বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের গ্রেফতারির ছক কষেছিলেন এনআইএ কর্তা। এমনই অভিযোগ তুলল পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল। রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ অভিযোগ করেন যে গত ২৬ মার্চ জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) সুপার ধনরাম সিংয়ের নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে যান বিজেপির নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি। কোন কোন এলাকায় কোন কোন তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার করতে হবে, সেটার তালিকা তুলে দেন। সেই তালিকা অনুযায়ী, এনআইএ ঠিক করে যে ওইসব জায়গায় তল্লাশি চালানো হবে। সেইসঙ্গে সেদিনের বৈঠকের মধ্যে একটি সাদা প্যাকেটেরও হাতবদল হয়েছে বলে দাবি করেছেন কুণাল। আর ওই সাদা প্যাকেটের মধ্যে টাকা ছিল কিনা, তা পুলিশের অবিলম্বে তদন্ত করে দেখা উচিত বলে দাবি তুলেছেন তৃণমূল নেতা। যদিও বিষয়টি নিয়ে আপাতত এনআইএ কর্তা বা জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। মুখ খোলেনি বিজেপিও।
রবিবার তৃণমূল যে অভিযোগ করেছে, সেটা পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে এনআইএয়ের উপর হামলার প্রেক্ষিতে করা হয়েছে। শনিবার কাকভোরে ভূপতিনগরে হামলার মুখে পড়েন এনআইএয়ের আধিকারিকরা। ২০২২ সালের বিস্ফোরণ মামলায় দুই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করেন তাঁরা। সেইসময় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা মারমুখী হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, বাঁশ, লাঠি, ইট নিয়ে এনআইএয়ের আধিকারিকদের উপর হামলা চালানো হয়। আহত হয়েছেন গাড়ির চালক এবং জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার এক আধিকারিক।
তৃণমূল দাবি করেছে, ৬ এপ্রিল ভূপতিনগরে যে এনআইএ অভিযান চালিয়েছে, সেটার ‘ষড়যন্ত্র’ তৈরি হয়েছিল ২৬ মার্চ। সেদিন জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার সুপার ধনরামের নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে (একটি নথি দেখিয়ে দাবি করেন যে ফ্ল্যাটের লিজ এগ্রিমেন্টে ডিআর সিংয়ের স্বাক্ষর আছে) যান জিতেন্দ্র। সেইসঙ্গে ভিজিটর্স রেজিস্টারের নথি (সত্যতা যাচাই করেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা) দেখিয়ে কুণাল দাবি করেছেন, সেদিন সন্ধ্যা ৬ টা ৩০ মিনিটে ফ্ল্যাটে ঢুকেছিলেন বিজেপি নেতা। বেরিয়েছিলেন সন্ধ্যা ৭ টা ২২ মিনিটে। ভিজিটর্স রেজিস্টারে তিনি ক্যামাক স্ট্রিটের যে ঠিকানা দিয়েছেন, তা আদতে তাঁর মেয়ের বাড়ি বলে দাবি করেছেন কুণাল।
তিনি আরও দাবি করেছেন, ওই ৫২ মিনিটে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের কোন কোন তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার করতে হবে, সেটার তালিকা তুলে দিয়েছিলেন জিতেন্দ্র। সেইসঙ্গে একটি প্যাকেটেরও হস্তান্তর হয়েছে বলে দাবি করেছেন কুণাল। তৃণমূল নেতা প্রশ্ন তুলেছেন যে ওই প্যাকেটে কি টাকা ছিল? সেটাই ছিল কিনা, তা তদন্ত করে দেখা উচিত পুলিশের। তাঁকে অবিলম্বে গ্রেফতারিরও দাবি তুলেছেন কুণাল। তাঁর প্রশ্ন, বিজেপি নেতা যদি ডেপুটেশন জমা দিতে যেতেন, তাহলে তো এনআইএয়ের অফিসে যাবেন অথবা ইমেলের মাধ্যমে ডেপুটেশন জমা দেবেন? সন্ধ্যায় কেন তাঁর বাড়িতে যাবেন বিজেপি নেতা? আদর্শ আচরণবিধি কার্যকর থাকা সত্ত্বেও ‘লুকিয়ে’ কেন বৈঠক করা হল?
পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তৃণমূল নেতা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে কেউ যদি অস্বীকার করেন, তাহলে ওই ফ্ল্যাটে যে জিতেন্দ্র ঢুকেছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভিডিয়ো প্রকাশ করে দেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে কমিশনের সঙ্গে দেখা করবেন তৃণমূল নেতারা। আর ধনরামকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানানো হবে। সেইসঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, 'চৈত্র মাস চলছে। শুধু এনআইএটা দিলাম। বৈশাখ পড়বে। আরও একটি এজেন্সির আরও দুই অফিসারের গল্প সামনে আনব।'