কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা নন তিনি। নন সাংসদ বা বিধায়কও। তবু লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে তাঁকে নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে চর্চা সর্বত্র। তাঁর পরিকল্পনাতেই নতুন ধারার প্রচারে ঝাঁপিয়েছে তৃণমূল। দলের সংগঠনেও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার হয়েছে। উলটো দিকে তাঁর নির্দেশে কাজ করতে অস্বীকার করে দল ছেড়েছেন শুভেন্দু অধিকারী-সহ একের পর এক নেতা। কিন্তু তাতেও তৃণমূলে তাঁর কর্তৃত্ব কমেনি এক বিন্দু। বরং প্রার্থী নির্বাচনেও তাঁর ও তাঁর সংস্থার মতকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এহেন প্রশান্ত কিশোর না কি যোগ দিতে চেয়েছিলেন বিজেপিতে। বৃহস্পতিবার একটি বাংলা সংবাদমাধ্যমে সম্প্রচারিত সাক্ষাৎকারে এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
সাক্ষাৎকারে অমিত শাহকে প্রশ্ন করা হয়, ‘সম্প্রতি এক আলোচনাসভায় নীতিশ কুমার বলেছেন, আপনার অনুরোধেই না কি প্রশান্ত কিশোরকে দলে নিয়েছিলেন তিনি। কী বলবেন?’ অমিত শাহ সপাটে জবাব দেন, ‘হ্যাঁ বলেছিলাম।’ এর পর বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন দুজনেই। তার পর সাংবাদিক শাহকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি তো তাহলে প্রশান্ত কিশোরকে সার্টিফিকেট দিয়ে দিলেন?’ জবাবে শাহ বলেন, ‘প্রশান্ত কিশোর আমার কাছে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদানের ইচ্ছা জানিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের দলে স্ট্রাটিজিস্ট বলে কিছু হয় না, এখানে সবাই রাজনৈতিক কর্মী। এখানে রাজনৈতিক কর্মীরাই স্ট্র্যাটিজি তৈরি করেন। তাই আমি তাঁকে বলি, আপনি নীতিশবাবুর সঙ্গে কথা বলুন। তখন উনি আমাকে বলেন, আপনি একটু নীতিশবাবুর সঙ্গে কথা বলে দিন। এর পর আমি নীতিশ কুমারকে প্রশান্ত কিশোরের ব্যাপারে বলি। নীতিশবাবুর মনে হয়েছিল প্রশান্ত কিশোর এলে লাভ হবে। তাই উনি নিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে প্রশান্ত কিশোর টিকতে পারেননি। তো আমি কী করবো?’
বলে রাখি, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের ভোট কৌশলীর দায়িত্ব নেওয়ার আগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিহারে জনতা দল (ইউনাইটেড)-এ যোগদান করেন প্রশান্ত কিশোর। কিন্তু একাধিক বিষয়ে নীতিশ কুমারের সঙ্গে মতবিরোধ হয় তাঁর। তার মধ্যে অন্যতম CAA। বিজেপির পাশে দাঁড়িয়ে জেডিইউ CAA-কে সমর্থন করলেও প্রশান্ত কিশোর প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করছিলেন। সঙ্গে তাঁর অভিযোগ ছিল, ধর্মের ভিত্তিতে একটি সম্প্রদায়কে বঞ্চনা করেন নীতিশ কুমার। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রশান্ত কিশোরকে বহিষ্কার করে JDU. ততদিনে তিনি তৃণমূলের দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রশান্ত কিশোরকে বহিষ্কার করে জেডিইউর তরফে জানানো হয়, ‘তাঁকে ন্যাশনাল প্রেসিডেন্টের মতো মর্যাদাপূর্ণ পদ দিয়েছিল দল। কিন্তু সেই ক্ষমতা তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করছিলেন।’
আড়ালে আবডালে বহু তৃণমূল নেতা বলে থাকেন, দলকে শেষ করতে তাঁকে না কি পাঠিয়েছে বিজেপিই। দল যারা ছেড়েছেন তারা তো বটেই। যারা দলে রয়েছেন, তাদের অনেকেই প্রশান্ত কিশোর দলের ক্ষতি করছেন বলেই মনে করেন। এমনকী প্রশ্ন তোলেন জনতার প্রতি তাঁর জবাবদিহি নিয়েও। কিন্তু তাতে এখনো পর্যন্ত ভ্রুক্ষেপ করেননি মমতা।