দানেশ কানেরিয়া এবং আরফা খানুম শেরওয়ানির ‘যুদ্ধ’ চলছিল। তাতে যোগ দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া। পাকিস্তানের প্রাক্তন তারকাকে তোপ দেগে গৌরব বলেন যে ভারতীয় মুসলিমকে যেন বিব্রত করতে না আসেন কানেরিয়া। পাকিস্তানের প্রাক্তন তারকা স্পিনার হিন্দু হলেও তাঁর কাছে আরফা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। কারণ আরফা হলেন ভারতীয়। আর কোনও ধর্মীয় পরিচয়ের থেকে তাঁর কাছে ভারতীয় পরিচয় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গৌরবের হুঁশিয়ারি, ‘আমাদের কোনও ভারতীয় সহ-নাগরিককে বিব্রত করার মতো ভুল কখনও করবেন না। নাহলে ক্রিকেট বলের মতো আপনাকেও ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে।’
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’-এ (পূর্বতন টুইটার) বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র লেখেন, ‘দীনেশ কানেরিয়া, আপনি যদি আগে নিজের ঘর সামলাতে পারেন, তাহলে ভালো নয়। আমাদের দেশের সমালোচনা করেছেন আরফা। যেটা ভুল। কিন্তু ধর্মের ভিত্তিতে আমাদের সম্পর্ক নির্ভর করে না। বরং আমাদের ভালোবাসার দেশ আমাদের ভারতের উপর আমাদের সম্পর্ক নির্ভর করে থাকে।’
গৌরব আরও বলেন, ‘এমনকী যখন ওঁনার (আরফা) সঙ্গে আমার খুব কম মিল আছে, তাও আমাদের (কানেরিয়া এবং গৌরব) একই ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও আমি একজন ভারতীয় সহ-নাগরিকের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা প্রত্যেক নাগরিকের কাছে তুলে ধরছে যে ধর্মের ভিত্তিতে সম্পর্কের থেকে আমাদের দেশের ভিত্তিতে সম্পর্কের বিষয়টি আরও শক্তিশালী হওয়া উচিত। আমাদের কোনও ভারতীয় সহ-নাগরিককে বিব্রত করার মতো ভুল কখনও করবেন না। নাহলে ক্রিকেট বলের মতো আপনাকেও ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে। জয় হিন্দ।’
আরফা এবং কানেরিয়ার কথার ‘লড়াই’
বিশ্বকাপের সময় মাঠে ভারতীয় সমর্থকদের আচরণ নিয়ে ‘ভারতীয় হিসেবে লজ্জিত বোধ’ করছেন বলে দাবি করেন ভারতীয় সাংবাদিক আরফা। পালটা তাঁকে পাকিস্তানে চলে আসার পরামর্শ দেন কানেরিয়া। তা নিয়ে দু'জনের মধ্যে কথার ‘লড়াই’ শুরু হয়ে যায়। একে অপরকে আক্রমণ-পালটা আক্রমণ শানাতে থাকেন।
১) আরফা: বিশ্বকাপের ম্যাচের সময় অনেক ক্রিকেট ভক্তের জঘন্য আচরণে আমি অত্যন্ত অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছি এবং ভারতীয় হিসেবে লজ্জিত লাগছে। যে খেলাধুলো মানুষকে একসঙ্গে নিয়ে আসে; সেটার প্রতি এরকম সংকীর্ণতা, হীনমন্যতা এবং সেটার সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠতার দৃষ্টিভঙ্গি জুড়ে দেওয়ার বিষয়টি গত এক দশকে মোদী-আরআরএসের তৈরি করা ভারতের প্রতীক স্বরূপ।
২) কানেরিয়া: ভারতীয় হিসেবে লজ্জিত লাগলে আমার দেশ পাকিস্তানে চলে আসুন। আপনার মতো লোকের দরকার নেই ভারত। আমি নিশ্চিত যে খুশি হয়ে অনেকে এই যাত্রার জন্য টাকা দিয়ে দেবেন।
৩) আরফা: আমার উপর অনলাইনে আক্রমণ শুরু করে দিয়েছেন দানিশ কানেরিয়া। টুইটারে ট্রেন্ড হচ্ছে আমার। বিভিন্ন ধর্মের মানুষরা যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারকে সমর্থন করেন, তিনি যে সাম্প্রদায়িক হাস্যস্পদে পরিণত হয়েছেন। আর পাকিস্তান বা বিশ্বের অন্য কোনও জায়গায় গিয়ে থাকার জন্য আমি আমার দেশ ছেড়ে যাব না।
৪) কানেরিয়া: গণহত্যা, উন্মত্ত জনতা, সাম্প্রদায়িক, ধর্মীয়, ট্রোল, আক্রমণ আছড়ে ফেলে হচ্ছে - আমার জন্য এরকম প্ররোচনামূলক শব্দ ব্যবহার করবেন না। আমার টুইটে কি আমি সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে বলেছি? যদি আপনার পাকিস্তানকে ভালো না লাগে, তাহলে বলুন যে দানিশ, আমি পাকিস্তানকে পছন্দ করি না। ব্যস! হয়ে যেত।
৫) আরফা: হ্যাঁ, আপনার টুইটের প্রতিটি শব্দটা সাম্প্রদায়িক। পাকিস্তানি হিন্দুকে ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার মতো একজন ভারতীয় মুসলিমকে পাকিস্তানে চলে যান বলাটাও সাম্প্রদায়িক এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরে। এটার মাধ্যমে সংখ্যালঘু মানুষদের বলা হচ্ছে যে আপনারা এখানের লোক নন বা যতদিন না সংখ্যালঘুর ধর্ম গ্রহণ করছেন, ততদিন এখানকার লোক হয়ে উঠতে পারবেন না। বুঝতে পারলেন?
৬) কানেরিয়া: আমি ধর্মান্তকরণ, সংখ্যাগরিষ্ঠতা, হিন্দু, ভারতীয় মুসলিম বা ধর্ম নিয়ে কথা বলছি না। আমি শুধু আপনার আনুগত্য নিয়ে কথা বলছি। বুঝেছেন? এই কথার লড়াইটা এখানেই শেষ করা হোক। শুধুমাত্র একটি টুইট দেখান, যেখানে আপনি ভারত ও ভারতের সংস্কৃতির প্রশংসা করেছেন।
সেই লড়াইয়ের মধ্যেই পালটা কানেরিয়াকে আক্রমণ শানিয়েছেন গৌরব। একইসঙ্গে আরফাকেও তোপ দেগেছেন। তিনি বলেন, ‘তাঁর মতো মানুষ এতটাই বিষধর যে পাকিস্তান থেকে আমন্ত্রণ পাচ্ছেন। এমনকী পাকিস্তানিরাও বলছেন যে এরকম বিষধর লোকজন ভারতকে ভালোবাসেন না।’