সোমবার পুনের এমসিএ স্টেডিয়ামে চলতি বিশ্বকাপের শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তানের মধ্য ম্যাচ ছিল। সেই ম্যাচ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন একজন খুদে প্লেয়ার এসকর্ট অজ্ঞান হয়ে পড়ে। অজ্ঞান হয়ে যাওয়া শিশুটি শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসের সামনে দাঁড়িয়েছিল। কুশল মেন্ডিস শিশুটিকে অসুস্থ হতে দেখে, মাটিতে পড়ে যাওয়ার আগেই দ্রুত তাকে ধরে ফেলেন।
মেন্ডিসকে তখন আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের একজন সাপোর্ট স্টাফ সদস্য সাহায্য করেছিলেন, যিনি শিশুটিকে পরীক্ষা করার জন্য ছুটে আসেন এবং তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। ঘটনার একটি ভিডিয়ো সেই সময়ে থেকেই নেটপাড়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। এবং ভক্তরা পরিস্থিতির প্রতি দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য মেন্ডিসকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। দিনের বেলা পুনের তাপমাত্রা ৩০-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। খুব বেশি গরম নাও হলেও, কিছুটা অস্বস্তি তৈরি করার মতোই ছিল।
জাতীয় সঙ্গীতের আগে আফগানিস্তান টস জিতে শিশিরের কারণে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। এবং তাদের সিদ্ধান্ত যে সঠিক তা ম্যাচের পরেই প্রমাণিত হয়ে যায়। এদিন পরে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কাকে সাত উইকেটে হারিয়ে সেমিফাইনালে যাওয়ার আশাও বাঁচিয়ে রেখেছে আফগানরা। বরং লঙ্কা ব্রিগেডের লড়াই তারা কঠিন করে তুলেছে।
আফগানিস্তানের অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদি শ্রীলঙ্কাকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠালে, ফজলহক ফারুকি, মুজিব উর রহমানদের দাপটে কেঁপে যায় তাদের ব্যাটিং অর্ডার। লঙ্কা ব্রিগেডের কোনও প্লেয়ারই এদিন ৫০ রানও করতে পারেননি। ওপেন করতে নেমে দিমুথ করুণারত্নে ১৫ (২২ বলে) করে তাড়াতাড়ি সাজঘর ফিরে গেলে, হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন আর এক ওপেনার পাথুম নিশঙ্কা। অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস তাঁকে সঙ্গত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই জুটিও বেশীক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি। ৬২ রানের পার্টারশিপ করার পর সাজঘরে ফেরেন পাথুম। ৫টি চারের হাত ধরে ৬০ বলে ৪৬ রান করে আউট হন তিনি। আফগানিস্তানের হয়ে ১০ ওভার বল করে ৩৪ রান দিয়ে চার উইকেটে তুলে নেন ফজলহক ফারুকি। মুজিব নেন ২ উইকেট। একটি করে উইকেট নিয়েছেন আসমতউল্লাহ ওমরজাই এবং রশিদ খান।
এর পর কুশল মেন্ডিস এবং সাদিরা সমরাবিক্রমে পার্টনারশিপ করার চেষ্টা করলেও, খুব একটা সফল হননি। দলের ১৩৪ এবং ১৩৯ রানের মাথায় পরপর ফিরে যান কুশল এবং সাদিরা। ৫০ বলে ৩৯ রান করেন সাদিরা। আর ৪০ বলে ৩৬ রান করেন সাদিরা সমরাবিক্রমে। এছাড়া ২৮ বলে ২২ রান করেন চরিথ আসালঙ্কা। ২৬ বলে ২৩ করেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। নয়ে নেমে মাহিশ থিকশানা ৩১ বলে ২৯ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। তবে ৪৯.৩ ওভারে ২৪১ রানেই অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
আরও পড়ুন: পাকিস্তান ক্রিকেটে বিতর্ক আরও বাড়িয়ে প্রধান নির্বাচকের পদ থেকে পদত্যাগ করলেন ইনজামাম
রান তাড়া করতে নেমে অবশ্য শুরুতেই বড় ধাক্কা খেয়েছিল আফগানিস্তান। দলের এক রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় আফগানিস্তান। রহমানউল্লাহ গুরবাজ শূন্য করেই সাজঘরে ফেরেন। কিন্তু এর পর হাল ধরার চেষ্টা করেন ইব্রাহিম জাদরান এবং রহমত শাহ। তাঁরা ৭৩ রানের পার্টনাপশিপও গড়েন। ৫৭ বলে ৩৯ রানে আউট হয়ে যান জাদরান। কিন্তু তার পরেও কাবু করা যায়নি আফগানিস্তানকে। তিন থেকে পাঁচে ব্যাট করতে নামা- তিন ব্যাটারই হাফসেঞ্চুরি হাঁকান। ৭টি চারের সৌজন্যে ৭৪ বলে ৬২ করেন রহমত। তিনি আউট হয়ে ফিরে গেলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন হাশমতউল্লাহ শাহিদি এবং ওমরজাই। হাশমতউল্লাহ শাহিদি করেন ৭৪ বলে ৫৮ রান। মারেন ২টি চার, একটি ছয়। আর ওমরজাই ৬৩ বলে ৭৩ রানের দুরন্ত একটি ইনিংস খেলেন। তাঁর ইনিংস সাজানো ছিল ৬টি চার এবং তিনটি ছক্কায়। ৪৫.২ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২৪২ রান করে ফেলে আফগানিস্তান। ২৮ বল বাকি থাকতে সাত উইকেটে তারা সহজেই ম্যাচ জিতে যায়। শ্রীলঙ্কার হয়ে ২টি উইকেট নিয়েছেন দিলশান মদুশঙ্কা। এক উইকেট নিয়েছেন কাসুন রজিথা।