২৩শে এপ্রিল অভিনেত্রী স্বস্তিকা দত্তর জন্মদিন। রাজ চক্রবর্তীর হাত ধরে অভিনয়ে হাতে খড়ি, এরপর ছোটপর্দায় দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন। সিরিয়ালের জনপ্রিয় নায়িকা এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও পরিচিত মুখ। স্বস্তিকার ব্যক্তিগত জীবনও হামেশাই থেকেছে সংবাদ শিরোনামে। জন্মদিনে কেরিয়ার থেকে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অকপট অভিনেত্রী। আরও পড়ুন-'দীপিকার চুলের মুঠি ধরে টানছি…', কল্কি ২৮৯৮ এডি-র মেইন ভিলেন, বলিউডই এখন শাশ্বতর ফোকাস?
প্রথমেই জন্মদিনের শুভেচ্ছা। দিনটা কীভাবে কাটছে, আজকের কী বিশেষ পরিকল্পনা?
স্বস্তিকা: গতকাল পর্যন্ত প্রচণ্ড চাপে ছিলাম। জন্মদিনে নিজেকে দু-দিন ছুটি উপহার দিয়েছি। সবাইকে বলে দিয়েছি প্রমোশনের জন্য ২৩ আর ২৪ এই দুটো তারিখ আমাকে কেউ পাবে না। আজ কোনও প্ল্যান নেই, আমি একেবারেই পার্টি পার্সন নয় (হাসি)। আমার কোনও ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবদের দল নেই যে আমার জন্য পার্টি আয়োজন করবে। আর আমি চাইও না কেউ করুক। কারণ আমি সেই পার্টি একেবারেই এনজয় করি না। গত বছর ‘খোলা হওয়া’ পরিবার আমার জন্য একটা পার্টি আয়োজন করেছিল, সেটা আমাকে উপভোগ করতে হয়েছে। আমি বলেইছিলাম আমি কাউকে পার্টি দেবও না, আর আমার জন্য পার্টি থ্রো করো না'।
এদিন বাড়িতে কোনও বিশেষ নিয়ম পালন করা হয়? মা পায়েস বানান নিশ্চয়?
স্বস্তিকা: সারা বছর তো পাত পেড়ে খাওয়া হয় না, আজ মা-কে বলেছি গরমের কথা মাথায় রেখে রান্নাবান্না করতে। গরমে রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে বেশি পদ যাতে রান্না না করে, সে কথা বলে দিয়েছি। দুপুরে এসি চালিয়ে ঘুমাবো। ফ্যানেরা যে সুন্দর সুন্দর মেসেজ পাঠাবে তার উত্তর দেব। ইচ্ছে হলে বিকালে কোথাউ খেতে যাব। বলতে পারেন, বাবা-মা'র সঙ্গে সময় কাটাব। আর অল্প করে পায়েস বানাতে বলেছি, কারণ আমার একটু ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সের সমস্যা। খুব বেশি পায়েস তাই আমি খেতে পারি না। ওদিকে বাবা-মা দুজনেই মিষ্টি (সুগার পেশেন্ট) রোগের শিকার। পায়েস বেশি বানানো হলেই সেটা ওঁনাদের পেটে যাবে, সেটা আমি একদম চাই না। মা অল্প করে পায়েস বানিয়েছে। আগে যখন আম্মা-দাদু ছিল, তখন পুরো ওই পায়েস, পাঁচ রকম ভাজা- যেমন হয় আর কী সবটা করা হত।
হাতে সময় থাকলে তিন-চারদিনের জন্য কোথাউ থেকে ঘুরে আসতাম। কিন্তু প্রমোশনের চাপ এত বেশি সেটা সম্ভব হল না।
জীবনে আরও একটা বসন্ত পার করলে। জীবন কী শেখালো?
