কাবেরীর খোঁজে শহর পোস্টারে পোস্টারে ছয়লাপ। হন্যে হয়ে কাবেরীকে খুঁজে চলেছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু তিনি যে উদ্দেশ্য নিয়ে শহরের প্রতি প্রান্তে পোস্টার লাগিয়েছেন সেটা কি সফল হল? হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ‘কাবেরী অন্তর্ধান’ নিয়ে কী জানালেন পরিচালক?
আমরা সবাই জানি কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় মানেই ছবির প্রচারে কিছু নতুনত্বের সাক্ষী থাকা। এবারেও তাই হল। কাবেরীর খোঁজে পোস্টারে ঢেকে গেল শহর। কিন্তু উদ্দেশ্য কি সফল হল? মানুষের চোখে কতটা পড়ল? এই প্রশ্নের উত্তরে পরিচালক জানান, 'রাস্তাঘাটে লোকজন দেখছে। একজন মহিলা যাঁর বয়স এখন ৭৮-৭৯ তাঁর খোঁজ চলছে অল্প বয়সের একটা আবছা ছবি দিয়ে। বিষয়টা অনেকেরই চোখে লেগেছে। আজও বাসস্ট্যান্ডে, রাস্তায় অনেকে দেওয়ালে সাঁটা পোস্টার পড়েন, সে কোচিং সেন্টার হোক বা ম্যাসাজ পার্লার। সেখানে এমন পোস্টার অনেকেরই চোখে লেগেছে। আর এই শতাংশটা যদি ০ থেকে ২ শতাংশ হয়, তাহলেও অনেক। মজার কথা হল অনেক সাংবাদিক আমায় এই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেছেন।'
কিন্তু হঠাৎ ছবিতে এমন উত্তাল সময়কে কেন তুলে ধরা হল? এটার নেপথ্যে কি বিশেষ কোনও কারণ আছে? 'অবশ্যই। ১৯৭৫ সাল যৌবনের জন্য উত্তাল। নকশালবাড়ি আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রাণ হাতে করে যুবকরা ঘুরছে। নকশাল সন্দেহে সরকার যাকে পারছে তাকে ধরে আনছে। ভয়াবহ অবস্থা চারদিকে। এই টালমাটাল অবস্থায় প্রেমটা কীভাবে বেঁচে ছিল, কতটা জোর ছিল তার, বা সেই প্রেমে ভবিষৎ কী সেটাই এই ছবিতে তুলে ধরতে চাওয়া হয়েছে। যৌবনের একটা অন্যতম অংশ হল প্রেম। কিন্তু সেই প্রেমের কী অবস্থা হয়েছিল উত্তাল সময়ে সেটাই দেখানো হয়েছে। মনে রাখবেন মাটিতে দাঁড়িয়ে ভালোবাসার আলিঙ্গন একরকম হয়। সেটাই যখন এভারেস্টের চূড়ায় হয় সেটার গভীরতা, বহিঃপ্রকাশ বদলে যায়। একই রকমভাবে উত্তাল সমুদ্রের টালমাটাল হতে থাকা নৌকোর মধ্যে আলিঙ্গন পাল্টে যায়', জানান কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়।
এই নিয়ে চতুর্থ ছবিতে তিনি এবং প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় একসঙ্গ কাজ করলেন। কেমন অভিজ্ঞতা? এই প্রশ্নের উত্তরে তাঁর মত হল, 'পঞ্চম ছবির অভিজ্ঞতা আরও ভালো হবে। যাঁরা একবার ওঁর সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁরা বারবার ওঁর সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছেন। এটার একটাই কারণ, ভীষণ ভালো অভিজ্ঞতা। অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। তাঁকে কখনও পরনিন্দা, পরচর্চা করতে দেখা যায়নি। একটা সুন্দর আবহাওয়া তৈরি করে রাখেন।'
