এই মুহূর্তে হিন্দি ওয়েব সিরিজের অন্যতম জনপ্রিয় নাম দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য। বড়পর্দার পাশাপাশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও চুটিয়ে কাজ করছেন মুম্বইয়ের এই বাঙালি অভিনেতা। আমির খানের 'মঙ্গল পাণ্ডে' হোক কিংবা জনআব্রাহামের 'ধন ধনা ধন গোল', পর্দায় স্বল্প দৈর্ঘ্যের চরিত্রতেই নজর কেড়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’, ‘দেব ডি’, ‘লুটেরা’, র মতো বহু ছবিতে কাজ করেছেন। এদিকে ওটিটি দুনিয়ায় ‘ক্রিমিনাল জাস্টিস’, ‘আনদেখি’, 'বদলাপুর' ইত্যাদিতে কাজ করার পর দক্ষ অভিনেতা হিসেবে নাম করেছেন মুম্বইয়ের বাঙালি অভিনেতা দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য। সদ্য মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত নেটফ্লিক্সের নয়া ছবি 'লুপ লপেটা'। সে ছবিতে তাঁর সঙ্গে রয়েছেন তাহির রাজ ভাসিন এবং তাপসী পান্নু। সেই ছবিতে তাঁর অভিনীত চরিত্র 'ভিক্টর' এর কথা থেকে শুরু করে তাপসী-তাহির, মুম্বই থেকে একান্ত সাক্ষাৎকারে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে সব কিছুই জানালেন এই মুহূর্তে বলিপাড়ায় হইচই ফেলে দেওয়া অভিনেতা দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য।
প্রশ্ন: হিন্দি ওটিটি সিরিজ খুললেই তো এখন ভেসে ওঠে আপনার মুখ?
( জোরে হাসি) না, না একদম এসব বলবেন না। নিজের মতো করে কাজ করে যাচ্ছি, দর্শকের পছন্দ হচ্ছে।আর এত দারুণ সব বিষয় নিয়ে ওটিটি-তে আজকাল কাজ হচ্ছে এবং সেখানে যে আমার নাম পরিচালকদের চিন্তায় উঠে আসছে, এতেই বেশ খুশি আমি।
প্রশ্ন : নেটফ্লিক্সে সদ্য মুক্তি পেয়েছে 'লুপ লপেটা'।এ ছবি তো বিখ্যাত জার্মান ছবি 'রান লোলা রান' এর রিমেক। দর্শক কী পাবেন এখান থেকে?
দেখুন, এটা ঠিকই 'রান লোলা রান' এর হিন্দি রিমেক এই ছবি। তবে পুরোপুরি টোকা নয় মোটেই। বলতে চাইছি, মূল গল্পের নির্যাসটুকু নিয়েছি। এরপর বাকিটা পুরোপুরি ভারতীয় ছাঁচে ঢেলে সাজানো হয়েছে। অর্থাৎ ফ্লেভারটা পুরো দেশি। আর একটা কথা বলব ?
প্রশ্ন: নিশ্চয়ই!
গোটা ছবিটাই না ভীষণ, ভীষণ রঙিন। মনে হবে পুরো ছবিটাই একটা কালার প্যালেট। এত হরেক কিসিমের রং আপনি দেখতে পাবেন, যা চোখকে আরাম দেবে সঙ্গে মনকেও। আর ছবির গল্প এতটাই বাস্তবসম্মত যে মাঝেমধ্যে হয়তো দর্শকদেরই তা দেখে ধন্দ লাগতে পারে! বিশ্বাস করুন এতটুকুও বাড়িয়ে বলছি না। ধরুন, বলতে চাইছি...উমম...অনেকটা কবিতার মতো। কবিতার মতো সত্যি। ওই যে একটা কথা আছে না ' রিয়েল লাইক আ পোয়েট্রি'। সেরকম অনেকটা।
প্রশ্ন: এই ছবিতে তো আপনার অভিনীত চরিত্র ভিক্টর ভয়ঙ্কর এক ডন। পুরোপুরি আউট অ্যান্ড আউট ভিলেন?
