সুশান্ত সিং রাজপুত নিয়েই নিজের স্বপ্নের প্রজেক্ট পানি তৈরি করার কথা ছিল পরিচালক শেখর কাপুর। অথচ মিস্টার ইন্ডিয়া পরিচালক ও সুশান্তের সেই একসঙ্গে দেখা স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল,বা বলা ভালো চুরমার করে দেওয়া হয়েছিল। সেই ব্যাথা,সেই যন্ত্রণা কি জাঁকিয়ে ধরেছিল সুশান্তকে? সুশান্তের মৃত্যুর পর শেখর কাপুরের টুইটে ফের প্রশ্নের মুখে বলিউডের একটা বিশেষ শ্রেণি। শেখর কাপুর লেখেন, আমি জানি তুই কোন যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলিস। আমি জানি সেই সব মানুষের কথা যারা তোকে খুব বাজেভাবে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।তুই আমার কাঁধে মাথা রেখে কেঁদেছিস।যদি শেষ ছ’টা মাসও আমি তোর পাশে থাকতাম..যদি তুই আমার কাছে অন্তত একবার ফিরে আসতিস। তোর সঙ্গে যা হয়েছে এর কর্মফল ওদের ভোগ করতে হবে। এটা তোর দোষ নয়’।
রবিবার দুপুরে সুশান্তের বান্দ্রার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে আত্মহত্যাই করেছেন সুশান্ত।
শেখর কাপুরের পানি ছবিটি ঘোষণার পরেও মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায় ২০১৫ সালে। এই ছবির জন্য অনেক পরিশ্রম,অনেক বলিদান দিয়েছিলেন সুশান্ত। ঘোষণার পরেও শেষ মুহূর্তে এই ছবি থেকে সরে দাঁড়ায় প্রযোজক সংস্থা যশরাজ ফিল্মস। জানা যায়, পানির জন্যই নাকি সুশান্ত ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সঞ্জয় লীলা বনশালির রাম লীলা ছবির অফার,কারণ সেই সময় যশরাজ ফিল্মসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন তারকা। একই কারণে সুশান্তকে ছাড়তে হয় ফিতুরে কাজ করার সুযোগও। অথচ সেই বিগ বাজেট ছবি পানি ফ্লোরেই গেল না কোনদিনও!
২০১৬ সালে এই নিয়ে একটি টুইট করেন শেখর কাপুর।'সুশান্ত তুমিও ততটা ধ্বংস হয়েছ যতটা আমি হয়েছি পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে।কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি আজ পর্যন্ত তোমার মতো এত অসাধারণ একজন অভিনেতাকে দেখেনি যে নিজের চরিত্রের জন্য এতটা পরিশ্রম করে'। এই টুইটের জবাবে সুশান্ত লিখেছিলেন, আমি আজীবন আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব যা আমি আপনার থেকে শিখেছি বা যেগুলো আপনার জন্য ভুলতে পেরেছি,অনেক শ্রদ্ধা'।
রবিবার সুশান্তের মৃত্যুর খবর সামনে আসবার পরই একটি টুইট করেন শেখর কাপুর, যেখানে তিনি লেখেন, প্রিয় সুশান্ত তোমার অনেক কিছু দেওয়ার ছিল..হয়ত এই দুনিয়াটা তোমার মতো মানুষের জন্য বিশ্বাসযোগ্য ছিল না..তোমার এভাবেই চলে যাওয়াটা ঠিক হল না..কিন্তু এটাও ঠিক তুমি তো একটা অফুরন্ত প্রাণশক্তিতে ভরপুর যুবক শরীরে আবদ্ধ জ্ঞানভাণ্ডারে সমৃদ্ধ একটা বৃদ্ধ পেঁচা ছিলে..তাই বোধহয় এত তাড়াতাড়ি উপর থেকে ডাক এসে গেল'।
সেই সময় শোনা গিয়েছিল, পানি মাঝপথে বন্ধ হযে যাওয়ার পর যশ রাজ ফিল্মসের বেফিকরে ছবিটি সুশান্তের করবার কথা ছিল,তেমনই কথা দিয়েছিলেন আদিত্য চোপড়া। কিন্তু তাও চলে যায় রণবীর সিংয়ের ঝুলিতে। এই সম্পর্কে কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি সুশান্তকে। এরপরেই শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স এবং ডিটেক্টিভ ব্যোমকেশ বক্সীর প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে সবরকম সম্পর্কের পাঠ চুকিয়ে দেন সুশান্ত। সুশান্তের কেরিয়ারের বড় ধাক্কা ছিল সেটি। এবিষয়ে যশ রাজ ফিল্মসকে প্রশ্ন করা হলে সেই সময় তাঁরা এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যকে জানান,'সুশান্ত এখন আর আমাদের ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট টিমের অংশ নয়, আমরা ওর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অন্য অনেক শুভকামনা জানাই'।
সুশান্তের আত্মহত্যার পর এই সব প্রশ্ন গুলোই ঘুরে ফিরে আসছে, সত্যি কি স্বজনপোষণই শেষকথা বলিউডে। সত্যি কি এখানে ‘আউটসাইডার’ হয়ে লড়াই করাটা খুব কঠিন! শেখরের সুরে সুর মিলিয়ে সুশান্তের মৃত্যুর জন্য বলিউড ও তাঁর নেপোটিজমকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন কঙ্গনা রানাওয়াত। প্রশ্ন তুলেছেন স্বপ্না ভাবানি,অনুভব সিনহারাও।