বিশ্বকাপের আগেই পাকিস্তান ক্রিকেটে তীব্র ডামাডোল। এশিয়া কাপের সুপার ফোর পর্ব থেকে বাবর আজমের ছিটকে যাওয়ার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় তীব্র সমালোচনা। এ সবরে মধ্যে আবার পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক মহম্মদ হাফিজ বৃহস্পতিবার পিসিবির ক্রিকেট টেকনিক্যাল কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন।
আসলে বৃহস্পতিবার এশিয়া কাপে বাবরদের খারাপ পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন করার জন্য একটি রিভিউ বৈঠক ডাকা হয়েছিল। তার পরেই হাফিজের এই সিদ্ধান্ত। অক্টোবরে শুরু হতে চলা বিশ্বকাপের ঠিক আগে হাফিজের এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত আলোড়ন ফেলেছে। খুব যুক্তিসঙ্গত কারণে বিশ্বকাপের জন্য পাকিস্তানের প্রস্তুতির বর্তমান অবস্থা নিয়ে আর বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
গত কয়েক মাসে বেশ রদ বদলের মধ্য দিয়েই গিয়েছে পিসিবি। গত মাসে প্রাক্তন তিন অধিনায়ক—মিসবাহ উল হক, ইনজামাম উল হক এবং হাফিজকে নিয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে পিসিবি। তারা জানিয়েছিল, এই কমিটি ঘরোয়া কাঠামো, ক্রীড়া সূচি, প্লেয়িং কন্ডিশন, জাতীয় নির্বাচক কমিটির নিয়োগ, জাতীয় দলের কোচদের নিয়োগের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ও ঘরোয়া চুক্তি, আম্পায়ার, রেফারি ও কিউরেটরদের উন্নতি সম্পর্কে পরামর্শ দেবে।
আরও পড়ুন: ধোনির আত্মত্যাগকে বাহবা ঘোর বিরোধী গম্ভীরের, ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেন শ্রীসন্ত
তবে এর ক'দিন পরই এ কমিটির সদস্য ইনজামামকে প্রধান নির্বাচক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ফলে কমিটি থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। শুরুতে বলা হয়েছিল, প্রধান নির্বাচক নিয়োগ করার কাজটিও করবে ওই টেকনিক্যাল কমিটি। তবে পরে পিসিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, প্রধান নির্বাচক যেহেতু পিসিবি চেয়ারম্যান জাকা আশরাফ নিয়োগ করছেন, তাই ওই কমিটির আর সেটি করার প্রয়োজন নেই। টেকনিক্যাল কমিটিতে ইনজামামের বিকল্প দ্রুতই ঘোষণা করার কথাও ছিল পিসিবির। তবে সেটি করা হয়নি। উল্টো এবার সরে গেলেন হাফিজও।
ঠিক কী কারণে সরে গেলেন, সেটি খোলাসা করেননি হাফিজ। শুধু তাঁর পদত্যাগ করার কথা নিজের অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে লিখেছেন হাফিজ। সেখানে তিনি তাঁর বক্তব্যে লিখেছেন, ‘আমি পাকিস্তান ক্রিকেটের টেকনিক্যাল কমিটি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সাম্মানিক সদস্য হিসেবে কাজ করেছি এখানে। জনাব জাকা আশরাফকে এই সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ দিতে চাই। যখনই পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য কোনও পরামর্শ জাকা আশরাফ চাইবেন, আমি প্রস্তুত। পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য সব সময়ের মতোই শুভকামনা।’
বৃহস্পতিবারের সভায় উপস্থিত ছিলেন পিসিবি চেয়ারম্যান জাকা আশরাফ, অধিনায়ক বাবর আজম, প্রধান কোচ গ্রান্ট ব্র্যাডবার্ন, চিফ অপারেটিং অফিসার সলমান নাসের, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রধান উসমান ওয়াহলা এবং প্রাক্তন অধিনায়ক মিসবাহ উল হক। উল্লেখযোগ্য ভাবে, প্রধান নির্বাচক ইনজামাম উল হক সভায় উপস্থিত ছিলেন না। এর পর আবার হাফিজের পদত্যাগের ঘোষণায় যেন আগুনে ঘি পড়েছে।
দুই দিনের অধিবেশন চলাকালীন বিশ্বকাপের দলে দু'টি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। রিপোর্ট অনুসারে, চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়া নাসিম শাহ এবং অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফের পরিবর্তে ফাস্ট বোলার জামান খান এবং স্পিনার আব্রার আহমেদকে দলে নেওয়া কথা ভাব হচ্ছিল। পিটিআই-এর মতে, ইনজামাম ইচ্ছে করেই মিটিং এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কারণ তিনি বিশ্বকাপের আগে এই ধরনের সভার পক্ষে ছিলেন না।
সূত্রটি পিটিআই-কে বলেছে, ‘ইনজামাম একজন অত্যন্ত বিচক্ষণ লোক। এবং তিনি চেয়ারম্যান জাকা আশরাফের এই ধরনের সভা ডাকার পক্ষে একমত ছিলেন না। এবং চাননি মিসবাহ, হাফিজ এবং অন্যান্য বোর্ড কর্মকর্তাদের অস্বস্তিকর প্রশ্নের সম্মুখিন হোন বাবর ও ব্র্যাডবার্ন।’
সূত্রটি সঙ্গে আরও যোগ করেছেন, ‘ইনজামাম নিজে একজন প্রাক্তন অধিনায়ক এবং শীর্ষ ক্রিকেটার ছিলেন, তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, তিনি এই ধরনের পর্যালোচনা প্রক্রিয়ায় খুশি নন। কারণ এই সময়ে দল নিয়ে এই ধরনের কাটাছেঁড়া এবং তাদের ক্ষমতার উপর অবিশ্বাস দেখানোর পরিবর্তে উৎসাহিত করা দরকার।’