বলিউড ইন্ডাস্ট্রির একজন হয়ে উঠতে পেরেছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। হাতেগোনা যে ক'জন বাঙালি এই মুহূর্তে জাতীয় স্তরে দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন তার অন্যতম পরমব্রত। তবে শিকরের টানে টলিউড ছাড়েননি তিনি। চলতি বছরেই পরিচালক পরমব্রতর ‘অভিযাত্রিক’ মুক্তি পেয়েছে। অভিনেতা হিসাবেও একের পর এক ছবির শ্যুটিং সারছেন।
মুম্বইয়ের সেরা কিছু প্রযোজনা সংস্থা ও ওটিটি জায়েন্টদের সঙ্গে কাজ করবার পর টলিউড নিয়ে একটু বেশিই চিন্তিত পরমব্রত। টলিউডের বিপন্ন অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়? জি ২৪ ঘন্টার এক সাক্ষাৎকারে আশঙ্কা আর ক্ষোভ দুটোই উগরে দিলেন। পরমব্রত জানান, ‘উদ্বিগ্ন তো লাগেই, তার সঙ্গে মন খারাপও লাগে। আমি চেষ্টা করি সেই মন খারাপটাকে একটা তাগিদে পরিণত করতে। …. আমার কিন্তু রিয়ালিটি থেকে পালানোর ভাবনার পরিপন্থী। এখান থেকে আমি শুরু করেছি। আমি এখন বম্বেতে কাজ করছি, তবে এতদিন আমাকে বাঙালি দর্শক চিনেছে। আমি এখনও বাংলাতেই ভাবি,আমার ছবি বানানোর ভাবনাটাও প্রথমে বাংলাতেই আসে। এখন খারাপ সময় বলে আমি বাংলা ছেড়ে পালাব এমনটা নয় কিন্তু।’
গত ছ-সাত বছরে বাংলা ছবির গ্রহণযোগ্যতা জাতীয় স্তরেও কমেছে। আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যাল তো দূরে থাক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আসরেও শিকে ছিঁড়ছে না বাংলার। কেন এই পরিস্থিতি? জবাবে ‘হেমলক সোসাইটি’র নায়ক বলেন-'এই পরিস্থিতিটা অনেকদিনের। হয়ত আমরা উপলব্ধিটা এখন করছি। আসলে অনান্য আঞ্চলিক ভাষার ছবি এতো রকেট গতিতে এগিয়ে গিয়েছে, সেখানে আমরা কোথাউ নেই। গুণগত মান এবং পয়সা রোজগার- দু-দিক থেকেই এগিয়ে বাকিরা এগিয়ে। তাই সেই বৈষম্যটা খুব বেশি চোখে পড়ছে। আমার মনে হয় এখানে কেন ছবির প্রিমিয়ার হয়? অর্থনীতির ভাষায় যাকে টিকিট সাইজ বলে, আমাদের বাংলার ছবির অবস্থা সেইরকম। তাহলে কীসের এই চাকচিক্য? সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে মুখ বুজে আমাদের কাজ করে যাওয়া উচিত, যতদিন না পর্যন্ত আমরা একটা কমপিট করবার জায়গায় যাচ্ছি। '
এদিন সতীর্থদের একহাত নিয়ে অভিনেতা তথা প্রযোজক পরম বলেন, 'আমার সহকর্মীরা যে বাস্তবটা জানেন না তা নয়, তবে তাঁদের দেখনদারি দেখলে মনে হবে তাঁরা বিশ্বাস করেন তাঁরা একজন সাউথ ইন্ডিয়ান স্টার বা বলিউড স্টার। একজন বাঙালি অভিনেতার এখন একজন মেকআপ আর্টিস্ট, একজন হেয়ার স্টাইলিস্ট, একজন ড্রেসার, তিনজন বাউন্সার.... শুনতে খুব লাগবে, হয়ত অনেকে আমাকে ট্রোল করবে, আমার বন্ধুরাও হয়ত মনে মনে আমাকে গালগাল দেখে... কিন্তু এগুলো না এক্সট্রা বোঝা হয়ে যাচ্ছে (প্রযোজকের উপর) এবং কিছুটা মূর্খের স্বর্গে বাস করা হয়ে যাচ্ছে'।
কিছুটা থেকে পরমব্রতর সংযোজন,'আমরা নিজেরা একটা বাবল (বুদবুদ) তৈরি করে তার মধ্যে বাস করছি। আর বলছি এই তো আমি স্টার। আসলে এখন আমাদের দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে যেতে হবে, যতটা সম্ভব কস্ট কম রেখে। অন্তত কমপিট করবার মতো একটা জায়গায় যেতে হবে। হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা তেগেলু ছবির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যাব না। তবে নিজেদের ছবির গুণতম মানটা উপরে নিয়ে যেতে হবে'।
অভিনেতা বলেন, শুধু গ্ল্যামারের বুদবুদই নয়, ক্রিয়েটিভির বুদবুদও তৈরি হয়েছে টলিউডে। ‘পরস্পরিক প্রশংসা’ আঁকড়েই সবাই এগিয়ে চলেছে, তাই কাজের মান দিন দিন নেমে যাচ্ছে।