এই সেই শীতলকুচির আমতলি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র। সিমেন্টের তোরনের নীচে দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই বড় মাঠ। তারপর কিছুটা গেলেই নির্বাচনী বুথ। গত ১০ এপ্রিল ভোটের দিন এই মাটিই ভিজে গিয়েছিল রক্তে। বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হয়, কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতেই সেদিন চিরদিনের জন্য হারিয়ে গিয়েছিল চার চারটি তরতাজা প্রাণ। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, শীতলকুচির জোড়পাটকির ১২৬ নম্বর বুথে বাহিনীর গুলিতে সেই মারা গিয়েছিলেন সমিউল মিঁয়া, মণিরুল মিঁয়া, হামিদুল মিঁয়া, এবং নুর ইসলাম মিঁয়া। এরপর স্থগিত হয়ে যায় ভোটগ্রহণ পর্ব। বৃহস্পতিবার ফের ওই কেন্দ্রে ভোট হয়। বুকফাটা কান্না, চোখের জল, ক্ষোভ আর একরাশ শূণ্যতাকে সঙ্গী করে সেই ভোটগ্রহণকেন্দ্রেই বৃহস্পতিবার ভোট দিলেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। আর ভোট দিতে ঢুকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা।
নিহত মণিরুলের স্ত্রী রাহিনা বলেন,' কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছি। আমার স্বামী ভোট দিতে এসে প্রাণ হারিয়েছে। সেই ঘটনার বিচারের আশায় ভোট দিয়েছি। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।' কান্নায় গলা ধরে আসে রাহিনার। নিহত হামিদুলের বাবা দিল মহম্মদ মিঁয়া বলেন,' আমার ছেলে ভোট দিতে এসে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মারা গিয়েছে। আমি তার বিচার চাই।'
আসলে 'ইনসাফ' মিলবে কিনা কিছুই জানেন না নিহতদের পরিবারগুলি। জানেন শুধু একটা কথাই, চিরদিনের জন্য হারিয়ে গিয়েছেন বাড়ির মানুষটা। আর কোনও দিন ফিরবে না। মানসাই নদী বইবে আগের মতোই। ভোট আসবে, রাজনৈতিক দলের প্রচারও হবে পুরোদমে। সরকারও গঠন হবে। কিন্তু জীর্ণ বাড়ির চৌকাঠে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে বসে থাকবেন রাহিনা কিংবা দিল মহম্মদ। আর তো ফিরবে না বাড়ির মানুষটা।
বৃহস্পতিবারও ভোট হয়েছে শীতলকুচির জোড়পাটকির ওই বুথে। আপাতভাবে নির্বিঘ্নেই হয়েছে ভোট। তবে বাসিন্দাদের চোখে মুখে ছিল চাপা আতঙ্ক। কমিশন সূত্রে খবর, দিনের শেষে ভোট পড়েছে ৮৪.২৬ শতাংশ।