কানাঘুষো ছিল আগেই। এবার সামনে এল পুরোটা। গত সাধারণ নির্বাচনের আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে দুই থেকে তিন লক্ষ কোটি টাকা দিতে বলেছিল কেন্দ্র। এমনটাই দাবি করেছেন প্রাক্তন আরবিআই ডেপুটি গভর্নর ভিরাল আচার্য। তাঁর বই Quest for Restoring Financial Stability in India-তে এর ভুমিকায় এই কথা লিখেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। হিন্দুস্তান টাইমসের বাণিজ্যিক সংবাদপত্র মিন্টকে তিনি বিশেষ ভাবে এই তথ্যটি প্রদান করেছেন।
প্রসঙ্গত নিজের মেয়াদ শেষের আগেই পদ ছেড়েছিলেন আচার্য। তাঁর এই দাবির পরেই সরকারকে বিঁধেছে কংগ্রেস। জয়রাম রমেশ আচার্যকে এই তথ্য জানানোর জন্য বাহবা জানান ও আরবিআই যে সরকারের কথায় রাজি হয়নি, তার জন্যেও কুর্নিশ করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। প্রসঙ্গত, চলতি বছরেও সেভাবে কর সংগ্রহ না বাড়লেও সরকারের বিভিন্ন খাতে খরচ বেড়েছে বহুগুণ।
২০২০-তে প্রকাশিত হওয়া বইয়ের ভূমিকাটি নতুন করে লিখেছেন আচার্য। সেখানেই তিনি জানিয়েছেন যে পূর্বতন সরকারের সময় যে টাকা জমা পড়েছিল কোষাগারে সেটা বর্তমান সরকারের খাজানায় জমা দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করেছিল সরকার ও আমলারা। প্রতি বছরই কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক তাদের লাভের একাংশ রেখে দেয় আলাদা করে। ডিমনিটাইজেশনের আগে মোদী সরকারের প্রথম তিন বছরে রেকর্ড লাভ্যাংশ সরকারকে দিয়েছিল আরবিআই।
এরপর নোটবন্দির সময় নয়া নোট ছাপানোর বিপুল খরচ হয়। তার জন্য টাকা দেওয়ার পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়। এতেই নাকি সরকারের দাবি আরও বেড়ে গিয়েছিল। সরকারের যে আর্থিক ঘাটতি ছিল, সেটা কার্যত আরবিআইয়ের মাধ্যমে মেটানোর প্রচেষ্টা ছিল বলেই মনে করেন ভিরাল আচার্য। তিনি প্রশ্ন করেছেন বইয়ের ভূমিকায় যে সরকারের মাথায় এটা ছিল যে জনমোহিনী নীতিতে কাটছাঁট করার কি প্রয়োজন আছে, যখন টাকা জোগানোর জন্য আছে আরবিআই। বেসরকারিকরণের যে টার্গেট সরকার রেখেছিল, সেটাও পূর্ণ হয়নি। সেই জন্যেও আরবিআইয়ের ওপর বিশেষ দৃষ্টি পড়েছিল বলে তিনি জানান।
তবে আরবিআই যখন সরকারের কথায় বিশেষ পাত্তা দেয়নি, তখন আইনের গুঁতোয় শীর্ষ ব্যাঙ্ককে টাকা দিতে বাধ্য করতে চেয়েছিল সরকার। সেখানে জনস্বার্থে আরবিআইকে নির্দেশ দেওয়ার বিধি ব্যবহার করার প্রস্তাব উঠেছিল। আচার্যের মতে, কোনটা জনস্বার্থ সেটা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা হওয়া উচিত বন্ধ ঘরের মধ্যে নয়। তবে তিনি একটি লেকচারে এই নিয়ে মতভেদের কথা ইঙ্গিত দেওয়ার পর সরকার আর সেই বিষয়ে এগোয়নি বলে জানিয়েছেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ। এরপর প্রাক্তন আরবিআই গভর্নর বিমল জালানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয় যারা কাঠামো তৈরি করে দেয় ভবিষ্যতে ব্যাঙ্কের ব্যালেন্স শিট থেকে সরকারকে টাকা হস্তান্তর করা নিয়ে। সেটার ওপর ভিত্তি করেই কোভিডের সময় আরবিআই সরকারকে টাকা দিয়েছিল। গত আর্থিক বছরে আরবিআই ডিভিডেন্ড বাবদ ৮৭ হাজার কোটি দিয়েছে। তার আগে বছর ৩০ হাজার কোটি দিয়েছে তারা। চলতি আর্থিক বছরের শেষে আবার ভোট। তাই আরবিআই এবার কত টাকা সরকারকে পাঠায় সেই দিকে নজর রাখবেন অনেকেই।