‘১৯৭২-এর জুলাই মাসের অষ্টম দিনে। মা নিরূপা দেবীর কোল আলো করে জন্ম নেন প্রিন্স অফ কলকাতা। বাবা চণ্ডীদাস মহাশয়ের হাত ধরে হাঁটতে শিখে, দাদা স্নেহাশিসের সঙ্গে ক্রিকেটে আসা। ১৯৯৬-এ অভিষেক হয় টেস্ট ম্যাচে। ১২ বছর পর নেন অবসর, ২০০৮-এ। সবাই তাঁকে বলে ক্রিকেটের মহারাজা। তবে তিনি দাদা বলেই পরিচিত দেশে-বিদেশে। তবে তাঁকে সব্যসাচীও তো বলা যায়!….’
একটানা এই কথাগুলো যিনি বলে যাচ্ছিলেন তিনি 'দাদাগিরি-১০'-এর মঞ্চে এক প্রতিযোগী। সৌরভের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর কৃতিত্ব বর্ণনা করে চলেছিলেন ইন্দ্রাণী। আর তখনই পর্দায় ফুটে উঠছিল সেই মুহূর্তগুলির ছবি। আর ‘দাদা’ তখন মুগ্ধ হয়ে শুনছেন। প্রতিযোগী আরও বলে চললেন…।
তাঁর মুখে উঠে এল ২০০০ সালে সৌরভের অধিনায়ক হওয়ার কথা। উঠে আসে ২০০২ সালে লর্ডসের মাঠে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সৌরভের জার্সি ওড়ানোর সেই মুহূর্তের কথা। সব শেষে সব কৃতিত্ব মিলিয়ে দিলেন সৌরভের শো 'দাদাগিরি'র সঙ্গে। বললেন, 'এই না হলে আমাদের দাদার দাদাগিরি!'
কথাগুলি যিনি বলেছিলেন তিনি উত্তর ২৪ পরগনার প্রতিযোগী ইন্দ্রাণী সান্যাল। খুশি হয়ে এবং কিছু লজ্জা পেয়ে সৌরভ বললেন, ‘Thank you Madam’।
আরও পড়ুন-শাহরুখের মুখে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি! আম্বানিদের অনুষ্ঠানে নিলেন সরস্বতী-লক্ষ্মী-পার্বতীর নাম
আরও পড়ুন-এক প্লেটের দাম ৫০ হাজার! অরুণদার পাইস হোটেলের খিচুড়ির দাম শুনে সৌরভ বললেন 'জয় মা তারা'
‘দাদা’ সৌরভও অবশ্য কিছু কম যান না। পাল্টা ইন্দ্রাণীর প্রশংসা করে বললেন, ‘৫৮ বছর বয়স, তারপরেও এখনও যেন যুবতী, এবং সুন্দরীও বটে।’ আপ্লুত ইন্দ্রাণী তখন ঘাড় নিচু করে ‘Thank You, Thank You’ বলে উঠলেন। বললেন, ‘দাদা তুমিই তো অনুপ্রেরণা…।’
ইন্দ্রাণী জানালেন, তাঁর স্বামী বিমান বাহিনীতে ছিলেন। তবে তিনি স্বামীকে হারিয়েছেন। তিনিও বিমান বাহিনীর স্কুলে পড়াতেন। তাঁর একটা ছেলে, আরেকটা মেয়ে আছেন যাঁরা এখন বাইরে থাকেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর একা, নিজের মতো করেই বাঁচতে শিখেছেন। ‘কার্গিল যুদ্ধের সময় আমি হিলটনে ছিলাম, মৃতদেহগুলো সামনে থেকে আসতে দেখেছি দাদা। কেউ কেউ সেই মৃতদেহগুলো ছুঁয়ে বলে উঠেছেন, এটা আমার স্বামীর শরীর নয়। হয়ত সেখানে শুধু মাথাটুকু ছিল।’ শুনে চোখ ছলছল করে ওঠে সৌরভেরও। পুরো আবহটাই থমথমে হয়ে যায়। সৌরভ বললেন, সত্যিই সেনার আত্মত্যাগ কথায় বর্ণনা করা যায় না।
ইন্দ্রাণী বলেন, 'এতটাই অনিশ্চিত জীবন, যে সকালবেলা যে লোকটা যাচ্ছেন, জানি না তিনি মধ্যাহ্নভোজে আসবেন কিনা! আবার যিনি মধ্যাহ্নভোজ সেরে গিয়েছেন, জানিনা, তিনি বিকেলে চা খেতে ফিরবেন কিনা!' ইন্দ্রাণী যখন বলছিলেন, ব্যাকগ্রাউন্ডে তখন বাজছিল 'বন্দে মাতারম...'। দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠেন উপস্থিত সকলেই।
এদিন ইন্দ্রাণী জানিয়েছেন, তিনি ২০২০-তে স্বামীকে হারানোর পর কীভাবে একা বাঁচতে হয় শিখেছেন। স্বামীর স্বপ্নপূরণ করেছেন। তাঁর লেখা বই প্রকাশিত হয়েছে। এদিন নিজের লেখা একটা বইও দাদার হাতে তুলে দেন ইন্দ্রাণী। সব শেষে দাদার হাত ছোঁয়ার জন্য ইন্দ্রাণীর আবেদন ছিল, 'আমি একটু ধরে থাকিনা তোমার হাতটা, মনে হচ্ছে আমার স্বামী তোমার হাতটা ধরে রয়েছে।' সৌরভ ইন্দ্রাণীকে জড়িয়েও ধরেন।