স্বস্তিকা: আমি এখন এমন একটা বয়সে পা রাখব যে বয়সে সবাই স্টেটেলমেন্টের দিকে এগানোর কথা মধ্যবিত্ত বাড়ির বাবা-মা'রা বলে। জীবন শেখালো জগ থেকে জলটা আসতে আসতে ঢালতে হয়, একসঙ্গে পুরোটা ঢালতে নেই। ব্যক্তিগত জীবন হোক বা পেশাদার জীবন, নিজেকে পুরোটা ঢেলে নিতে নেই, সঠিক সময়ের অপেক্ষা হয়। এটা আমার উপলব্ধি।
ইন্ডাস্ট্রিতে ১০ বছর কাটিয়ে ফেললেন, ফিরে তাকালে কেরিয়ারে কোনও বদল চাইবেন?
স্বস্তিকা: যেটা ছিল সেটাই পারফেক্ট। স্লো অ্যান্ড স্টেডি… আমার রাজত্ব ছোট হতে পারে, তবে সেই রাজত্বের রাজা আমি।
'ভেঙে দেওয়াটা খুব সহজ, চিরকাল ধরে থাকাটা শক্ত', আপনার আসন্ন ছবি আলাপের এই সংলাপটায় নিজে বিশ্বাস করেন?
স্বস্তিকা: হ্যাঁ, একদম বিশ্বাস করি। ভেঙে দিতে দু-সেকেন্ডে তুমি পারবে। কিন্তু জীবনের উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পথে ধরে রাখার এই যে ব্যাপারটা সেটা হাতে গোনা মানুষ করতে পারে।
সম্পর্ক তো তার পরেও ভাঙে, ভাঙা সম্পর্কের যন্ত্রণা থেকে স্বস্তিকা কীভাবে বেরিয়ে আসে?
স্বস্তিকা: সম্পর্ক ভাঙা, সম্পর্ক গড়া এটা পার্সন টু পার্সন ভ্যারি করে। আমি যেভাবে সম্পর্ককে দেখি, সামনের মানুষটা সেভাবে আমাদের সম্পর্কটাকে নাও দেখতে পারে। সম্পর্ক ভাঙায় কষ্ট হয় না, কিন্তু তারপরের সময়টা যখন নিজেকে স্টেবল করতে হয়, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি বেশকিছু দিন আগে কোথাউ পড়েছিলাম, আমার সাথে কী হয়েছে সেটা জরুরি নয়, আমি সেটাকে কীভাবে হ্যান্ডেল করলাম সেটা বেশি জরুরি।
স্বস্তিকাকে বলতে শুনেছিলাম ‘আমি ছাপোষা প্রেমিক’, এখনও সেটাই বলবেন?
স্বস্তিকা: একদম আমি দক্ষিণ কলকাতার মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ে, পুরোদস্তুর ছাপোষা প্রেমিক।
এই মুহূর্তে স্বস্তিকার রিলেশনশিপ স্টেটাস কী?
স্বস্তিকা: পুরোপুরি সিঙ্গল। (হাসি)
জীবনে এরপর সেটেল হওয়ার কী পরিকল্পনা? মানে বিয়ে নিয়ে কী ভাবছেন?
স্বস্তিকা: আমি এমন একজন অভিনেত্রী যে সবসময় বলে যখন যেটা তখন সেটা করাটা উচিত। আমি কখনই চাইব না ৪০ বছরে গিয়ে বিয়ে করব আর ৪৫ বছরে গিয়ে মা হব। বাবা-মা রয়েছেন, কিছু দায়িত্ব তাঁদেরও নেওয়া উচিত। যখন সময় আসবে তখন ঠিক ঠিক ভালো একজন মানুষকে আমি বিয়ে করতে চাই, আর একটা হেলথি বাচ্চার জন্ম দিতে চাই।
এর মাঝে যদি কোনও মানুষের সঙ্গে প্রেম হয়…. আমি এমন একটা ম্যাচুয়ারেটির জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি যে কাউকে খুঁজে পেলে বলব, ছোটবেলায় ভালো লাগত রাত জেগে ভোর পাঁচটা অবধি ফোনে মেসেজ চালাচালি করা কিংবা ফোনে কথা বলার। এখন সেই ইচ্ছেটা নেই। যা প্রেম করার সেটা বিয়ের পরে, যদি তোমার আমার সঙ্গে থাকতে হয় তো। তবে পুরোটাই হচ্ছে যদি আমি কাউকে খুঁজে পাই তো! এখন আর সেই বয়সে নেই যে ঢাকুরিয়া লেকে বসে হাত ধরে প্রেম করব।
রিয়েলে না হলেও রিলে তো স্বস্তিকার জীবনে ‘বসন্ত এসেছে গেছে’ সঙ্গে নতুন করে আলাপও সারছেন?
