২১ জুলাই আকাদেমি যাওয়ার ডাক দিলেন সৌরভ পালোধী। না না, সেখানে কোনও মিটিং মিছিলের আসর বসবে না শহিদ দিবসের মতো। তবে? সেদিন মঞ্চে মার্ক্সবাদ পড়াবে মন্টু। থুড়ি ইচ্ছেমতো নাট্যদলের ‘মন্টু ও মার্ক্স’ নাটকটি মঞ্চস্থ হবে। তার আগেই HT বাংলার মুখোমুখি হলেন সৌরভ।
এই দিনটিই কেন বাছলেন মন্টু ও মার্ক্সের জন্য?
সৌরভ: আমরা সারা বছর ধরেই থিয়েটার করি। এই নাটকটির বহু শো ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। তবে আমরা আগেই ঠিক করেছিলাম যে প্রতি বছর ২১ জুলাই শো করব। গত বছর ‘ঘুম নেই’ করেছিলাম। এবছর ‘মন্টু ও মার্ক্স’। আসলে ২১ জুলাই ওই চত্বরে (রবীন্দ্র সদন, আকাদেমি, শিশির মঞ্চে) কেউ হল নেন না। সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার ভয় থাকে, ইকুইয়েশন পাল্টে পাওয়ার ভয় থাকে। তাছাড়া সুবিধা পেতেও অসুবিধা হয়। আমাদের তো এসব ভয় বা ইকুইয়েশন কোনওটাই নেই তাই ঠিক করেছি এই দিন আমরা শো করবই।
তাহলে এদিন কী দর্শকদের জন্য ডিম-ভাতের ব্যবস্থা থাকবে?
সৌরভ: একদমই না। ডিম ভাত বিষয়টাকে নিয়ে মজা করেও আমি কিছু বলব না। বামেদের ব্রিগেডে খিচুড়ি খাওয়ানো হতো, অত দূর দুর থেকে মানুষরা আসবেন, তাঁরা তো খাবেনই। যাঁরা এটার মজা করেন আমি তাঁদের বিপক্ষে। আমাদের শোতে যাঁরা এদিন আসবেন সবাই দাম দিয়ে টিকিট কেটেই আসবেন।
ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশেষ ছাড় ঘোষণা করেছেন, এটা কেন?
সৌরভ: প্রচুর জেলা থেকে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা আমাদের শো দেখতে আসতে চাইছেন। তাঁরা কলকাতায় নাটক দেখতে আসতে চান কিন্তু বছরে দু-একবারই পারেন। তবে ২১ জুলাই নিয়ে তাঁদের মনেও আলাদা উদ্দীপনা কাজ করছে। অনেকটা ওই সিনেমার ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শোয়ের মতো। দুদিন পর গেলে সিনেমার গল্প পাল্টে যায় না, তবুও প্রথম দিন নিয়ে আলাদা উদ্দীপনা তো থাকেই। এটা যদিও মন্টু ও মার্ক্সের প্রথম শো নয়, তবুও আমরা তাই তাঁদের কথা ভেবে টিকিটের দাম কমিয়ে মাত্র ২০০ টাকা রেখেছি, যেখানে অন্যান্যবার ৫০০ টাকার টিকিট থাকে। তবুও ওঁরা কেউ কেউ বলছেন দাদা ৮-৯ জন যাব একটু কমাও। এটা ওঁদের স্বাভাবিক দাবি। তাই ছাড় দিচ্ছি। আমরা এতদিনের নাট্যদল এটুকু তো ওঁদের জন্য করতেই পারি।
তৃণমূল লোক ভাড়া করে মাঠ ভরায় বলে অভিযোগ ওঠে, এক জিনিস কি বাম-বিজেপি করে না?
সৌরভ: বিজেপিরটা আমি জানি না। বলতে পারব না। কিন্তু বামেদের যেহেতু অনেক কাছ থেকে দেখেছি তাই বলছি এখন তো ক্ষমতাই নেই জোর করে লোক আনার মতো, আর পয়সা কোথায় যে খরচ করে লোক আনবে? ফলে যাঁরা আসেন তাঁরা স্বইচ্ছায় আসেন। আসা প্রয়োজন বলে মনে করেন তাই আসেন। তাছাড়া...

মন্টু ও মার্ক্স নাটকের দৃশ্য
কী?
