প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিল ভারত। ভারতীয় ক্রিকেটের গৌরবময় ইতিহাসে, ঐতিহ্যবাহী টেস্ট খেলা দেশগুলির মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকাই একমাত্র জায়গা, যেখানে ভারত এখনও একটিও টেস্ট সিরিজ জিততে পারেনি (আফগানিস্তান ঘরের মাঠে খেলেনি এবং ভারত এখনও আয়ারল্যান্ডে টেস্ট খেলেনি)। আর এবারও টেস্ট সিরিজের শুরুটা বিপর্যয় দিয়েই হয়েছিল। সেঞ্চুরিয়নে প্রথম টেস্টে প্রায় বিনা লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ইনিংস এবং ৩২ রানে হেরে যায় ভারত। যেখানে ভারতীয় ব্যাটাররা উভয় ইনিংসে ২৫০ পার করতেই লড়াই করেছিল। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪০০-এর বেশি রান করেছিল। নিঃসন্দেহে ভারতের ব্যাটিং এবং বোলিং- দুই বিভাগই ব্যর্থ হয়।
দ্বিতীয় টেস্ট ছিল এমন একটি ভেন্যুতে, যেখানে ভারত এর আগে কখনওই জিততে পারেনি। তবে কেপ টাউনে দুঃস্বপ্নের ইতি হয় এবং ভোরের দেখা পায় ভারতীয় দল। বল-ট্র্যাকিং যুগে পিচটি ছিল দ্রুততম এবং বাউন্সি। এবং বিদেশের মাঠে ভারতের ব্যাটিংয়ের জন্য জন্য তৃতীয় সবচেয়ে কঠিন পিচ হিসেবে এটি জায়গা পেয়েছিল। ভারত প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের ১০০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন রানে (৫৫) আল আউট করে দিয়েছিল। এবং তার পর পাঁচ সেশনেরও কম সময়ের মধ্যে সাত উইকেটে ম্যাচ জিতে যায় তারা। ভারত সিরিজ জিততে না পারলেও, ২০১০ সালের পর প্রথম বারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ড্র করতে সক্ষম হয়েছিল।
এই সিরিজ ড্র করার পিছনে নিঃসন্দেহে ভারতের কিছু অসামান্য ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ছিল এবং কিছু হতাশাজনক পারফরম্যান্সও ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজে ভারতীয় ক্রিকেটারদের রিপোর্ট কার্ড দেখে নিন এক নজরে:
রোহিত শর্মা (৪/১০, খারাপ): পুরো সিরিজে কাগিসো রাবাডার বিপক্ষে নড়বড় করেছেন ভারত অধিনায়ক। সেঞ্চুরিয়ান টেস্টের প্রথম ইনিংসে রাবাডাকে পুল মারতে গিয়ে আউট হন, দ্বিতীয় ইনিংসে ক্লিন-বোল্ড হন। কেপটাউনে, তিনি আক্রমণাত্মক খেলার সিদ্ধান্ত নিলেও, তাঁর সমস্যাগুলি থেকেই গিয়েছিল। এর পাশাপাশি বক্সিং ডে টেস্টে তার অধিনায়কত্বও নিয়েও উঠেছিল প্রশ্ন।
যশস্বী জয়সওয়াল (৪/১০, খারাপ): দক্ষিণ আফ্রিকায় তাঁর প্রথম সফরে তরুণ বাঁ-হাতি সন্তুষ্ট করতে পারেননি। দক্ষিণ আফ্রিকার পিচের বাউন্সের সঙ্গে তাঁকে বেশ লড়াই করতে হয়েছে। এবং তাঁকে বারবার বেকায়দায় পড়তে দেখা গিয়েছে।
