দিন কয়েকে আগেই যাদবপুরের শ্রমজীবী ক্যান্টিনে দুই বিজেপি তারকার (এখন যদিও তাঁরা বিজেপি নন বলে দাবি করেছেন) উপস্থিতি ঘিরে বাংলার রাজনৈতিকমহলে জোর তরজা শুরু হয়েছিল। দিলীপ ঘোষের বেফাঁস মন্তব্য সেই তরজায় নতুন মাত্রা যোগ করে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি জানান, রূপা ভট্টাচার্য ও অনিন্দ্য পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি নাকি চেনেন না। তিনি আরও বলেন, 'আমার হাত দিয়ে তো যোগ দেয়নি কেউ। ভিড়ের মধ্যে অনেকে BJP-তে এসেছেন। মেলা লেগেছে। এখন মনে হচ্ছে, এখানে সুবিধা হচ্ছে না, তাই ওদিকে যাচ্ছে'।
দিলীপ ঘোষের এই কটাক্ষের কড়া জবাব দিতে, ফেসবুকে খোলা চিঠি লিখলেন রূপা ভট্টাচার্য। এবং দিলীপবাবুকে স্মরণ করিয়ে দিলেন দিল্লিতে দিলীপ ঘোষই তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে দলে স্বাগত জানিয়েছিলেন বছর তিনেক আগে। অভিনেত্রী স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘আমি এখন আর বিজেপিতে নেই। আমি দলের কোনও পদে নেই। যাঁরা আমায় চেনেনই না, তাঁদের আবার ইস্তফাপত্র দেব কেন?’
এদিন ফেসবুকের দেওয়ালে রূপা ভট্টাচার্য লেখেন, ‘আপনি দিল্লিতে যখন মঞ্চে আমার গলায় উত্তরীয় পরিয়ে বিজেপিতে বরণ করেছিলেন (যার ফুটেজ সব মিডিয়া হাউস বারবার দেখায় ) তখন আপনার সহজ সরল আপ্যায়নে মনে হয়েছিল আপনি আর যাই হন ভন্ড নন। …আমরাই প্রথম এক ঝাঁক শিল্পী যারা সাহস করেছিলাম শাসক দলের বিরুদ্ধে গিয়ে আপনাদের পাশে দাঁড়াতে। তার আগে হাতে গোনা কয়েকজন ছিলেন। আর প্রথম এই সাহস দেখিয়েছিলেন বলাই বাহুল্য আমাদের শিল্পীদের সাপোর্ট রূপা গাঙ্গুলিদি। আমরা এক দল বেঁধে জয়েন করার পরেই কিন্তু রাজ্যের শাসক দল এবং বুদ্ধিজীবী সমাজ বিষয়টায় গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে। সেই অর্থে বলতে গেলে এটাই ছিল রাজ্যে বিজেপির শিল্প সংস্কৃতি মহলে গৃহপ্রবেশ। মনে রাখবেন ২০১৯ এর ১৮ই জুলাই ওই সময় কিন্তু রাজ্যে বিজেপি হাওয়া ছিল না যে সবাই টিকেট বা ক্ষমতার এর লোভে গেছিলাম’।
ছোট থেকেই বামপন্থায় বিশ্বাসী রূপার বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ‘দুটো ধান্দা’ ছিল, সেকথা এদিন নিজেই জানিয়েছেন অভিনেত্রী। তিনি লেখেন, এক) এখানে নৈরাজ্যর থেকে মুক্তি। কেন্দ্র ও রাজ্যে যদি এক সরকার হয় তাহলে রাজ্যে কর্মসংস্থান বাড়বে। আমাদের রাজ্য থেকে দলে দলে পরিযায়ী শ্রমিক, পরিযায়ী ইঞ্জিনিয়ার, পরিযায়ী কর্পোরেট, পরিযায়ী শিক্ষক, এমনকি পরিযায়ী শিল্পীরা জীবিকার সন্ধানে ঘর ছাড়বে না। এটা একটা ধান্দা ছিল।
দুই) আর আসল ধান্দা ছিল নিজেদের ঘর বাঁচানো। আমাদের ফিল্ম এবং টেলিভিশনের জগৎ কতটা সাফার করছিল,কতটা দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছিল সেটা সবাই জানে। সেই অবস্থা থেকে উদ্ধার পেতে আমরা কেন্দ্র সরকারের সাহায্য চাইছিলাম। যাতে রাজনৈতিক রঙ না দেখে শুধু যোগ্যতার নিরিখে এখানে শিল্পী কলাকুশলী প্রোডিউসার সবাই শান্তিপূর্ণ ভাবে কাজ করতে পারে একসাথে। এটাই আসল ধান্দা ছিল আমাদের একযোগে জয়েন করবার।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া তারকা থেকে তৃণমূল ত্যাগীদের টিকিট পাওয়াও মন থেকে সমর্থন না করলেও দলের লড়াইয়ে পাশে ছিলেন রূপা। ‘খটকা লাগলো’ তবুও সঙ্গে ছিলেন, প্রচার থেকে ডিবেটে অংশ নেওয়া- দলের হয়ে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন সর্বত্র।
ভোটের ফল ঘোষণার পর করোনা পরিস্থিতির বাড়বাড়ন্তের মাঝে ববি হাকিম, মদন মিত্রদের সিবিআই হেফাজতে নেওয়ার বিপক্ষে মত পোষণ করেছিলেন রূপা। জানিয়েছিলেন, ‘মহামারী যখন তুঙ্গে তখন দুটো দিন অপেক্ষা করলে হতো না?’ এরপরই দলের সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে তাঁর। দিলীপ ঘোষের উদ্দেশে রূপা বলেন, ‘…অবশ্য আপনি শিল্পীদের রগড়ে দেন।তার প্রতিবাদ তখন করেছিলাম তাই এমনিও আপনার জন্য আমরা বিড়ম্বনা।একটা কথা ভুলবেন না আমায় শিল্পী আপনি বা বিজেপি বানায় নি।মানুষ বানিয়েছে।তাদের প্রতি সৎ এবং দায়বদ্ধ আমি থাকবোই। এই দলের আমি আজ আর কেউ নয়। আপনাদের কথায় কখনোই কেউ ছিলাম না। একটা কথা বলে যাই আপনার দলের সম্পদ আপনাদের সাধারণ কার্যকর্তারা। শিল্পীদের কদর করেননি তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না। কিন্তু দলের কর্মীদের কদর করুন। দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝুন। সুস্থ থাকুন। ভালো থাকুন’।