সৌরভ: মিডিয়াতেই তো দেখায় যে ২১ জুলাই যাঁরা আসেন তাঁদের অধিকাংশই জানেন না সেখানে কী করতে, কেন এসেছেন। ধারণাই তো স্পষ্ট নয়। মণীশ গুপ্ত এখন মঞ্চে বসে থাকেন, তবে সেদিন যদি সত্যিই গুলি চালানো হয়ে থাকে তাহলে তিনিই কিন্তু সেই অর্ডার দিয়েছিলেন। তাছাড়া ক'বছর আগেও আমরা শহিদ দিবসের মঞ্চে পাগলু ড্যান্স দেখেছি। পাড়ায় পাড়ায় শহিদ দিবস উপলক্ষ্যে কী গান বাজে সকলেই সেটা জানেন। আসলে দিনটার মানেটাই কেউ বোঝেন না। ১০-১২ জনের নাম বলে প্রতিবছর, ব্যাস ওটুকুই। তারপরই অন্য ইস্যু নিয়ে কথা বলা হবে মঞ্চে, পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কথা বলা হবে। এটা সার্কাস ছাড়া কিছুই না।
পঞ্চায়েত ভোটে মৃত্যু মিছিল, এটা নিয়ে আপনার কী বক্তব্য?
সৌরভ: এবছর তো ভোট কাউন্টিংয়ের মতো কতজন প্রাণ হারিয়েছেন সেটা দেখানো হয়েছে। মৃত্যুর লিস্ট বেরিয়েছে। তবে খবরে যা দেখানো হয়েছে সেটা সামান্যই। এমন আরও অনেক ঘটনা ঘটেছে যা দেখানো হয়নি। আমাদের বর্ধমানে একটা শো ছিল, সেখানকার নাট্যদলের সদস্যরা আমাদের জানান যে এখন আসবেন না, আমরাই এখন বাড়িছাড়া। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক তারপর। আসলে কী বলুন তো, ছোটবেলায় পাড়ায় খেলতে বেরিয়ে যখন বুঝতাম যে ৩০০ রান চেজ করতে হবে যা অসম্ভব তখন স্বাভাবিকভাবেই আম্পায়ারকে হাতে নিতে হতো, ঝামেলা বাঁধিয়ে খেলাটা নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করা হতো। এক্ষেত্রেও তাই চেয়েছিল। তাছাড়া এটা লজ্জার হলেও, মানুষ মারা একটা নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন।
কিন্তু, আপনি তো নিজেও অন্যান্য অনেক তারকাদের মতো পুনর্নির্বাচনের ভুল তথ্য শেয়ার করেছিলেন।
সৌরভ: ওটা আমার ভুল। ভুল করেছি সেটা স্বীকার করেছি, করে নিচ্ছি। এতে আমার লজ্জা নেই। ভুল হয়েছে বলেই ডিলিট করে দিয়েছি। যদিও দেবাংশু (দেবাংশু ভট্টাচার্য) আমায় এবং অনীকদা (অনীক দত্ত) সহ আরও অনেককে ট্রোল করে একটি কবিতা লেখেন। ব্যক্তি আক্রমণ করতে গিয়ে যাত্রা-নাটকের গোটা ফ্র্যাটারনিটিকে আক্রমণ করে ফেলেন। সেটা ওঁর রুচি। কিন্তু আমি এখনও বিশ্বাস করি যদি সঠিক কাউন্টিং হতো তাহলে রেজাল্ট ওটাই হতো। কিন্তু খাতায় কলমে সেটা এখন নয় বলে আমার কথা উড়িয়ে দেওয়া যায়। তবে সুস্থ নির্বাচন হলে ফলাফল এমনটাই হতো বলে বিশ্বাস করি।

মন্টু ও মার্ক্স নাটকের দৃশ্য
তবে কি ধরে নেওয়া যায় আপনাদের নাটক মন্টু ও মার্ক্স বাংলার বর্তমান রাজনীতির অবস্থাকে বদলাতে পারে?
সৌরভ: না, কোনও কালচারাল কর্মই রাজনৈতিক বদল আনতে পারে বলে মনে করি না। সেটা নাচ, গান, কবিতা, সিনেমা, নাটক যাই হোক না কেন। কোনওটাই সব স্তরের মানুষকে ছুঁয়ে যায় না। লেজেন্ড অব ভগৎ সিং তো সবাই দেখেছেন, তাহলে তো সবাই ওঁর মতো নাস্তিক হয়ে যেতেন। হয়েছেন কি? সেটা হয় না, হবেও না। কিন্তু পরিবর্তনের যে প্রয়োজনীয়তা আছে সেই বোধটা চাগাড় দিতে পারে। বদল আনবে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাই বা যাঁরা ফুল টাইম রাজনীতি করেন তাঁরা। তাঁদের কাজটা সহজ করার জন্য আমরা তো সভা করতে পারি না, আমরা এটা করতে পারি। টিভি বা সিনেমায় একটা নিয়ম মেনে চলতে হয়, অনেক বাধা থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে সেসব থাকে না বলেই চেষ্টা করা।
প্রসঙ্গত আগামী ২১ জুলাই আকাদেমি অব ফাইন আর্টসে মঞ্চস্থ হবে ইচ্ছেমতোর ‘মন্টু ও মার্ক্স’।