স্বস্তিকা: আমি নিজে খুব আশাবাদী ‘বসন্ত এসে গেছে’ নিয়ে। আড্ডাটাইমসে এই সিরিজটা সবাইকে দেখার অনুরোধ করব। হয়ত ট্রেলার দেখে মনে হতে পারে একজন টিচার স্টুডেন্টের প্রেমে পড়ছে, বউ জেনে গেছে- এটা খুব বেসিক গল্প। কিন্তু বাস্তবে সেটা নয়। এখানে আমার চরিত্রটার ব্যাকগ্রাউন্ডটা খুব স্ট্রং। অন্যদিকে ‘আলাপ’ নিয়ে বলব, আমরা যখন একঘেঁয়ে খাবার খাই আমাদের একটু আচারের দরকার পরে মুখের স্বাদ বদলের জন্য। স্বাতীলেখা সেন (স্বস্তিকা অভিনীত চরিত্র) পাবলো আর অদিতির জীবনে ওই চেঞ্জ অফ টেস্টের মতো। খুব বেশি বলতে পারবো না চরিত্রটা নিয়ে। স্বাতীলেখা দেখছে সব, বুঝছে সব তবে হজম করতে একটু সমস্যা হচ্ছে।
এছাড়াও 'গভীর জলের মাছ ২’ আসছে। আরেকটা চমক আছে, তবে সেটা নিয়ে এখনই কিছু বলতে পারব না। সব মিলিয়ে আমার চারটে প্রোজেক্ট আসছে, প্রত্যেকটাই খুব ইন্টারেস্টিং।
স্বস্তিকা কি ছোটপর্দায় ফিরবে?
স্বস্তিকা: গত বছর ২৫শে জুলাই ‘তোমার খোলা হওয়া’ শেষ হল। আমি পরের দিন থেকেই ভাবছিলাম হয়ত একটা ভালো সিরিয়াল আসবে আর এলে আমি ঢুকে যাব। আমি দীর্ঘদিন ৬টা সিরিয়াল করেছি প্রাইম টাইমে, মুখ্য নায়িকা হিসাবে। আমার ছোট মাথার চিন্তাভাবনা এটা, এক বছরে আমি ১০০টা কাজ না করে, ১০০ বছরে ১০টা ১০টা কাজ যদি করি তাহলে আমার টাইম পিরিয়ডটা একটু ভালো হবে। এই মুহূর্তে আমার হাতে ছোটপর্দায় ভালো কোনও চরিত্রের অফার আসছে না। আমি তো এতদিনে অনেক চরিত্র করেছি, একজন ভেন্ট্রিলোকুইস্ট থেকে নৃত্যশিল্পী সবই করে ফেলেছি। এবার একটু ওটিটি বা সিনেমার পর্দায় নিজেকে প্রমাণ করতে চাই।
চারিদিকে শোভন-সোহিনীর বিয়ে নিয়ে এত চর্চা… (প্রশ্ন শেষের আগেই)
স্বস্তিকা: একজনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল, একজন আমার প্রাক্তন। অন্যজনকে আমি সিনিয়র অভিনেত্রী হিসাবে সম্মান করি। তাঁর কাজও দেখি। তাঁরা দুজনে যখন একে অপরের সঙ্গে থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, (কয়েক মুহূর্তের স্তব্ধতা) যদিও আমি জানি না প্রকাশ্যে এটা নিয়ে তাঁরা কোনও মন্তব্য করেছে কিনা। আমি একজন সাংবাদিকদের থেকে এই সুখবরটা শুনছি, তাঁরা যদি নিজেদের কমপ্যাটিবল ভেবে থাকেন এবং তাঁরা সাত পাকে বাঁধা পড়তে চান আমি দুজনেই শুভকামনা জানাব। এটা আমার শিক্ষা।