(মুচকি হাসি) সেটা এখনই বলা যাবে না। তার জন্য ছবিটা দেখতে হবে। তবে এই চরিত্রটিতে একটা দারুণ মজা লুকিয়ে রয়েছে। এরকম চরিত্র এর আগে আমার কেরিয়ারে সত্যিই পাইনি, এটুকু বলতে পারি।
প্রশ্ন : ছবিতে আপনার লুকটাও তো হটকে!
ওরে বাবা! সে আর বলতে। পরিচালক আকাশ ভাটিয়া চেয়েছিলেন এই চরিত্রের জন্য আমার লুকের একটা কমপ্লিট ট্রান্সফর্মেশন। ওঁর দরকার ছিল সিলভার ফক্স রংয়ের চুল। সাধারণত কালো চুলে সে রং আনা প্রায় অসম্ভব। বাধ্য হয়ে পুরো ব্লিচ করতে হয়েছিল চুলে। ব্লিচ করে পুরো সাদা করলাম। তার উপরে রং করা হল। তার ফলে যা হল আমার অনেক চুল উঠে গিয়েছিল! মাথার তালু পর্যন্ত জ্বলে গিয়েছিল। কিন্তু যখন পর্দায় ছবিটি দেখলাম, মনে হয়েছিল না ব্যাপারটা সার্থক। কষ্ট হয়েছিল বটে, তবে আর কোনও আক্ষেপ নেই আমার।
প্রশ্ন: এই প্রথম তো তাহির এবং তাপসীর সঙ্গে কাজ করলেন। কেমন সেই অভিজ্ঞতা?
তাহিরের সঙ্গে প্রচুর সিকোয়েন্স রয়েছে এই ছবিতে। খুব বুদ্ধিমান অভিনেতা, উঁচুদরের পারফর্মার। কাজ করে আনন্দ পেয়েছি। আর তাপসীর সঙ্গে খুব বেশি কাজ নেই আমার এই ছবিতে। একটি দৃশ্যে আমার একসঙ্গে পর্দায় আসব। খুব পরিশ্রমী অভিনেত্রী, মানুষ হিসেবেও খোলামেলা। মোট কথা, দু'জনের সঙ্গে এই ছবির জার্নিটা কিন্তু আমার জন্য বেশ ভালো ছিল। পার্টি করার মতো। আর বলতে চাই পরিচালক আকাশ ভাটিয়ার কথাও।যেমন ক্ষুরধার বুদ্ধি, তেমন সেন্সবল! ভীষণ পরিষ্কার চিন্তাভাবনা ।
প্রশ্ন: 'লুপ লপেটা'-র শ্যুটিং তো পুরো ভারতেই?
হ্যাঁ, হ্যাঁ। মুম্বই আর গোয়া মিলিয়ে হয়েছে।
প্রশ্ন: দর্শকদের কাছে 'লুপ লপেটা' যদি দারুণভাবে গৃহীত হয়, তাহলে কি সিক্যুয়েলের দেখা মিলতে পারে?
এই রে। কী বলি বলুন তো? আজকাল তো দারুণ সব গল্প এবং চিত্রনাট্য লেখা হচ্ছে। সেইসঙ্গে কোনও সুপারহিট ছবির সিক্যুয়েলও হচ্ছে। তাই এক্ষত্রে তা যে একেবারেই অসম্ভব তা কী করে বলি বলুন? আশা রাখতেই পারি।
প্রশ্ন: যাঁরা বিখ্যাত জার্মান ছবি 'রান লোলা রান' দেখেছেন, তাঁরা কেন দেখবেন 'লুপ লপেটা'?
প্রথমত ভালো কাজ, গল্প যে বেশ অন্যরকমের সে তো আগেই বলেছি। অন্য জঁরের ছবি। আর বড়পর্দায় তো নানান দিকের কথা ভেবে দারুণ এক্সপেরিমেন্টেশন তো করে উঠতে পারি না, যা ওটিটি-তে পারি। সেই জায়গা থেকে 'লুপ লপেটা' কিন্তু পুরো ছকের বাইরে ছবি। এই ছবি বুদ্ধিমান দর্শকদের জন্য। সামগ্রিকভাবে যে বেশ অন্যরকম লাগবে দর্শকের, সেকথা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি।