‘মুক্তির পাওয়ার পর বাংলায় একপ্রকার বঞ্চনার শিকার কালকক্ষ’। তবে এবার সেটিই একমাত্র সেরা বাংলা ছবি হিসাবে জাতীয় পুরস্কার (69th National Film Awards 2023) জিতে নিয়েছে। তাই উচ্ছ্বসিত 'কালকক্ষ' ছবির অন্যতম মুখ্য চরিত্র 'মেজো মামণি' ওরফে অভিনেত্রী তন্নিষ্ঠা বিশ্বাস। 'কালকক্ষ'র জাতীয় পুরস্কার জয়ের পর তাই বঞ্চনার ক্ষোভ, আবার স্বীকৃতির আনন্দের কথা হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে ভাগ করে নিলেন তন্নিষ্ঠা।
মুক্তির পর 'কালকক্ষ' হল পায়নি, নন্দন ১-এ জায়গা পায়নি, আর এখন কী মনে হচ্ছে?
তন্নিষ্ঠা বিশ্বাস: কালকক্ষ যখন মুক্তি পেল তখন ছবিটি ইতিমধ্যেই বুসান, বস্টন, প্যানোরমা সহ নানান চলচ্চিত্র উৎসব ঘুরে ফেলেছে। উচ্চপ্রশংসিতও হয়েছে। তাই আশা ছিল অনেক। পরিচালক, প্রযোজক সহ এই ছবির সব শিল্পীরই আশা করেছিলেন বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছতে পারলে তাঁদের থেকেও প্রশংসা মিলবে। কিন্তু কালকক্ষ-কে ঠিকমত হলই দেওলা হল না। বাংলায় ছবিটি ঠিকভাবে চলতে দেওয়া হল না। নন্দন ১-এ জায়গা পেল না। তাই বাংলার বহু দর্শক ছবিটা দেখতে পারেননি। তাই সেসময় খুবই মন খারাপ হয়েছিল। বাংলাতে বসে মহামারীর সময় এক কষ্টে একটা ছবি তৈরি হল, যেটা বাইরের মানুষদের কাছে পৌঁছে গেল, অথচ বাংলার দর্শক ঠিকভাবে দেখতে পেলেন না। তবে এবার জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর সেই খারাপ লাগা কিছুটা তো মিটেছেন। জাতীয় স্তরে এত বড় সম্মান পেল, এটা দারুণ অনুভূতি। যদি প্রযোজক মনে করেন, তাহলে হয়ত ছবিটি পুনরায় মুক্তি পেলেও পেতে পারে।
একসময় হল পেল না, জাতীয় পুরস্কারের পর হল দেওয়া হবে বলে মনে হয়?
তন্নিষ্ঠা বিশ্বাস: আসলে হল না পাওয়ার সমস্যা মিটবে কিনা জানি না। আর তখন কেন হল দেওয়া হল না সেই কারণটাও স্পষ্ট নয়। তবে হ্যাঁ, যে ছবি এতবড় স্বীকৃতি পেল, সেটা নিশ্চয় বাংলার দর্শক দেখতে চাইবেন। আর দর্শকই তো বিচার করেন যে কোন ছবি চলবে আর কোনটা চলবে না। হিট-ফ্লপ সবই আসলে দর্শকদের হাতে। এর আগে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটা দেখানো হয়েছিল, তখনও লোকের মুখে শুনে অনেকেই ছবিটা দেখতে চেয়েছিলেন। তবে মুক্তির পর কালকক্ষ সেভাবে হলই তো পেল না। আর এটি পুনরায় মুক্তি পেলে দর্শকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই মুক্তি পাবে বলে আশাকরি। এই ছবির প্রযোজক যাঁরা, সেই অরোরা ফিল্মসও কিন্তু হেরিটেজ প্রোডাকশন হাউস। যাঁরা একসময়,' জলসাঘর'-এর মতো ছবি উপহার দিয়েছেন। তাই তাঁদেরকে হল না দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তো আছেই। আমার বিশ্বাস কালকক্ষ মুক্তি পেলে মানুষ নিশ্চয় দেখবেন।
'কালকক্ষ' আপনার ‘মোজো মামণি’ চরিত্রটি ঠিক কেমন?
তন্নিষ্ঠা বিশ্বাস: আমার ‘মোজো মামণি’ চরিত্রটি অন্যতম মুখ্য চরিত্র। ছবিতে তিনটি প্রজন্ম দেখানো হয়েছে। এক ‘বড় মামণি’, ‘মেজ মামণি’, ‘ছোট মামণি’, যেখানে মেজ মামণির চরিত্রে আমি অভিনয় করেছি। ‘বড় মামণি’ শ্রীলেখা মুখোপাধ্যায়। আর 'ছোট মামণি' অহনা কর্মকার। ছবিতে দেখানো হয়, একজন চিকিৎসক সাহায্য করতে না চাইলে তাঁকে আমি অপহরণ করি। সেই চিকিৎসক সময়ের ফাঁদ থেকে বের হতে পারেন কিনা সেটাই প্রশ্ন। ছবির গল্পের সঙ্গে ভারতীয় পৌরাণিক বেদ-পুরণের কিছু বিষয় মেশানো হয়েছে। একজন দেবীর যেমন তেজি, দয়ালু আবার শান্ত, বিভিন্ন রূপ থাকে, আমার চরিত্রটিও তাই। ভীষণই জটিল, ভীষণ আন-প্রেডিক্টটেবল চরিত্র। প্রথমে চরিত্রটির প্রতি রাগ হলেও, পরে দর্শক বুঝবেন, আসলে এই চরিত্রটি যা করেছে, সবই ভালোবাসার খাতিরে। আমার চরিত্রটি রিয়েল এবং আনরিয়েলের মাঝামাঝি একটা লেয়ারের। ছবিতে নারী শক্তির আধার এই তিন মামণী। এখানে তিনজন নারী আসলে এক নাকি আলাদা, সেটাও একটা প্রশ্ন রয়েছে।
'কালকক্ষ' জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর নিজের কেরিয়ার নিয়ে কতটা আশাবাদী?
তন্নিষ্ঠা বিশ্বাস: আমি আসলে কিছুই আশা করছি না। ভালো চরিত্র, ভালো ছবি করাটাই আমার ইচ্ছা। আমি জানিনা পরিচালক রাজদীপ পাল ও শর্মিষ্ঠা মাইতি আমার উপর যে ভরসা করেছেন, তার কতটা সম্মান রাখতে পেরেছি! মূলত আমি থিয়েটার করি, আর ‘হীরালাল’ করেছিলাম। আশাকরি, কালকক্ষ মুক্তি পেলে মানুষ আমাকে আবারও পর্দায় দেখে ভালোবাসা দেবেন। এই ছবিতে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পেয়েছি। সব ধরনের আবেগ দেখাতে পেরেছি, যেটা আসলে একজন অভিনেতা চান। আরও একটা ফিচার ফিল্ম করছি, কয়েকটা ওয়েব সিরিজও করছি।
প্রসঙ্গত, 'কালকক্ষ' জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর এটি OTT-তে মুক্তি দেওয়ার কথা প্রযোজক ভাববেন এর আগে এমনটা আশা প্রকাশ করেছেন পরিচালক রাজদীপ পাল ও শর্মিষ্ঠা মাইতি।