কলকাতা : করোনা আবহে প্রায় সাত মাস তালাবন্ধ থাকার পর গত ১৫ অক্টোবর থেকে গোটা দেশে নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ মেনে সিনেমা হল খোলার অনুমতি মিলেছে। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উত্সব দুর্গাপুজোর কথা মাথায় রেখে হল খুলতেই একসঙ্গে ৯টি বাংলা ছবি মুক্তি পায় সিনেমা হলে। পুজোয় প্রসেনজিত, দেবের মতো তারকার ছবি না থাকলেও নুসরত,মিমি, কোয়েল,যশ, অনির্বাণের মতো তারকাদের ছবি তো ছিল। কিন্তু তাতেও সিঙ্গল স্ক্রিনের লক্ষ্মীলাভ হল না! যার জেরে গতকাল (শুক্রবার) থেকে ফের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গেল প্রিয়া, মেনকার মতো নামী সিঙ্গল স্ক্রিন থিয়েটারের। দর্শক সংখ্যা ৫০% আগেই বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, তবে সেই সংখ্যারও অর্ধেক ভরছে না। মাছি তাড়ানো গোছের পরিস্থিতি সিনেমা হল গুলিতে। ফলে বন্ধ হয়েছে প্রাচী, ইন্দিরা, অশোকা, জয়া, বায়োস্কোপ (দুর্গাপুর), ডাকবাংলো (বারাসাত)-র মতো সিঙ্গল স্ক্রিনের দরজাও।
দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী সিনেমাহল প্রিয়া। এই হলের কর্ণধার অরিজিত্ দত্ত সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানান, ‘করোনায় হাতেগোনা মানুষ ছবি দেখছেন। পরিস্থিতি একেবারেই আশাব্যাঞ্জক নয়। ইলেকট্রিসিটির বিল এবং অন্য আনুসঙ্গিক খরচ রয়েছে, এত কম দর্শক নিয়ে শো চালানো সম্ভবপর নয়। আমাদের অপেক্ষা করতে হয়ে পরিস্থিতি ভালো হওয়ার জন্য, কোনও নির্দিষ্ট সময় বলতে পারব না যে কবে হল আবার খুলব’।
দর্শকদের হল বিমুখ হওয়ার আরও অন্যতম কারণ কোনও উল্লেখযোগ্য ছবি রিলিজ নেই। কলকাতার সিঙ্গল স্ক্রিন এখনও বলিউডের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে হল খুললেও বলিউডে কিন্তু কোনও উল্লেখযোগ্য ছবি এ বছর মুক্তি পাচ্ছে না। সূর্যবংশী, ৮৩-র মতো হলে মুক্তি পেতে চলা সব ছবি আগামী বছরের প্রথমার্ধ পর্যন্ত পিছিয়ে গিয়েছে।
অরিজিত দত্ত বলেন- ক্রিসমাসে একটা বড় ব্যানারের বাংলা ছবি এই পরিস্থিতি পালটাতে পারবে না। আমার আরও ভালো বিষয়ভিত্তিক ছবির প্রয়োজন, যা দর্শক টানতে পারবে'।
উল্লেখ্য ক্রিসমাসে হলে মুক্তি পাবে সৃজিত-প্রসেনজিত জুটির ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ এবং পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর ‘হাবজি-গাবজি’।
অজন্তা সিনেমার হলে মালিক সতাদীপ সাহা আক্ষেপের সুরে বলেন- 'কোনও কোনও শো-তে হলে মাত্র ৫ জন দর্শক থাকছেন, এইভাবে হল চালানো সম্ভব নয়'। তিনি যোগ করেন- প্রয়াত অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের ছবি থেকে শুরু করে পুজোয় রিলিজ বাংলা ছবি, পুরোনো হিট হিন্দি ছবি- সব কিছুই চালানোর চেষ্টা করা হয়েছে, তবে লাভ হল না। দর্শকের মোট সংখ্যা ২৫-৩০-এর বেশি এগোচ্ছে না'।
শুক্রবার থেকেই তালাবন্ধ হয়েছে শহরে অপর নামী সিঙ্গল স্ক্রিন মেনকাও। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কনটেন্টের রমরমা, হিন্দি ছবি নেই, বাংলাতেও তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য রিলিজ নেই- সব মিলিয়ে চালু হওয়ার একমাসের মধ্যেই ফের বন্ধ হয়ে গেল একাধিক সিঙ্গল স্ক্রিন থিয়েটার, যার প্রভাব নিঃসন্দেহে টলিউডের জন্য খুব একটা স্বস্তিকর হবে না।