শুক্রবার মুক্তি পেতে চলেছে আবির চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ছবি 'আবার বছর কুড়ি পরে'। এই ছবিতেই প্রথমবার জুটি বাঁধতে চলেছেন অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় এবং আবির। থাকছেন তনুশ্রী চক্রবর্তী, রুদ্রনীল ঘোষ। এ ছবি বন্ধুত্বের গল্প, স্কুলের বন্ধুদের গল্প, এক টুকরো শৈশবের গল্প। নিজের স্কুল জীবনের অনাবিল হাসি ঠাট্টার দিনগুলো থেকে শুরু করে এই ছবিতে কাজের অভিজ্ঞতার বাইরেও নানান অজানা কথা হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা-র সঙ্গে শেয়ার করলেন আবির চট্টোপাধ্যায়। শুনলেন রাহুল মজুমদার।
পর্দায় এই প্রথমবার অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ?
হ্যাঁ। এই প্রথম অর্পিতার সঙ্গে কাজ করছি।
ছবিতে তোমাদের দু'জনের চরিত্রের ব্যাপারে একটু জানা যাক...
ছবিতে আমার এবং ওঁর চরিত্রের নাম যথাক্রমে অরুণ এবং বনি। তাঁরা স্কুলজীবনের বন্ধু। এই দু'জনের মধ্যে বন্ধুত্বের বাইরেও অনেক কিছু ছিল। প্রেম ছিল, ভুল বোঝাবুঝি ছিল। এরপর বহু বছর পর তাঁদের ফের দেখা হয় এবং তারপর কী হয়,সেটি জানার জন্য দর্শকদের সিনেমা হলে যেতে হবে। (হাসি)
অনেকদিন পর মাল্টিস্টারার ছবি।
দ্যাখো সত্যি কথা বলতে কী, বাংলা ইন্ডাস্ট্রি মানেই যে সাংঘাতিক রকমের তারকা সর্বস্ব ছবি এমন তো নয়। আর এখন প্রায় প্রত্যেকেই একসঙ্গে এসে কাজ করছেন কারণ সকলেই বুঝেছেন ছবির গল্প, কনটেন্টটাই আসল তারকা। এবং তা আমরা সব জায়গাতেই দেখতে পাচ্ছি। উদাহরণস্বরূপ, আমার অভিনীত 'অসুর' ছবির কথাই বলি। ২০১৯ সালে 'অসুর' ছবিতে জিৎ আর আমি একসঙ্গে কাজ করেছিলাম। নুসরৎ-ও ছিল। আর তাছাড়া যদি ভালো গল্পের সঙ্গে যদি দর্শকদের প্রিয় তারকাদের জুড়ে দেওয়া যায়, তাহলে সিনেমা হলে অনেক বেশি মানুষকে ফের টেনে আনা যাবে। আর এই মুহূর্তে বাংলা ছবির কাছে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ বেশি সংখ্যক দর্শককে হলে ফিরিয়ে আনতে হবে।
ছবির গল্পের অন্যতম মুখ্যবিষয়ই ছোটবেলা, স্কুল, রিইউনিয়ন। শ্যুটিং চলাকালীন কখনও নস্ট্যালজিয়াতে ভুগেছ?
প্রতি মুহূর্তে ভুগেছি। এই ছবি একেবারেই আমাদের গল্প। নব্বইয়ের দশকে যাঁদের বেড়ে ওঠা তাঁরা তো আরও ভীষণভাবে কানেক্ট করতে পারবে নিজেদের এই ছবির সঙ্গে। এবং 'আবার বছর কুড়ি পরে' বন্ধুত্ব ও প্রেমের বাইরে গিয়ে ওই সময়টারও গল্প। যেমন তখন ল্যান্ডলাইন ফোনের রমরমা ছিল, চিঠি লেখা ও দেওয়ার চল ছিল। আবার বর্তমানে সেসব এসে দাঁড়িয়েছে মোবাইলের ভিডিয়ো কল, হোয়াটস অ্যাপ চ্যাটে। আমাদের প্রজন্ম কিন্তু এই গোটা পরিবর্তিত সময়টার সাক্ষী। এইসব কিছুই রয়েছে 'আবার বছর কুড়ি পরে'। কাজেই পুরো ছবিটার শ্যুটিং করাকালীন আরও একবার ভীষণভাবে টের পেয়েছি এই ব্যাপারগুলো। সেইসব পুরনো অনুভূতির দলও মন হুড়োহুড়ি করে এসে ভিড় জমিয়েছিল।
যদি জিজ্ঞেস করা হয় আবির চট্টোপাধ্যায়ের বাস্তবে স্কুল জীবনের বন্ধুর সঙ্গে কি বছর কুড়ি পরেও যোগাযোগ রয়েছে?
