সৌমিত্র-সুজাতা। গত লোকসভা নির্বাচনেও একেবারে একই শব্দবন্ধে এই দুটি নাম উচ্চারিত হত। তবে এবার পরিস্থিতিটা অনেকটাই ভিন্ন। দুজনেই দুই শিবিরের প্রার্থী। প্রাক্তন স্বামী তথা বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁয়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন সুজাতা মণ্ডল। প্রচার চলছে জোরকদমে। ইন্দাসে যাওয়ার পথে HT Bangla-র কাছে মুখ খুললেন সুজাতা। বিষ্ণুপুরের তৃণমূল প্রার্থী।
সুজাতা মণ্ডল বলেন,আমাকে ঠকিয়েছে শুধু তাই নয়, দশটা বছর ধরে এই বিষ্ণুপুরের মানুষকে যে ঠকিয়েছে তার বিরুদ্ধে এবার জবাব দেবেন সাধারণ মানুষ। গোটা বিজেপি দলটাই বিক্ষুব্ধ। এতদিন সাধারণ মানুষকে ঠকিয়েছে। আর এবার অভিনয় করতে নেমেছেন তিনি। বিষ্ণুপুরের সঙ্গে বঞ্চনা করেছেন তিনি। আমি বার বার করে বলছি, এবার সরে দাঁড়ান। মানুষকে বাঁচতে দিন। এলাকায় কোনও উন্নয়ন হয়নি। সাধারণ মানুষ তাঁকে আপদে বিপদে পাশে পাননি। কী জবাব দেবেন তিনি? এমনকী তার নিজের দলের লোকজনই তাকে ফোনে পেতেন না। এর জবাব এবার মানুষ দেবেন। এতদিন পরে ফিরে তিনি এখন বাচ্চাদের লজেন্স বিলি করছেন। এসব মানুষ বুঝে গিয়েছেন।
তবে প্রচারে বেরিয়ে যদি বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় তখন কী করবেন? প্রশ্ন শুনে একটুও না ভেবে সুজাতার জবাব, অযাত্রা, কুযাত্রা! মুখ যেন দেখতে না হয়। জনতা জনার্দন ওনার অত্যাচারের জবাব দেবেন। কার্যত সৌমিত্র খাঁয়ের নাম শুনলেই ফুঁসে উঠছেন সুজাতা। মনে পড়ে যাচ্ছে অত্যাচারের দিনগুলো। তবে ভোটবাজারে তিনি প্রচারে মন দিতে চান। কত টার্গেট রাখছেন জেতার? সুজাতা বলেন, সেটা তো সময় বলবে।
তবে গত লোকসভা ভোটের সময়তেও এই ছবিটা এমন ছিল না। সেবার সৌমিত্র প্রচার করতে পারেননি সেভাবে। তৎকালীন স্বামী তথা বিষ্ণুপুরের বর্তমান বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁর সমর্থনে একাই প্রচার করেছিলেন সুজাতা। মানুষের দোরে দোরে ভোট ভিক্ষা করেছিলেন। কড়া রোদকে উপেক্ষা করে চলেছিল প্রচার। এরপর একসময় জিতেও যান সৌমিত্র।
কিন্তু সুজাতার সঙ্গে এক ছাদের তলায় থাকার বিষয়টা আর বেশি দিন হয়নি। বর্তমানে সুজাতা ওই আসনেই তৃণমূলের প্রার্থী। সৌমিত্রর সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ার পরে এখন কার্যত মুখ দেখাদেখি বন্ধ। যে মানুষটার জন্য় গতবার ভোট চেয়েছিলেন সুজাতা, আজ ভুল শুধরে তাঁকেই পরাজিত করতে ময়দানে নেমেছেন তিনি। পাঁচটা বছরে বদলে গিয়েছে অনেক কিছুই। প্রচারের গাড়ি এগোতে থাকে ইন্দাসের দিকে। সুজাতা বলেন, সময় জানেন অনেক কথা বলে। সময়ই অনেক কথা বলবে।
বাস্তবিকই সময়ই যেমন ভুলিয়ে দেয় অনেক কিছু, সময় আবার মনেও করায়। তবে বিষ্ণুপুর কার জন্য 'সুসময়' বরাদ্দ রেখেছে তার জন্য় সেই ভোটের ফলাফল বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।
আর সৌমিত্র একটা সময় বলেছিলেন, তৃণমূল এত বড় চোর। শেষে ঘরের লক্ষ্মীটাকে চুরি করে নিল। আর সেই একসময়ের ঘরের লক্ষ্মীই আজ প্রতিপক্ষ। সৌমিত্র এখন বলছেন, কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দাঁড়ালে হয়তো প্রতিযোগিতা হত। তবে এবার বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রে সবথেকে বেশি ভোটের ব্যবধানে জিতবে বিজেপি।