দুই বারের চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্সের ভাঁড়ার গত এক দশক ধরে শূন্য। ২০১৪ সালে দ্বিতীয় বার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কেকেআর। তার পর থেকেই খরা চলছে নাইটদের। ২০২১ সালে কলকাতার ফ্র্যাঞ্চাইজিটি প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইয়ন মর্গ্যানের অধীনে রানার্স-আপ হয়েছিল। এর পরের দুই সংস্করণেই পয়েন্ট টেবলের সপ্তম স্থানে শেষ করে।
২০১২ এবং ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়ন কেকেআর, আইপিএল ২০২৪ সংস্করণের জন্য নিলামে দশ জন নতুন খেলোয়াড়কে ৩১.৩৫ কোটি টাকায় কিনে নেয়। চার বিদেশি খেলোয়াড় এবং ছয় ভারতীয় খেলোয়াড় যোগ দিয়েছেন এই ফ্র্যাঞ্চাইজিতে। মিচেল স্টার্ক ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে শেষ দুই বছর আইপিএল খেলেছিলেন, তিনি এবার নিলামের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। কেকেআর তাঁকে ২৫.৭৫ কোটি টাকায় কিনে নেয়। যা আইপিএলের ইতিহাসে কোনও প্লেয়ারের সর্বোচ্চ দাম।
অন্যদিকে আসন্ন মরশুমে শ্রেয়স আইয়ারকে আবার কেকেআর-কে নেতৃত্ব দিতে দেখা যাবে। গত মরশুমে তাঁর অনুপস্থিতিতে নাইট বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নীতিশ রানা। তিনি আইপিএল ২০২৪-এ কেকেআরের সহ-অধিনায়কের ভূমিকা পালন করবেন। আসন্ন মরশুমে তৃতীয় ট্রফি জেতার লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নামবে শ্রেয়স আইয়ারের নেতৃত্বাধীন দল। এখন কলকাতা নাইট রাইডার্সের শক্তি এবং দুর্বলতাগুলো জেনে নেওয়া যাক।
আরও পড়ুন: এক বছর আগেই মাহি ভাই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ‘তৈরি থেকো’… অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়ে তাই অবাক হননি রুতুরাজ
শক্তি কী?
ব্যাটিং দক্ষতা: ২০২৪ আইপিএলের জন্য কলকাতা নাইট রাইডার্সের সব থেকে শক্তিশালী দিকটি হল তাদের ব্যাটিং লাইনআপ। কেকেআরের কাছে জেসন রয়, শ্রেয়স আইয়ার, আন্দ্রে রাসেল, নীতিশ রানা, বেঙ্কটেশ আইয়ার এবং রিঙ্কু সিংয়ের মতো ব্যাটাররা রয়েছেন। এই ব্যাটাররা ইতিমধ্যেই টি২০ ক্রিকেটের মঞ্চে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন।
স্পিন আধিপত্য: কেকেআর-এর প্রধান শক্তিগুলির মধ্যে অন্যতম হল স্পিনিং অস্ত্রাগার। সুনীল নারিন, বরুণ চক্রবর্তী এবং সুয়াশ শর্মা- এই তিন স্পিনারের ত্রিফলা আক্রমণে কেঁপে যেতে পারে যে কোনও দলের ব্যাটিং অর্ডার। বৈচিত্র্য যেমন রয়েছে এই স্পিনারের, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট তুলে নেওয়ার ক্ষমতাও রয়েছে। এই স্পিনাররা কেকেআর-এর অন্যতম শক্তি।
দুর্বলতা কী?
দুর্বল পেস আক্রমণ: স্পিন আক্রমণ বেশ শক্তিশালী হলেও, কেকেআরের পেস আক্রমণ অনেকটাই দুর্বল। উমেশ যাদব, লকি ফার্গুসন এবং টিম সাউদির মতো অভিজ্ঞ পেসারদের কেকেআর ছেড়ে দিয়েছে। ২০২৪ আইপিএলে মিচেল স্টার্কের উপর অনেকটাই নির্ভর করবে নাইটরা। তিনি ছাড়া কলকাতার ফাস্ট-বোলিং ইউনিটে আর কোনও বিশ্বাসযোগ্য নাম নেই। চেতন সাকারিয়ার কাছে তেমন অভিজ্ঞতা নেই। অন্যদিকে, গাস অ্যাটকিনসন ভারতের মাটিতে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩টি ম্যাচ খেলেছেন।
আরও পড়ুন: তুমি CSK-এর ভবিষ্যত, রাঁচিতে একান্তে রুতুরাজকে বার্তা দিয়েছিলেন ধোনি
ডেথ বোলিংয়ে সমস্যা: কেকেআর-এর জন্য আরও একটি বড় দুর্বলতার জায়গা হল ডেথ বোলিং বিভাগে তাদের সমস্যা। ডেথ ওভারে কে বোলিং করবেন, সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ ডেথ ওভারে অভিজ্ঞতা থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। আর কেকেআর-এর বোলিং বিভাগে অভিজ্ঞতা অন্যান্য দলের চেয়ে তুলনামূলক কম। স্টার্ক রয়েছেন ঠিকই, তবে প্রস্তুতি ম্যাচে অজি তারকা কিন্তু অনেক রান গলিয়েছেন ডেথ ওভারে।
আন্দ্রে রাসেল আর সুনীল নারিনের ফর্ম: বিস্ফোরক অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেলের ফর্ম তলানিতে। যেটা কেকেআর-কে চিন্তায় ফেলবে। আগের মরশুমেও তিনি হতাশ করেছেন। তার পরেও এবার তাঁকে দলে রাখা হয়েছে। রাসেল যদি এবারও ফর্মে না থাকে, তবে কপালে দুঃখ আছে কেকেআর-এর। রাসেলের পাশাপাশি সুনীল নারিনও হতাশ করেছিলেন। গত বারের মতো যদি এার নারিনের ফর্ম থাকে, তবে কেকেআর-এর চিন্তার বড় কারণ হবে।
টি২০-তে স্টার্কের রেকর্ড আহামরি নয়: মিচেল স্টার্ককে কেনার জন্য কেকেআর অনেক অর্থ খরচ করেছে। কিন্তু আইপিএল ২০২৪-এ তিনি খুব ভালো পারফরম্যান্স তিনি যদি না করতে পারেন, তবে সব আশা শেষ হয়ে যাবে। ওডিআই এবং টেস্ট ক্রিকেটে তার রেকর্ড খুবই ভালো, তবে টি২০ ক্রিকেটের মঞ্চে তাঁর রেকর্ডকে অসাধারণ বলা যাবে না।
শ্রেয়স আইয়ারের ফর্ম: গত বছর চোটের জন্য খেলতে পারেননি শ্রেয়স। এবার দলে ফিরলেও, তিনি চেনা ছন্দে নেই। তাঁর চোট নিয়েও জল্পনা রয়েছে। তাঁকে পুরো ফিট ঘোষণা করা হলেও, আদৌ কি তিনি পুরো সুস্থ? প্রশ্নটা থেকে যাচ্ছে। নাইট অধিনায়কের ছন্দে থাকা বা না থাকার উপর কেকেআর-এর ভাগ্য অনেকটাই নির্র করছে।