এই শীতেই বড়পর্দায় আসছে 'টনিক'। দেব এর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সেই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যাবে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আশি পেরিয়েও ভিন্ন স্বাদের সব চরিত্রে বড়পর্দায় হাজির হচ্ছেন তিনি। এবার মাতৃত্ব থেকে শুরু করে শিশুর অধিকার ও আইন আদালতের নানান বিষয়ে নিজের মতামত জানালেন তিনি। সেই মাতৃত্বের অধিকারের প্রসঙ্গেই তুলে ধরলেন নিজের ছোটবেলার অজানা গল্প। বললেন, 'এই ব্যাপারগুলোর সঙ্গে অদ্ভুতভাবে আমার নিজের জীবনের মিল রয়েছে'।
'মা হওয়া কঠিন কোনও কাজ নয়। বরং মাতৃত্ব অর্জন করাটা অনেক অনেক বেশি কঠিন!' বক্তব্যের শুরুতেই জোর গলায় বলে উঠলেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্ষীয়ান অভিনেতার কথাতেই জানা গেল তাঁর জন্মানোর মাস পাঁচেকের মধ্যেই মারা গেছিলেন তাঁর মা। পিসিমা কমলাদেবীর স্তনপান করেই আমি বড় হয়েছি। তাঁকেই মা বলে ডাকতাম। তাঁকেই মা বলে জেনেছি। আমার আমৃত্যু তিনিই আমার মা থাকবেন। বছর সাত বয়স হতেই যশোর থেকে নিজের বাড়ির পাট চুকিয়ে পিসির কাছে চলে এসেছিলেন তিনি। পিসতুতো বড় দাদা জয়দেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেই একইসঙ্গে পেয়েছিলেন পিতৃস্নেহ, শাসন, ভালবাসা। তাঁকেই বাবার মতো শ্রদ্ধা করতেন। যেভাবে বড় হয়েছি ছোট থেকে বাবা-মায়ের অভাব আমি কোনওদিনও বুঝিনি। আমাকে বুঝতে দেওয়া হয়নি।জন্মদাতা পিতা কালেভাদ্রে গ্রাম থেকে তাঁর কাছে আসতেন এবং সময় কাটাতেন। কখনও নিয়ে যেতেন মেলায়, কখনও বা পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে উদাত্ত কণ্ঠে শুরু করতেন গান। তবে কখনওই বাবার সঙ্গে সেভাবে আত্মিক যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি 'সিনেমাওয়ালা'-র। তাই তো জন্মদাতা বাবাকে তিনি কাকা বলে ডাকতেন।
সামান্য থেমে ফোনের ওপার থেকে পরাণবাবু বলে উঠলেন, 'আমার জন্মদাত্রীকে কোনওদিন দেখিইনি। আমার পিসিই আমার মা। তিনি যদি আমার ওপর কোনও অধিকারের দাবি নাও রাখতেন তাহলেও কি কোথাও তাঁর দাবি অস্বীকার করতে পারতাম? আমার ভাগ্য ভালো যে কোনওদিনই এই পরিস্থিতির মুখোমুখি আমাকে হতে হয়নি। কোনও আইনি লড়াই হয়নি। আমার বাবা একদিনের জন্যও এই নিয়ে কোনওরকম অসন্তোষ প্রকাশ করেননি। কোনও দাবি জানাননি'। আরও জানা গেল, পরাণবাবুর বাবা মারা যাওয়ার পর যখন গ্রাম থেকে খবর এল আলাদা করে বিরাট কোনও হেলদোল দেখা যায়নি তাঁর মধ্যে। কারণ ওই যে বাবার সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তা সেভাবে কোনওদিনও অনুভব করেননি তিনি।কলকাতাতেই বাবার পরলৌকিক কাজকর্ম সেরে ফেলেছিলেন তিনি।
বক্তব্যের শেষে 'পোস্ত' ছবির প্রসঙ্গ তুলে বর্ষীয়ান অভিনেতার সংযোজন, ' আইন, আদালত তাঁদের নিয়মেই চলুক। কিন্তু একজন শিশু কার কাছে থাকতে চায় সেটিও সমান গুরুত্ব পাওয়া উচিত। যাঁর অধিকার নিয়ে লড়াই হয় তাঁর মতামতও এক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে দেখা উচিত। আইন, নিয়মের সঙ্গে আবেগ সবসময়ে একই পথের পথিক নাও হতে পারে। ভালোবাসা, স্নেহ কবেই বা নিয়ম মেনেছে! তবে ওই যে বলেছিলাম শারীরিক সক্ষমতার জেরে যে কোনও পুরুষ বা নারী হয়তো মা কিংবা বাবা হতে পারেন কিন্তু মাতৃত্ব, পিতৃত্ব? সেগুলি অর্জন করতে হয়। তার জন্য প্রয়োজন ভালোবাসা স্নেহ ও ত্যাগের। বিরাট মাপের হৃদয় থাকার প্রয়োজন। সন্তানের সুখের জন্য নানান কিছু ত্যাগ করা প্রয়োজন'।