বাংলার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ওই লৌহ কপাট’-এ এআর রহমানের দেওয়া সুর নিয়ে ক্ষোভে সামিল হয়েছে গোটা বাংলা। রহমানের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন বাংলার শিল্পীরা। শুধু তাই নয় কাজী পরিবারের তরফেও করা হয়েছে সমালোচনা।
নজরুলের নাতি অনির্বাণ কাজী প্রতিবাদ করে জানালেন, ‘যে সৎ বিশ্বাসে গান ব্যবহার করার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল তাঁর মর্যাদা রাখা হয়নি।’ প্রতিবাদে অনির্বাণ এখন চাইছেন, গানের ক্রেডিট থেকে তাঁর পরিবারের নাম মুছে ফেলা হোক। আরও পড়ুন: ‘এখনও বাবার সামনে…!’, সেলিমকে পাশে নিয়ে সলমনের কোন দিক ফাঁস করলেন জাভেদ আখতার?
অনির্বাণ বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারিনি যে রহমানের মতো একজন শিল্পী এতটা অসংবেদনশীল হতে পারে এবং এভাবে গানটিকে হত্যা করতে পারে। প্রতিবাদ হিসাবে, আমি চলচ্চিত্রের ক্রেডিট লাইনে 'বিশেষ ধন্যবাদ'-এ আমাদের পরিবারের নাম চাই না।’
অন্য সময়ের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ‘মা গানটা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন সুর এবং কথা না বদলে রিক্রিয়েট করার জন্য। কিন্তু, সেই সময় ওদের তরফে বলা হয়েছিল, গানটা ওরা নিজেদের মতো করে ব্যবহার করতে চায়। মা ওদের বলেছিল, গানটা তৈরি হয়ে গেলে একবার শোনাতেও। ২০২১ সালে মা অনুমতি দেন। কিন্তু ওরা কিছুই শোনায়নি। এরপর মা-ও মারা যান।’
ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে এরপর অনির্বাণ বলেন, ‘রহমানকে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা জানিয়েই জানতে চাই, ওঁকে কে অধিকার দিল গানটি বিকৃত করার। স্বত্ব দেওয়ার সময় তো সুর বদলের কথা বলা হয়নি। কী রকম একটা করে দিয়েছে গানটাকে! একটা গ্রামীণ সংগীতের মতো, ভাটিয়ালির মতো করে দিয়েছে। অনেক সস্তা করে দিয়েছে।’ আরও পড়ুন: আমিরের ‘কুকুরের নাম শাহরুখ’ মন্তব্য আজও ভাইরাল! মন্নতে গিয়ে চা-কফি খাওয়া নিয়ে যে কাণ্ড হয়েছিল
নজরুল ১৯২২ সালের ২০ জুন ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটি লিখেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা চিত্তরঞ্জন দাস যখন কারারুদ্ধ হন, তখন তাঁর স্ত্রী বাসন্তী দেবী নজরুলকে বলেছিলেন, বাংলার মানুষকে নিয়ে কিছু লিখতে। সেই অনুরোধের সম্মান রেখেই নজরুল রচনা করেছিলেন ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানখানা। ১৯৪৯ সালের জুন মাসে যা রেকর্ড করা হয়েছিল। গেয়েছিলেন গিরিন চক্রবর্তী।
পরিচালক রাজাকৃষ্ণ মেননের ছবি ‘পিপ্পা’য় ব্যবহার করা হয়েছে নজরুলের লেখা ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটি। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি ছবিতে নজরুলের গান ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু সুর নিজের মতো করে বদলে নিয়েছেন অস্কার-জয়ী রহমান। যাতে দুই বাংলার বহু মানুষই বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন।