ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সার হিসেবে বলিউডে কেরিয়ার শুরু করেন হেলেন। তাঁর নৃত্য দক্ষতায় মুগ্ধ আট থেকে আশি। নাচের দক্ষতার জেরেই বলিউডে নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করেছেন। ‘হাওড়া ব্রিজ’ ছবিতে ‘মেরা নাম চিন চিন চু’ গানে তাঁর নাচের জন্য সর্বপ্রথম লাইমলাইটে আসেন তিনি। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
কিন্তু জানেন, উজ্জ্বল আলোর আগে এক অন্ধকার সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে হেলেন এবং তাঁর পরিবারকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময় দুধের শিশু ছিলেন হেলেন। জাপানিরা সেই সময় বর্মা যা অধুনা মায়ানমার হিসেবেই পরিচিত এলাকায় আক্রমণ চালায়। ওই পরিস্থিতিতে কার্যত জাপানি সৈনিকদের চোখে ধুলো দিয়ে মায়ের সঙ্গে এ দেশে পালিয়ে আসেন ছোট্ট হেলেন।
সম্প্রতি সৎ ছেলে আরবাজ খানের নতুন চ্যাট শো’য়ে এ বিষয় বলতে গিয়ে হেলেন জানিয়েছেন, সেই সময় তিন থেকে সাড়ে তিনশো পরিবার শরণার্থী ছিল। ওই দেশ ছেলে পালানোর চেষ্টায় ছিল তাঁরা। মা ও দাদার সঙ্গে বার্মা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছন ছোট্ট হেলেন। ওটিই ছিল ভারতে আসার শেষ বিমান। কিন্তু বিমানবন্দরে আচমকা হামলা চালায় জাপানিরা। বিমানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে বিমান ধরে উঠতে পারেননি তাঁরা। কিন্তু প্রাণে বেঁচে যান। আরও পড়ুন: সবুজ গাউনে লাস্যময়ী অবতারে জ্যাকলিন, দেখে কুপোকাত নেটিজেনরা
হেলেনের কথায়, ‘পুরোটা মনে নেই, শুধু মনে আছে বিমানবন্দরে মা আমাদের জড়িয়ে ছিল। মা বলেছিল আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে। আমার হাঁটতে শুরু করলাম। বর্মা সীমানা ছাড়িয়ে এলাম’। যদিও মায়ানমার থেকে ভারতে হেঁটে আসাটা মুখের কথা ছিল না তাঁদের কাছে। টানা ৯ মাসের হাঁটা পথ, এরপর অসম পেরিয়ে কলকাতায় আসেন তাঁরা। সেই সময় অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন হেলেনের মা। সন্তান গর্ভেই নষ্ট হয়ে যায়। পরিবারকে চরম আর্থিক অনটনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল।
ভারতে আসার একটা সময় পর কোরাস নৃত্যশিল্পীদের দলে যোগ দেন হেলেন। ছোট ছোট চরিত্রে কাজ পেতে শুরু করেন। বম্বে কাজ করার সুযোগ পান তিনি। কঠিন পরিস্থিতি দিয়ে যাচ্ছিল সেই সময় হেলেনের পরিবার। ‘মেরা নাম চিন চিন চু’ গান মুক্তি পাওয়ার পর তিনি বলিউডের প্রথম আইটেম ডান্সার হিসেবে নিজেকে তুলে ধরলেন। তবে কেরিয়ারের শুরুতে একাধিক সমস্যার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। রূপের জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়েছেন। স্বল্প পোশাকে আইটেম ডান্সের জন্য প্রচুর সমালোচনার মুখে পড়েছেন। এমনকি তাঁর চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
১৯৫৭ সালে তিনি বিয়ে করেন হেলেন পরিচালক পিএন আরোরাকে। তিনি হেলেনের থেকে ছিলেন ২৭ বছরের বড়। তবে ১৬ বছরের মাথায় সেই বৈবাহিক সম্পর্কে ইতি টানেন দুজনে। কারণ উপার্জনের সমস্ত টাকা স্বামী নিয়ে নেওয়ায় একটা সময় দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সময়ই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন হেলেন।
এরপর হেলেন প্রেমে পড়েন সেলিম খানের। কিন্তু সেলিম তখন বিবাহিত। সলমন, আরবাজ সহ চার সন্তানের বাবা। যদিও সামাজিক সমস্ত কিছু উপেক্ষা করে হেলেকে বিয়ে করেন সেলিম খান। সেই সময় নানা কঠিন পরিস্থিতির মধ্য়ে দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে এখন সবটাই অতীত। সলমন খান থেকে আরবাজ খানের পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছেন সৎ মা হেলেন।