শুভমন গিল (৪/১০, খারাপ): জয়সওয়ালের মতো, গিলও টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় তাঁর প্রথম সফরে গিয়েছিলেন। তবে একটি বড় পার্থক্য রয়েছে। খুব কম সময়ের মধ্যে অল-ফরম্যাট ক্রিকেটারদের একজন হিসেবে চিহ্নিত গিল, টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর তৃতীয় বছরে এখনও নজর কাড়তে পারেননি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনি ২, ২৬, ৩৬ এবং ১০-এর স্কোর নথিভুক্ত করেছিলেন।
বিরাট কোহলি (৭/১০, ভালো): রেনবো নেশনে কোহলির গড় প্রায় ৫০। তাঁর কোনও সেঞ্চুরি নেই। তবে সেঞ্চুরিয়নে তিনি ৩৮ এবং ৭৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। কেপটাউনে সবচেয়ে কঠিন ব্যাটিং পরিস্থিতিতে তিনি যে ৪৬ রান করেছিলেন, তা ভক্ত এবং সমালোচকদের একই ভাবে মনে থাকবে।
শ্রেয়স আইয়ার (৩/১০, খুবই খারাপ): শ্রেয়স আইয়ার এশিয়ার বাইরে ৫ নম্বরে খেলার জন্য তৈরি নন। শর্ট-পিচ ডেলিভারির বিপক্ষে তাঁর ত্রুটিগুলি ছিল স্পষ্ট। সেঞ্চুরিয়ান টেস্টের দুই ইনিংসেই বোল্ড হয়ে যান তিনি।
আরও পড়ুন: রোহিতের T20I ক্যারিয়ারে ইতি? ব্রডকাস্টারদের পোস্টারে তেমনই ইঙ্গিত, শুরু জোর জল্পনা
কেএল রাহুল (৮/১০, খুব ভালো): সুনীল গাভাসকর সেঞ্চুরিয়ান টেস্টের প্রথম ইনিংসে কেএল রাহুলের সেঞ্চুরিকে ভারতীয় ক্রিকেটারদের করা সেরা ১০ শতরানের মধ্যে একটি হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন। এটি ছিল সতর্কতা এবং আগ্রাসনের নিখুঁত মিশ্রণ। রাহুল ৬ নম্বর অপরিচিত পজিশনে ব্যাট করছিলেন এবং কন্ডিশন ছিল কঠিন। সর্বোপরি, তিনি দ্রুত গতিতে তাঁর সঙ্গীদের হারাচ্ছিলেন। কিন্তু ডানহাতি ব্যাটার, যাঁর প্রত্যাবর্তন টেস্টে ছিল এটি, সেই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের পাল্টা আঘাত করেন। রাহুল তাঁর পরের দুই ইনিংসে ব্যাট হাতে তেমন কিছু করতে পারেনি, কিন্তু কিপার হিসেবে অসামান্য ছিলেন।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন (৬/১০, গড়পত্তা পারফরম্যান্স): এই সফরে অশ্বিনের খেলার কথা ছিল না। কিন্তু রবীন্দ্র জাদেজার চোটের কারণে প্রথম টেস্টের দলে তিনি জায়গা পেয়ে যান। তিনি ব্যাট হাতে তেমন কিছু করতে পারেননি। বল হাতে অবশ্য তিনি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের সেরাটা দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, দুই টেস্টে ৬৩ জনের মধ্যে একজন স্পিনারের নেওয়া একমাত্র উইকেটটিই তিনি নিয়েছেন। তবে দ্বিতীয় টেস্টে তাঁকে জাদেজার জন্য পথ তৈরি করতে হয়েছিল।
রবীন্দ্র জাদেজা (৪/১০, খারাপ): রবীন্দ্র জাদেজার এই সফরে ব্যাট বা বল হাতে ছাপ ফেলার সুযোগ ছিল, কিন্তু তিনি খুব বেশি কিছু করে উঠতে পারেননি। কেপটাউন টেস্টের প্রথম ইনিংসে লুঙ্গি এনগিডির ডেলিভারিতে দুই বলে শূন্য রানে আউট হন বাঁ-হাতি। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করার দরকার ছিল না তাঁর। টেস্ট ম্যাচে একটি ওভারও করতে পারেননি তিনি।
