ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলায় জেলায় এখন ঘাসফুল ঝড়। গ্রামবাংলার মাটি এখন সবুজ আবিরে ভরে গিয়েছে। কারণ তৃণমূল কংগ্রেস সর্বত্র ভাল ফল করেছে। কিন্তু এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে যাঁদের প্রাণ গিয়েছে হিংসায় তাঁদের পরিবারের কী হবে? এই প্রশ্নও এখন ঘুরপাক খাচ্ছে গ্রামবাংলার বেশ কয়েকটি ঘরে। তবে প্রাণ ফিরিয়ে দিতে না পারলেও নিহতের পরিবারগুলি যাতে ভেসে না যায় তাই পাশে দাঁড়ালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে বিঁধেছেন বিজেপিকেও।
এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মোট ১৯ জন মারা গিয়েছেন। তার মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীই সবচেয়ে বেশি। প্রায় ১১ জন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী মারা গিয়েছেন। বাকি সব বিরোধী দলের। এমন অবস্থায় আজ, চোট লাগা পা নিয়ে নবান্নে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেখান থেকেই ঘোষণা করেন, ‘ভেদাভেদ না করে নিহত ১৯ জনের পরিবারকে হোমগার্ডের চাকরি ও আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে।’ পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশের পর থেকেই রাজ্যের নানা প্রান্তে অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। গুলি–বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। একইসঙ্গে তার জেরে প্রাণও গিয়েছে।
এদিকে নির্বাচন মিটতেই ভোটের হিংসায় মৃতদের পরিবারদের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘দলমত নির্বিশেষে মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করা হবে। সব মৃত্যুই দুঃখজনক। ভোট ঘোষণার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আমি শুধু নিজের দলের কথা বলছি না। তবে এই ১৯ জনের মধ্যে আমাদের দলেরই ১০–১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।’ একইসঙ্গে আজ, বুধবার মৃতদের পরিবারকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়া মৃতদের পরিবারের একজনকে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে আজ, বুধবারই প্রথম নবান্নে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পায়ে চোট লাগার পর ১৫ দিন পর এলেন তিনি। আর বিকেলে নবান্নের সভাঘরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরে মোট ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তার মধ্যে বেশিরভাগই আমাদের কর্মী। হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিম বর্ধমান, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দক্ষিণ দিনাজপুর, বীরভূম–সহ বেশিরভাগ জেলাতেই কোনও অশান্তি–হিংসা হয়নি। পূর্ব বর্ধমানে একজন হৃদরোগে মারা গিয়েছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং মুর্শিদাবাদে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে। সব মৃত্যুই দুঃখজনক। যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং একজনকে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হবে। মানবিক কারণেই নিহতদের পাশে দাঁড়াচ্ছি আমরা।’
আরও পড়ুন: রাজ্যের সব জেলা পরিষদে তৃণমূলের জয়জয়কার, ১৩টি জেলায় বিজেপি পেল শূন্য
আর কী বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী? ভাঙড়ের অশান্তি–হিংসা নিয়ে মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘ভাঙড়ে গত ২৫–৩০ বছর ধরেই ঝামেলা চলছে। বাইরে থেকে লোক এনে ঝামেলা পাকানো হয়েছে। পুলিশের উপর আক্রমণ হয়েছে। ভাঙড়ে আরাবুল আদতে হারেনি। কিন্তু দেখানো হয়েছে আরাবুল হেরেছে। সব জেনেও তৃণমূল কিছু বলেনি। সব মৃতদের পরিবারদের প্রতি আমার সমবেদনা আছে। আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। ৬০ হাজারের বেশি বুথে ভোট হয়েছে। তার মধ্যে ৬০টি বুথে বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। আমি দুঃখিত রাম–বাম–শ্যাম ও আর একজন জোট বেঁধেছিল। প্ল্যান করে করেছে। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিদ্বেষমূলক আচরণ করছে। তারপরও এত মিথ্যে বলছে! ত্রিপুরায় ৯৩% আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হয়নি। আমরা আক্রান্ত হয়েছিলাম। অসমে এনআরসি নিয়ে আমাদের টিমের ওপর হামলা হয়েছে। মণিপুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমরা দল পাঠাচ্ছি। বাংলার বদনাম করতে আবার ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম পাঠিয়েছে।’