এই ছবিতে পরিচালক নিজেও একটি চরিত্রে অভিনয় করবেন। নিজেকে পরিচালনা করা কতটা সহজ বা কঠিন? এই বিষয়ে তিনি জানান, 'নিজে অভিনয় করা অনেক সহজ। কারণ আমি জানি আমি কী বোঝাতে চাইছি। গল্পটা আমি লিখেছি, ফলে গোকুল দেবনাথ কে, কী সেটা আমায় কাউকে বোঝাতে হবে না। কিন্তু যেই আমি অন্য কাউকে পরিচালনা করি তাঁকে আমার ভাবনা বোঝাতে হয়। একটা অনুভূতির ট্রান্সফার হয়।'
তার মানে কি নিজের ছেলেকেও পরিচালনা করা ভীষণ কঠিন? 'একদমই। এই কারণেই তো ডাক্তাররা নিজের বাড়ির কারও অপারেশন করতে চান না। অন্যত্র রেফার করে দেন', জানান কৌশিক। তার মানে ‘লক্ষ্মী ছেলে’তে বেশ কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল? তিনি বলেন, 'হ্যাঁ, প্রথমদিকে অসুবিধা হচ্ছিল। পরে আমার টিম অনেক সাহায্য করেছিল। আর তাছাড়া এই দলে আরও দুটো বাচ্চা ছিল, রিতিকা আর পূরব। ফলে তিনটে বাচ্চা পেয়ে আর সামলাতে পারিনি। পরে উজান একজন অভিনেতা হয়ে উঠেছিল আমার কাছে।'
কোনও বিশেষ চরিত্রের জন্য অভিনেতা কৌশিক কি কোনও ওয়ার্কশপের সাহায্য নেন? 'গুগলে বোতাম টিপলেই রিসার্চ হয়ে যায়। আর বুদ্ধি দিয়ে ওয়ার্কশপ। তবে হ্যাঁ, যদি কোনও চরিত্রের জন্য শারীরিক গঠন পাল্টাতে হয়, সেটার জন্য কসরত করতে হয়। ফিট শরীর চাইলে জিম, ওজন বাড়াতে চাইলে খাবারের দিকে নজর দিতে হয়।'
শেষে একদম অন্যরকম একটা প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। যেটা বর্তমান সময়ের অন্যতম আলোচ্য বিষয়ও বটে। ওটিটির কারণে কি মানুষ হলে যাওয়া কমাচ্ছেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, 'এই তো তিনটি ছবি মুক্তি পেল তিনটি ছবিই হিট করল। হাউজফুল যাচ্ছে ছবিগুলো। এক একদিনে ১ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। পোস্ট প্যান্ডেমিক সময়ে এর থেকে ভালো কী হতে পারে? হ্যাঁ এখন ১০০টা খারাপ ছবি বানালে ১০০টাই ফ্লপ করবে। আর ৫টা ভালো ছবি বানালে ৫টা দেখতেই হলে লোক আসবে। আর তাছাড়া জোম্যাটো সুইগি আছে বলে কি রেস্তরাঁ ফাঁকা থাকে? দুটোই চলছে তো। মানুষ ওটিটিও দেখবেন, সিনেমা হলেও যাবেন। দুটোরই দর্শক আছে। যে ছবি বড়পর্দার সেটা বড়পর্দায় চলবে।'
তাহলে গত বছর এতগুলো হিন্দি ছবি কেন ফ্লপ করল? পরিচালকের সাফ উত্তর, 'বলিউড আমাদের নিয়ে ভাবে না, আমিও ওদের নিয়ে ভাবতে চাই না। আমরা আমাদের ছোট কুঁড়েঘরে সুখে শান্তিতে আছি। আসলে দুটোর তুলনা হয় না। একদিকে ১০০-২০০ দিনের শ্যুটিং, অত বাজেট। আরেকদিকে আমাদের ১৮-২০ দিনের শ্যুটিং। এখন যদি বলেন দেবজ্যোতি মিশ্র কেন গোল্ডেন গ্লোবস পাচ্ছেন না, সেটার উত্তর হবে না। কিছু জিনিসের তুলনা হয় না। ওদেরটা ওরা বুঝে নেবে।'
ঠিকই বলিউডেরটা বলিউড ভাববে। আপাতত বাংলার দর্শক তাকিয়ে ২০ তারিখের দিকে। এদিনই যে মুক্তি পেতে চলেছে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন ছবি কাবেরী অন্তর্ধান। মুখ্য ভূমিকায় থাকবেন শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, প্রমুখ।