জসপ্রীত বুমরাহ (৯/১০, দুরন্ত): সিরিজের সেরা খেলোয়াড় এবং সেরা বোলার হয়েছেন বুমরাহ। তিন ইনিংসে ১২ উইকেট নেন তিনি। ডানহাতি পেসার প্রথম টেস্টে এবং কেপটাউনে ভারতের বোলিংয়ের ভার প্রায় একক ভাবে বহন করেছিলেন, দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে তিনি ছয় উইকেট তুলে নিয়েছিলেন।
মহম্মদ সিরাজ (৮/১০, খুব ভালো): সিরাজ প্রথম টেস্টে কিছুটা অসংগতিপূর্ণ ছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে তিনি দুরন্ত পারফরম্যান্স করেছিলেন, টেস্ট ম্যাচের প্রথম ঘন্টায় ছয় উইকেট তুলে নিয়েছিলেন তিনি। যার ফলে মাত্র ৫৫ রানে আউট হয়ে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কেপটাউনে সাত উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হন সিরাজ।
শার্দুল ঠাকুর (৩/১০, খুব খারাপ): ভারতীয় টেস্ট দলের সঙ্গে শার্দুল ঠাকুরের এটাই শেষ সফর হতে পারে। তাঁর বোলিং ফর্ম তলানিতে। তিনি ১৯ ওভারে ১০১ রান দিয়েছিলেন। পুরো সিরিজে প্রতি ওভারে পাঁচের বেশি রান দেওয়া একমাত্র বোলার হন শার্দুল। ব্যাট হাতেও অবস্থা ছিল তথৈবচ। দ্বিতীয় টেস্ট থেকে বাদ পড়েন তিনি।
প্রসিধ কৃষ্ণ (৩/১০, খুব খারাপ): টেস্ট অভিষেক হওয়া প্রসিধ কৃষ্ণকে অনেক উন্নতি করতে হবে, যদি তিনি বুমরাহ এবং সিরাজের আদর্শ বোলিং সঙ্গী হতে চান? চোটের কারণে মহম্মদ শামি ছিটকে গেলে, প্রসিধ কৃষ্ণ সুযোগ পান। তিনি এই সফরে ভারতের তৃতীয় পেসার ছিলেন। কিন্তু তিনি সাফল্য পাননি। দুই টেস্টে মাত্র দু'টি উইকেট নিয়েছেন প্রসিধ।
মুকেশ কুমার (৭/১০, ভালো): প্রসিধের বিপরীতে, দক্ষিণ আফ্রিকায় মুকেশের প্রথম সফরটি ছিল অসাধারণ। প্রথম টেস্টের জন্য বাছাই করা হয়নি মুকেশকে। দ্বিতীয় টেস্টে খেলেন তিনি। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে গত কয়েক মরশুমে মুকেশ যে পরিশ্রম করেছেন, তার ফল পেয়েছেন। তিনি ভালো ভাবে প্রস্তুত হয়েছিলেন। তাঁর লাইন এবং লেন্থ অনেক ভালো ছিল। কেপটাউন টেস্টে তিনি চার উইকেট তুলে নিয়েছিলেন এবং তাঁকে ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছিল।
গম্ভীর-ধোনির আসা যাওয়া, রোহিত-হার্দিকের রেষারেষি, কামিন্স-স্টার্কের জারিজুরি, আইপিএল ২০২৪-এর সব খবর, লাইভ ক্রিকেট স্কোর, আইপিএলের সূচি 2024, সব তথ্য পান এক ক্লিকে। গিল না কোহলি, আইপিএলের অরেঞ্জ ক্যাপ 2024 এবার কার দখলে, আইপিএলের পার্পল ক্যাপ 2024 পরবেন কোন বোলার, নাইটদের পরিসংখ্য়ান , যে কোনও প্লেয়ারের আইপিএল 2024 স্ট্যাটস, আগেরবারের যাবতীয় রেকর্ড জানতে পড়ুন HT Bangla।