ইভিএম-এর সাথে ভিভিপ্যাটের ১০০ শতাংশ ভোট মিলিয়ে দেখার আর্জি জানিয়ে জমা পড়া সব মামলা খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তর ডিভিশন বেঞ্চ। উল্লেখ্য, ভিভিপ্যাটের ১০০ শতাংশ ভোট মিলিয়ে দেখা ছাড়াও ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন এবং ১০০ শতাংশ ভিভিপ্যাট স্লিপ জমা দেওয়ার অনুমতি চেয়েও মামলা দায়ের হয়েছিল শীর্ষ আদালতে। সেই সব মামলাও আজ খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
এদিকে আজ মামলার রায় শোনানোর সময় বেশ কিছু নির্দেশ দেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। তিনি বলেন, 'ভিভিপ্যাটের প্রতীক লোডিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে প্রতীক লোডিং ইউনিটগুলি সিল করা হবে। সিল করা সেই বাক্স ৪৫ দিনের জন্য স্ট্রংরুমে রাখা হবে। পরে এর যাচাইকরণের সময় সকল প্রার্থীরা সেখানে উপস্থিত থাকতে পারেন। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সেই ইউনিটের ডেটার সত্যতা যাচাই করবেন। সেই ইউনিটের মেমোরি চেক করার দায়িত্বে থাকবেন ইঞ্জিনিয়াররা। ইভিএম-এ যদি কারচুপি হয়ে থাকে এবং তা ভেরিফিকেশনের সময় ধরা পড়ে, তাহলে সেই প্রক্রিয়ায় খরচ হওয়া অর্থ প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে।'
এদিকে এই রায়দানের সময় বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তর পর্যবেক্ষণ, 'যদিও ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একটি সিস্টেমকে অন্ধভাবে সন্দেহ করলে তা নিয়ে সংশয় জন্ম নিতে পারে। তাই এইসব ক্ষেত্রে অর্থপূর্ণ পর্যালোচনা প্রয়োজন... সেটা বিচার বিভাগ, আইনসভা যেখানেই হোক না কেন। সকল স্তম্ভের মধ্যে সম্প্রীতি ও আস্থা বজায় রাখে গণতন্ত্র। বিশ্বাস ও সহযোগিতার সংস্কৃতি লালন করেই আমরা আমাদের গণতন্ত্রের কণ্ঠকে শক্তিশালী করতে পারি।'
এর আগে গত ২৪ এপ্রিল এই মামলা সংক্রান্ত কিছু কিছু বিষয়ে কমিশনের থেকে জানতে চেয়েছিল শীর্ষ আদালত। এই আবহে দুপুর ২টোর সময় আদালতের সামনে হাজির হতে বলা হয়েছিল কমিশনের আধিকারিকদের। জানা যায়, বিচারপতিরা নির্বাচনী আধিকারিকের থেকে টেকনিক্যাল কিছু বিষয়ে জানতে চান। সেই সব বিষয়ে জানার পর মামলার রায়দান স্থগিত রাখা হয়েছিল সেদিন। লাইভ ল'র রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মামলায় সেদিন শীর্ষ আদালত পর্যবেক্ষণে বলে, ‘আমরা নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমরা কীভাবে ইসিআই-এর মতো অন্য একটি সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করতে পারি? সন্দেহের ভিত্তিতে নির্দেশনা জারি করা যাবে না।’
এদিকে মামলাকারী অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মসের বক্তব্য, প্রতিটি বিধানসভায় ২০০টি ভিভিপ্যাট মেশিন থাকলেও ৫টির বেশি গণনা হয় না। তাদের দাবি ছিল, জালিয়াতির সম্ভাবনা রুখতে ভিভিপ্যাট স্লিপ সংগ্রহ করে ব্যালট বাক্সে ফেলার সুযোগ দেওয়া উচিত ভোটারদের। এদিকে ইউরোপে ব্যালটে ভোট হওয়ার উদাহরণ তুলে ধরা হলে বিচারপতি দীপঙ্কক দত্ত বলেছিলেন, 'একটা ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করবেন না। এমন উদাহরণও দেবেন না। ইউরোপের উদাহরণ এখানে কাজ করে না।' বেঞ্চের অপর বিচারপতি জাস্টিস সঞ্জীব খান্না বলেন, 'ভারতে ভোটারের সংখ্যা ৯৭ কোটি। ব্যালট জমানায় কী ঘটত, সেটা আমরা সবাই জানি। আপনি ভুলে যেতে পারেন, কিন্তু আমরা ভুলিনি।'