অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদারের মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে টলিউডে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। মারণ রোগ থাবা বসিয়েছিল শরীরে। বিগত তিন বছর ধরে ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি। অভিনেত্রীর মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছেন পরিবার এবং সতীর্থরা। এদিন অভিনেত্রীর প্রয়াণের খবর প্রকাশ্যে আসার পরই শোক প্রকাশ করেছেন মৃণাল সেন পুত্র কুণাল সেন।
মৃণাল সেনের পরিবারেরই যেন অঙ্গ ছিলেন শ্রীলা দেবী। বিনোদন জগতে পদার্পণের পর বরেণ্য পরিচালক মৃণাল সেনের হাত ধরেই শিখেছিলেন অভিনয়ের নানান দিক। স্কুল থেকে বেরিয়েই কিশোরী শ্রীলা চলে যেতেন মৃণালের বাড়িতে। ওয়ার্কশপ করতেন মৃণাল পত্নীর কাছে। পারিবারিক বন্ধুকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ মৃণাল সেন পুত্র। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করে শোকপ্রকাশ করেছেন কুণাল সেন। আরও পড়ুন: ‘স্যাম বাহাদুরে’র ঝুলিতে তিনটি, টেকনিক্য়াল ক্যাটাগরিতে আর কারা পেল ফিল্মফেয়ার
বরেণ্য পরিচালক মৃণাল সেনের সিনেমা থেকে শ্রীলা মজুমদারের একটি ছবি পোস্ট করে কুণাল লিখেছেন, ‘এই ছবিটা কয়েক দশক ধরে আমাদের বাড়ির দেওয়ালে রয়েছে। সবে শুনলাম শ্রীলা আর আমাদের মধ্যে আর নেই। এক অনবদ্য অভিনেত্রী ছিলেন তিনি এবং আমাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্য৷ এই সংবাদ মেনে নেওয়া খুব কঠিন’। আরও লিখেছেন, ‘অনেকের তুলনায় ভালো ছিলেন তিনি। কিন্তু কালো চামড়ার প্রতি আমাদের সম্মিলিত কুসংস্কার তাঁকে তাঁর যথাযোগ্য উচ্চতায় পৌঁছতে দেয়নি।’
১৯৮০ সালে মৃণাল সেনের ‘পরশুরাম’ ছবির মাধ্যমে অভিনয় জগতে হাতেখড়ি শ্রীলার। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। নাটকের মহড়ায় শ্রীলার অভিনয় দেখেই তাঁকে নিজের সিনেমার অভিনেত্রী হিসাবে বেছেছিলেন মৃণাল সেন। বরেণ্য পরিচালকের মোট ৬ ছবিতে অভিনয় করেছেন শ্রীলা। মৃণাল সেনের ‘একদিন প্রতিদিন’, ‘আকালের সন্ধানে’, ‘খারিজ’-এর মতো আইকনিক ছবিতে অভিনয় করেছেন শ্রীলা। বাংলা এবং হিন্দি দুই ভাষার সিনেমার জগতেই অভিনয় করেছেন।
শ্যাম বেনেগালের 'আরোহন', মান্ডির মতো ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। শাবানা আজমি, নাসিরুদ্দিন শাহ, স্মিতা পাতিলের মতো অভিনেতাদের সঙ্গেও কাজ করেছেন শ্রীলা। পর্দার পাশাপাশি মঞ্চাভিনয়েও সাড়া ফেলেছিলেন অভিনেত্রী। ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘চোখের বালি’ সিনেমায় ঐশ্বর্য রাই বচ্চনের হয়ে কণ্ঠ দিয়েছিলেন শ্রীলা। অভিনেত্রীর সহকর্মীদের অনেকেরই আক্ষেপ, দক্ষ এবং পেশাদার অভিনেত্রী হওয়া সত্ত্বেও পর্দায় তাঁকে ঠিকমতো ব্যবহার করা হয়নি। সেই আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন কুণাল সেনও।
শেষ বার কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত ‘পালান’ সিনেমায় শ্রীলাকে পর্দায় দেখা গিয়েছিল। গত ১৩ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত টাটা মেডিক্যাল ক্যানসার সেন্টারে ভর্তি ছিলেন শ্রীলা। তার পর অভিনেত্রীকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এ দিন কেওড়াতলা মহাশ্মশান শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় অভিনেত্রীর। তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, বাচিক শিল্পী সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় সহ আরও অনেকেই।