেন ১২ রান। এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ। ডাঙ্কলে আর হেথার নাইট ১১ করে রান করেছেন। ১০ করেছেন বিউমন্ট। বাকিরা এক অঙ্কের ঘরেই আটকে ছিলেন।
আরও পড়ুন: ফিল্ডিং করতে গিয়ে চোট, সাপোর্ট স্টাফেদের কোলে চেপে মাঠ ছাড়েন, কতটা গুরুতর? নিজেই আপডেট দিলেন সূর্য
ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবার শেষে বল করতে যান দীপ্তি। আর তার পরেই চমক দেখান তিনি। ইংল্যান্ডের মিডল এবং লোয়ার অর্ডারকে সাজঘরে ফেরান দীপ্তি। ড্যানি ওয়াট, এমি জোনস, সোফি একলেস্টোন, কেট ক্রস এবং লরেন ফিলারকে আউট করেছেন দীপ্তি। ৫.৩ ওভারে মাত্র ৭ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট তুলে নেন তিনি। এছাড়া স্নেহ রানা নিয়েছেন ২ উইকেট। দীপ্তির দাপটে ৩৫.৩ ওভারে ১৩৬ রানে অল আউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ভারত আহামরি খেলতে পারেনি। চার্লি ডিন এবং সোফি একলেস্টোনের দাপটে নড়বড় করছে ভারতের ব্যাটিং অর্ডারও। স্মৃতি মন্ধানা দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ। এদিন ওপেন করতে নেমে ২৯ বলে ২৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। ৫৩ বলে ৩৩ করে আউট হন আর এক ওপেনার শেফালি বর্মা। ১৪ বলে মাত্র ৯ করেন যস্তিকা ভাটিয়া। জেমিমা রজরিগেজের সংগ্রহ ২৯ বলে ২৭ রান। দীপ্তি শর্মা দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮ বলে ২০ করেই সাজঘরে ফেরেন। স্নেহ রানা গোল্ডেন ডাক করেন। একমাত্র ভারত অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌরই কিছুটা দলের হাল ধরেছেন। ৬৭ বলে ৪৪ করে অপরাজিত রয়েছেন তিনি। ৪১ বলে অপরাজিত ১৭ রান করে ক্রিজে আছেন পূজা বস্ত্রকার। দ্বিতীয় দিনের শেষে ৪২ ওভারে ৬ উইকেটে ১৮৬ রান ভারতে। ইংল্যান্ডের চার্লি ডিন নিয়েছেন একাই ৪ উইকেট। একলেস্টোন নিয়েছেন ২ উইকেট। ৪৭৮ রানে এগিয়ে থাকার সুবাদে হরমনপ্রীতরা জয়ের স্বপ্ন দেখছেন।