ইতি পড়ল মিতুল পালের সফরে। বুধবার হয়ে গেল জি বাংলা-র খেলনা বাড়ির শেষদিনের শ্যুটিং। একরাশ কান্না বুকে চেপেই ক্যামেরার সামনে শট দিলেন কলাকুশলীরা। দাসানি স্টুডিও-র মেকআপ রুমের প্রতিদিনের ব্যস্ততার মধ্যে কোথায় যেন একটা মন খারাপের মেঘ জমেছে। শেষবার মিতুল মা সাজতে সাজতেই হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা সঙ্গে আড্ডা দিলেন গল্পের নায়িকা আরাত্রিকা মাইতি।
মন ভারাক্রান্ত। শেষদিনের শ্যুটিংয়ে আরাত্রিকা বললেন,'অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এতদিনের একটা জার্নি। এই স্টুডিও-তে এর আগে অনেক সেট ভেঙেছে-গড়েছে, কিন্তু এই ইমোশনটা একদম অন্যরকম। ৫০০ এপিসোড, কম বড় মাইলস্টোন নয়। যেখানে আজকাল মাত্র কয়েকমাসেই সিরিয়াল শেষ হয়ে যাচ্ছে। এতগুলো বছরের বন্ডিংই সবচেয়ে বেশি ম্যাটার করে। টিভির পর্দায় যে সম্পর্কটা দেখা যায়, অফস্ক্রিনে সেটা ততটাই মজবুত। সকাল থেকে রাত অবধি এই ফ্লোরে কেটেছে, মনে হয়নি আমরা কাজ করছি। এটা পরিবার।'
খেলনা বাড়ি দিয়েই অভিনয় সফর শুরু আরাত্রিকার। সবার প্রিয় মিতুল মা হয়ে ওঠা সহজ ছিল না। কিন্তু মাত্র ২০ বছরের আরাত্রিকা সাফল্যের সঙ্গে সেই অগ্নিপরীক্ষায় পাশ করেছেন। মিতুল চরিত্র নিয়ে কথা বলতে গিয়ে গলা বুজে এল নায়িকার।
জানালেন, ‘মিতুল আমার কাছে কী! আমি নিশ্চিত সেটা দর্শক বুঝতে পারে। সবথেকে বড় কথা, এখন আরাত্রিকা মিতুল হয়ে গিয়েছে। যখন খবর পেলাম, খেলনা বাড়ি শেষ হচ্ছে, তখন প্রথম যে কথাটা মাথায় আসে, যে মিতুল চরিত্রটা আর আমার সঙ্গে থাকবে না। এই সত্যি বলে বোঝাতে পারব না। আমাকে আর ফ্লোরে কেউ ডাকবে না, মিতুল শটটা দিয়ে যা। আমি চরিত্রটার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছি। আগামিকাল থেকে আমি আর মিতুল সাজব না! এভাবে চুল বাঁধব না.. ভেবেই খুব ইমোশান্যাল হয়ে যাচ্ছি'।
মিতুলের চরিত্র কি শেখালো আরাত্রিকাকে? তাঁর কথায়,'এটা খুব ম্যাচিউর একটা চরিত্র। তবে একইরকমভাবে প্রাণোচ্ছ্বল একটা মেয়ে মিতুল। মিতুলের সবচেয়ে বড় ইউনিকনেস হল, ও আর পাঁচটা হিরোইনের মতো নয়। মিতুল সবার বাড়ির মেয়ে। এটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওনা। আর পাঁচটা বাড়ির মেয়ে যতটা সাধারণ হয়, মিতুল ততটাই সাধারণ। মিতুল তো এখন সবার মা। মায়ের চরিত্রটা এভাবে ফিল করব সেটা আগে বুঝতে পারিনি। মিতুল প্রমাণ করে দিয়েছে, নিজের সন্তান না থাকলেও কেউ এভাবেই কাউকে ভালোবাসতে পারে। আজ আমি গুগলির সঙ্গে কীভাবে সিন করব সত্যি বুঝে উঠতে পারছি না।'
বারবার স্লট বদলের পর, সফরে ইতি। তবুও টিআরপি তালিকায় ভালো ফল করে চলেছে খেলনা বাড়ি। মন খারাপের মাঝেও মিতুল মা জানালেন কী কারণে সফর শেষে খুশি তিনি। অভিনেত্রীর স্পষ্ট কথা,'খারাপ লাগা তো রয়েছে। বীভৎস খারাপ লাগছে। তবে অনেকদিন একটা সিরিয়াল চললে, অনেকে বলে- এবার সিরিয়ালটা বন্ধ হোক। সেই পর্যায়ে যাওয়ার আগে আমাদের খেলনা বাড়ি ব়্যাপ আপ হচ্ছে তাতে আমি ভীষণ খুশি। এই সিরিয়ালটা নিয়ে এখনও দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ রয়েছে। মেগা সিরিয়ালে প্রায়শই মনে হয় একঘেয়ে লাগছে। সেটা আমাদের ক্ষেত্রে হয়নি।'
সব শেষে ফ্যানেদের জন্য আরাত্রিকা বললেন,'আমি দর্শকদের ভালোবাসায় কৃতজ্ঞ। আমি ভীষণ খুশি, জানি না লেখকের মনের মতো মিতুল হতে পেরেছি কিনা। তবে নিজের সেরাটা দিয়েছি। এই ভালোবাসা যেন দর্শক আরাত্রিকাকে চিরকাল দেন। যাতে আমি আরও ভালো ভালো চরিত্র তাঁদের উপহার দিতে পারি।'
শ্যুটিং শেষ হলেও টিভির পর্দায় আরও কয়েকটা সপ্তাহ মিতুল ও তার পরিবারকে দেখার সুযোগ পাবে দর্শকরা। নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ শেষ হবে খেলনা বাড়ির সম্প্রচার পর্ব।