এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে নানা কারসাজি করেও পালে হাওয়া টানতে পারেনি বিজেপি। এমনকী নিজেদের গড় বা খাসতালুক বলে পরিচিত জেলাতেও পরাজয়ের মুখ দেখেছে বিজেপি। আর এখন সেই লজ্জা ঢাকতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করা হয়েছে। যে উত্তরবঙ্গকে ভাগ করে পৃথক শাসন চালাতে চেয়েছিল বঙ্গ–বিজেপির নেতারা সেখানেও পরাজয়ের অর্ধচন্দ্র খেতে হয়েছে। এমনকী বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দত্তক নেওয়া গ্রামও তাঁকে ত্যাজ্যপুত্র করেছে। রাজ্য–রাজনীতির অলিন্দে এখন এটাই চর্চিত হচ্ছে।
এদিকে উত্তরবঙ্গের শক্তিশালী গড় বলে পরিচিত জেলাগুলিতেও গোহারা হয়েছে বিজেপি। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহারে পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছে বিজেপিকে। তাই গতকাল শুক্রবার অমিত শাহ জরুরি তলব করেছিলেন সুকান্ত মজুমদারকে। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, অগস্ট মাসে বাংলায় এসে সাংগঠনিক হাল–হকিকত সরেজমিনে দেখবেন। কারণ দিলীপ ঘোষ, শান্তনু ঠাকুররা পর্যন্ত হেরেছেন নিজেদের বুথে। পূর্ব মেদিনীপুরে যে হুঙ্কার ছেড়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী ফলাফলের পর তা চুপসে গিয়েছে। অগত্যা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম হাজির। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দত্তক নেওয়া চকরাম গ্রামেও হেরেছে গেরুয়া শিবির। তাই সুকান্তকে ওই গ্রামের দিকে পা না বাড়ানোর নিদান দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। গ্রামবাসীরা বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে ‘ত্যাজ্যপুত্র’ করেছে বলেও কটাক্ষ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এখান থেকে জয়ী হয়েছিলেন। আর এই বালুরঘাট ব্লকের ভাটপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গ্রামের নাম চকরাম। আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামে আগে তিনি সদস্য ছিলেন বিজেপির। এই গ্রামকে দত্তক নিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তারপর গ্রামের পথে কিছু সৌরবাতি লাগিয়েছিলেন তিনি সাংসদ তহবিলের টাকায়। তবে গ্রামের সার্বিক উন্নয়ন বলতে যা বোঝায় তার কিছুই হয়নি। রাস্তাঘাট, পানীয় জল থেকে শুরু করে ন্যূনতম পরিষেবার ব্যবস্থা হয়নি। তাই সাংসদ এবং তাঁর দলের উপর বড় ক্ষোভ জন্মেছিল। আর পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই গ্রাম সংসদেই শতাধিক ভোটে হেরেছে বিজেপি। চকরাম সংসদে মোট ভোটার সংখ্যা ১০৭৩ জন। সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুধা দেবনাথ পেয়েছেন ৪৮৯ ভোট। বিজেপি প্রার্থী অষ্টমী দেবনাথ পেয়েছেন ৩৭৭ ভোট। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দত্তক নেওয়া গ্রামে এটাই পরাজয়ের ছবি।
আরও পড়ুন: অনুব্রত মণ্ডলকে জেরা করতে চায় সিবিআই, তিহাড়ে গিয়ে কী জিজ্ঞাসা করবেন?
ঠিক কী বলছে তৃণমূল? এই পরাজয়ের পর রটে গিয়েছে সুকান্ত মজুমদারকে ত্যাজ্যপুত্র করেছে চকরাম গ্রাম। আর এই বিষয়ে জেলা মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি স্নেহলতা হেমব্রম বলেন, ‘দত্তক নিলেও সুকান্ত মজুমদার গ্রামবাসীদের নিরাশ করেছেন। কিন্ত তাঁকে ওই এলাকায় খুব বেশি দেখা যায়নি। কয়েকটি সোলার লাইট ছাড়া আর কিছু করেননি। সুকান্তবাবু স্বঘোষিতভাবে দত্তক নিয়ে গ্রামের মানুষের জন্য কোনও কাজ করেননি। তাই তাঁকে গ্রামের মানুষ ত্যাজ্যপুত্র করেছেন নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে।’ যদিও বিজেপি জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী বলেন, ‘এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে ছাপ্পা হয়েছিল।’