উঁহু, কুড়ি নয় আগামী এপ্রিলে আমার স্কুল জীবন শেষ হওয়ার পঁচিশতম বছরের চৌকাঠ পেরোবে (হাসি)। সল্টলেকের লবণহ্রদ বিদ্যাপীঠে পড়েছি। মজার কথা, আমাদের কথা শুরু হওয়ার আগের মুহূর্তেই আমার স্কুল জীবনের এক প্রিয় বন্ধুর মেসেজ ঢুকল। হোয়াটস অ্যাপেই গল্প করছিলাম। এমনিতেও যোগাযোগ রয়েছে ওঁর সঙ্গে। ও আমার ক্লাস ইলেভেনের বন্ধু। পরবর্তী সময়ে একসঙ্গে একই কলেজেও পড়েছি। বলতে চাইছি, আমি খুব সৌভাগ্যবান যাঁদের সঙ্গে এখনও তাঁর স্কুল-কলেজের বন্ধুদের যোগাযোগ রয়েছে। পরবর্তী সময় যখন এমবিএ পড়েছি, সেই সময়ের কয়েকজন বন্ধুদের সঙ্গেও সম্পর্ক একেবারে বহাল তবিয়তে রয়েছে। জোর গলায় বলতে পারি, এই বন্ধুগুলো, এই বন্ধুত্বগুলো আছে বলেই আমার জীবনের চলার পথটা কোথাও সহজ হয়েছে। আর একটি মজার কথা বলি?
হ্যাঁ, বলো না।
ঠিক এই ছবির মতো আমাদের চার জন বন্ধুদের একটি হোয়াটস অ্যাপ গ্রূপ রয়েছে। সেখানে চুটিয়ে গল্প-আড্ডা করি, রি-ইউনিয়নের পরিকল্পনা করি। যদিও আমার পেশার সুবাদেই তা অনেকসময় সফল হয়ে ওঠে না। তবে এই পেশার সৌজন্যেই ছোট্টখাট্টো রি-ইউনিয়ন কিন্তু হয়ে যায়। যেমন, শ্যুটিংয়ের দৌলতে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। এবার সেই জায়গার কাছাকাছি চাকরির সুবাদে হয়ত আমার কোনও বন্ধু থাকে। তাঁর সঙ্গে কথা হয়ে যায়। ব্যাস, চলে আসে। একসঙ্গে গল্প-আড্ডা ভাগ হয়ে যায়।
স্কুলে বেস্ট ফ্রেন্ডের সঙ্গে ঝগড়া?
সিরিয়াস ঝগড়া সে অর্থে হয়নি। খুচরো মান অভিমান হতো। আবার ভাব হতেও খুব বেশি সময় লাগত না।
বুক চিন চিন হওয়ার অভিজ্ঞতাও নিশ্চয়ই হয়েছে স্কুলে?
প্রচুর ইচ্ছে থাকলেও সামর্থ্য ছিল না। সম্ভাবনাও প্রায় ছিল না বললেই চলে।
সে কি! পলিটিক্যালি কারেক্ট গোছের জবাব হয়ে গেল না?
