এক সময়ে বিজু জনতা দলের হাত ধরেই ওড়িশায় নিজেদের প্রসার ঘটিয়েছিল বিজেপি। তবে অটল জমানার অবসানের পর এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন নবীন পট্টনায়েক। এরপর বিগত কয়েক বছরে ওড়িশার প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠেছিল বিজেপি। ২০১৯ সালে ওড়িশায় একই সঙ্গে হয়েছিল লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন। সেই সময় লোকসভা নির্বাচনে নবীনের দলকে কড়া টক্কড় দিয়েছিল পদ্ম শিবির। তবে বিধানসভায় বিজেডির থেকে বহু পিছনে ছিল বিজেপি। তবে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের তকমা পেয়েছিল গেরুয়া শিবিরই। এরই মাঝে বিজেডি ভাঙিয়ে নিজেদের দল আরও শক্তিশালী করেছিল বিজেপি। তবে গতবছর থেকে নবীন পট্টনায়েকের 'সুরে' পরিবর্তনের তাল শোনা যাচ্ছিল। মোদী বন্দনায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী। এরপর বিগত কয়েক সপ্তাহে সরকারি সভাতেও ধরা পড়েছে মোদী-নবীন রসায়ন। এই আবহে এবার জানা গেল ওড়িশায় জোট গঠন নিয়ে আলোচনা করছে বিজেপি এবং বিজেডি।
এক সময় তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ার লক্ষ্যে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়ে নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গে দেখা করে এসেছিলেন ওড়িশায়। তবে তৃতীয় ফ্রন্ট, বিরোধী ইন্ডিয়া ব্লক, কোনওটাতেই যোগ দেননি নবীন। উলটে কয়েকদিন আগেই রাজ্যসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে সমর্থন করেছিল বিজু জনতা দল। এমনিতে বিজু জনতা দলকে বিজেপি ঘনিষ্ঠ হিসেবেই চিহ্নিত করা হয় দিল্লিতে। তবে ওড়িশার রাজ্য রাজনীতিতে এই দুই দলই একে অপরের প্রতিপক্ষ। গত নির্বাচনে একে অপরের বিরুদ্ধে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছিল দুই দল। তবে সেই প্রতিপক্ষকেই কয়েকদিন আগেই নিজের 'বন্ধু' হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন মোদী। আর প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে শোনা গিয়েছিল ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীকে। তখন থেকেই একটা জল্পনা তৈরি হয়েছিল। আর রিপোর্টে দাবি করা হচ্ছে, সেই জল্পনা বাস্তবায়িত করতে দুই দল আলোচনার টেবিলে বসেছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, বুধবার বিজেপি এবং বিজেডি নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। আসন্ন লোকসভা ভোটের জন্য আসন বণ্টনের জন্যই এই বৈঠকগুলি হয় বলে জানা গিয়েছে। এর আগে নিজের দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ভুবনেশ্বরে বৈঠক করেছিলেন নবীন পট্টনায়েক। সেই সময়েই দিল্লিতে বিজেপি নেতারাও বৈঠক করেন ওড়িশা নিয়ে। জানা যাচ্ছে, বিধানসভা নির্বাচনের ১৪৭টি আসন এবং লোকসভায় ওড়িশার ২১টি আসন ভাগাভাগি নিয়ে দুই দলের আলোচনা শুরু হয় এরপরে। এদিকে জানা যাচ্ছে, ওড়িশার ২১টি আসনের মধ্যে ১৫টিতেও বিজেপি লড়াই করতে চাইছে। গতবার বিজেপি ৮টি আসন জিতেছিল এই রাজ্যে। আর বিজেডি জিতেছিল ১২টি আসনে। এদিকে ১৪৭টি বিধানসভা আসনের মধ্যে গতবার বিজেডি জিতেছিল ১১২টি আসনে। উল্লেখ্য, গতবার একই সঙ্গে হয়েছিল ওড়িশার বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচন। এবারও সেটাই হবে সেই রাজ্যে। অবশ্য জানা যাচ্ছে, আলোচনা শুরু হলেও এখনও কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। দুই দলই জোট নিয়ে নিজেদের মতামত আদানপ্রদান করেছে বলে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, নবীনের বাবা বিজু পট্টনায়েক এককালে ছিলেন গান্ধীদের খুবই ঘনিষ্ঠ। জওহরলাল নেহরু থেকে ইন্দিরা গান্ধীর সময়কালে ছিলেন কংগ্রেসে। পরে ইন্দিরার সঙ্গে মতবিরোধের জেরে কংগ্রেস ছেড়েছিলেন। দীর্ঘদিন জনতা দলে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে নবীন পট্টনায়েক গঠন করেছিলেন বিজু জনতা দল বা বিজেডি। ১৯৯৭ সালে দল ঘটনের পর থেকেই বিজেপির সঙ্গে ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠতা। অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়েছিলেন নবীন পট্টনায়েক। পরে ২০০০ সালে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধেই ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী হন। তবে ২০০৯ সালে বিজেপির সঙ্গ ছেড়েছিলেন নবীন। এরপর থেকে একলা চলেই ওড়িশার ক্ষমতার রাশ নিজের হাতে রেখেছিলেন। এমনকী বিরোধী রাজৈতিক পরিসরে তাঁর গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছিল। ইন্ডিয়া ব্লক গঠনের আগে যখন তৃতীয় ফ্রন্টের ভাবনা সামনে এসেছিল, তখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়ে দেখা করেছিলেন নবীনের সঙ্গে। তবে তারপরই নবীনের সুর পালটে যায়। মোদী স্তুতি শোনা যায় তাঁর গলায়। আর এবার দুই দল জোট গড়ার দিকে এগোচ্ছে। ২০১৯ সালে লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়লেও গত ৫ বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক বিলের পক্ষেই বিজেডি সাংসদরা ভোট দিয়েছেন সংসদে। এই আবহে সরাসরি এনডিএ-তে না থাকলেও দিল্লির রাজনীতিতে এমনিতেই বিজেপির 'বন্ধু' হিসেবে পরিচিত বিজেডি। তবে সেই রাজ্যে গিয়ে নবীনের সঙ্গে মোদীর 'ব্রোম্যান্স' নজর কেড়েছে অনেকেরই। সেই রয়াসনের হাত ধরেই পুরনো সম্পর্কে ফিরতে পারেন নবীন পট্টনায়েক।