(হাসি) আরে না,না। বুঝিয়ে বলি। বয়েজ স্কুল ছিল তো তাই প্রেমটা ঠিক .... তবে স্কুলে প্রচুর মজা করেছি। নির্ভেজাল বন্ধুত্ব ছিল। সহজ একটি জীবন ছিল।
বন্ধুত্ব নিয়ে তো আগেও ছবি হয়েছে, নব্বইয়ের দশকের আখ্যানও এক আধবার ফিরে এসেছে বাংলা ছবিতে। 'আবার বছর কুড়ি পরে'-তে দর্শক নতুন কী পাবেন?
ছবিতে যে সময়ের কথা বলা হয়েছে, যে প্রজন্মের কথা বলা হয়েছে এটা কিন্তু খুব বেশি বাংলা ছবিতে দেখা যায়নি। তারপর রিলেশশিপ-ড্রামা ইত্যাদি হয়ত আমরা দেখেছি কিন্তু এই যে আশির, নব্বই দশক থেকে যে একটি পরিবর্তন শুরু হয় আমাদের সমাজে যে পড়াশোনার পাট চুকলে চাকরির জন্য বাইরে চলে যাওয়া তাও কিন্তু ধরা হয়েছে এই ছবিতে। প্রতি মুহূর্তে তাঁরা বাড়ির কথা ভাবে, দুর্গাপুজোয় পাড়ায় ফেরার কথা ভাবে কিন্তু হাজার হিসেবে কষেও পেরে ওঠে না বিভিন্ন কারণে। এই ছবি সেই সব কথা তুলে ধরবে। এটা কিন্তু একভাবে দেখতে গেলে সেই প্রজন্মের, সেই সময়ের অনুভূতিরও গল্প।
একবার বলেছিলে স্কুলে তোমার ধরাবাঁধা টিফিন ছিল জেলি আর পাউরুটি। এই ছবিতেও কি তাই দেখানো হয়েছে?
(হাসি) না। তবে টিফিন ভাগ করা নিয়ে একটি মজার সিকোয়েন্স রয়েছে এই ছবিতে। টিফিন শুনে পড়ল, আমাদের লক্ষ্য ছিল টিফিন পিরিয়ডের আগেই টিফিনটা শেষ করে ফেলতে হবে। কারণ ওই পিরিয়ডে শুধু খেলব। তাই আগেই ক্লাসের মধ্যেই লুকিয়ে চুরিয়ে বন্ধুরা মিলে টিফিন বক্স থেকে চেটেপুটে সব খাবার সবার করে ফেলতাম। অনেক সময় ধরা পড়ে গিয়েছি স্যার-ম্যাডামদের কাছে। কখনও বোকা-শাস্তি জুটেছে আবার কখনও স্নেহ। আর আমাদের মোটামুটি পরিষ্কার ধারণা ছিল কোন বন্ধু ভালো টিফিন আনে। পুরো হিসেবে ছিল। তো সেই টিফিনের উপর আমরা নির্দয়ভাবে হামলা চালাতাম। আর সে যদি আমাদের সেই কাজে বাধা দিত, তাঁকে নিকৃষ্টভাবে যতটা অপমান করা যায়, তাইই করতাম।
'আবার বছর কুড়ি পর' থেকে কী আশা করছ?
যদি এই ছবি দেখে দর্শকরা তাঁদের নিজেদের ফেলা আসা দিনগুলো খুঁজে পায়, যদি সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে কেউ তাঁর ছোটবেলার বন্ধুকে ফোন করে বলে,' জানিস, তোকে বড্ড মিস করছি' তবেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক।
এইমুহূর্তে কোন কোন প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত আছো?
কিছু প্রজেক্টের ব্যাপারে একেবারেই মুখ খুলতে বারণ করা রয়েছে (হাসি)। তবে এইমুহূর্তে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস 'পুতুল নাচের ইতিকথা' অবলম্বনে সুমন মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ছবিতে কাজ করছি।
ব্যোমকেশ হিসেবে তোমাকে ফের কবে দেখা যাবে?
কথা তো চলছে। আমি আশাবাদী, দেখা যাক। তবে পরিচালকের নাম জিজ্ঞেস করো না, বলা বারণ (হাসি)